কী দেখার জন্য টিভি খুলে বসলাম, আর কী দেখলাম! দেড় ঘণ্টার ম্যাচে একবারও মনে হল না, আমাদের জাতীয় দল খেলছে! ব্যক্তিগত দক্ষতা, গতি আর বোঝাপড়া ফুটবলের তিনটে গুরুত্বপূর্ণ বিভাগে বাংলাদেশের বিরুদ্ধেও ফেল ভারত। কোভারম্যান্সের জায়গায় কাঠমান্ডুর মাঠে মঙ্গলবার অমল দত্ত, সুখবিন্দর সিংহ, নইমুদ্দিন কিংবা আর্মান্দো কোলাসো থাকলে এতক্ষণে নির্ঘাত ফেডারেশনের চিঠি চলে আসত তাঁদের কাছে ‘ইয়র সার্ভিস ইজ নো মোর নিডেড।’ হতভাগ্য আমাদের স্বদেশি ফুটবল কোচেরা!
ম্যাচটার থেকে দু’টো সম্ভাবনা ফুটে উঠছে।
এক) কোভারম্যান্সের উপর প্রভাব খাটিয়ে অন্য কোনও লোক দল নির্বাচন করেছে।
দুই) কোভারম্যান্স নিজেই যদি দল বেছে থাকেন, তা হলে ভারতীয় দলের কোচের পদ আঁকড়ে থাকা উচিত নয় ওঁর।
রহিম নবিকে কেন খেলানো হল না, ম্যাচ শেষ হওয়ার কয়েক ঘণ্টা পরেও কিছুতেই বুঝতে পারছি না! লেফট ব্যাকে মোহনরাজ কি নবির চেয়েও বড় ফুটবলার? ভারতীয় দলের ন্যূনতম সম্মান বাঁচাতে হলে অবিলম্বে নতুন দল নির্বাচন করতে হবে। সৌমিক দে, হরমনজিৎ সিংহ খাবড়া, লালকমল, ডেনসন, সঞ্জু প্রধানের মতো ফুটবলারদের দলে না রাখলে, আরও খারাপ পরিণতি অপেক্ষা করছে কোভারম্যান্সের জন্য।
বাংলাদেশের অবস্থা ভারতের চেয়েও খারাপ। পাঁচ জন ডিফেন্ডার মিলে একটা বল ধরতে গিয়ে ছ’বার আছাড় খাচ্ছে। এ রকম একটা দলের বিরুদ্ধে ভারতের ১-১ ড্র আদৌ সন্তোষজনক নয়। নব্বই মিনিটেও আমি ধরতে পারলাম না কোভারম্যান্স কী ফর্মেশনে খেলাচ্ছেন? সাম্প্রতিককালে ভারতে অন্তত পাঁচ-ছ’জন কোচ নেদারল্যান্ডস থেকে এসেছেন। কিন্তু নিজেদের দেশে ওঁরা যা শিখেছেন, সেটা অক্ষরে অক্ষরে এখানে ব্যবহার করতে গিয়ে ডুবেছে।
অনেকে মিলোভানের সঙ্গে কোভারম্যান্সের তুলনা করেটরে। কিন্তু বর্তমান ভারতীয় দলের ডাচ কোচের সঙ্গে মিলোভানের পার্থক্য একটাই। উনি আমাদের দেশের ফুটবলারদের বুঝতেন। বিশেষ করে আমাদের দেশের পরিস্থিতিকে। বিভিন্ন রাজ্যের বিভিন্ন ভাষা, সংস্কৃতি, খাওয়া-দাওয়ার অভ্যাসকে। মিলোভান সবাইকে একজোট করে খেলতে নামতেন। ওঁর আমলেই ভারতীয় ফুটবলারদের প্রথম পাঁচতারা হোটেলে থাকার সুযোগ হয়েছিল। তার আগে তো স্টেডিয়ামের নীচেই ডরমেটরিতে থাকতে হত। মিলোভানের কোচিংয়ে ৮৪ সালে দু’টো টুর্নামেন্ট খেলেছি। উনি ফুটবলারদের স্বাধীনতায় কখনও হস্তক্ষেপ করতেন না। সবচেয়ে বড় গুণ ছিল, যোগ্য ফুটবলারকে যোগ্য মর্যাদা দিতেন। সেখানে বাংলাদেশের বিরুদ্ধে নবির মতো ‘ইউটিলিটি’ ফুটবলারকে বাদ দিয়ে শুরুতেই তো বিরট ভুল করে বসেন কোভারম্যান্স! প্রায় অপরাধের পর্যায় পড়ে!
সাদামাঠা ম্যাচে প্রাপ্তি বলতে শুধু সুনীল ছেত্রীর গোলটা। অধিনায়ক সুনীলকে ইনজুরি টাইমের ওই তিন মিনিটই যা খুঁজে পাওয়া গেল। আর বাকিরা তো গোলের ধারে-কাছে পৌঁছতে পারছিল না। সেই গগনে-গগনে বল। আর হেডের ব্যর্থ প্রচেষ্টা। একটার বেশি গোল করতে না পারার জন্য অবশ্য আমি ফুটবলারদের উপর দোষ চাপাতে চাই না। আরে, যে দলের গড় উচ্চতা সাড়ে পাঁচ ফুট, সেই দলের ফুটবলাররা হেড দেবে কী করে? কিন্তু এটা কোচকে কে বোঝাবে? মোহনবাগানের কোচ থাকার সময় ওডাফা যদি গোল করতে না পারত, তা হলে সেটা তো আমারই ব্যর্থতা হত! আমাদের মূল সমস্যা গোড়ায়। স্বদেশি বনাম বিদেশির মধ্যে উঁচু-নিচুর বীজ রোপণ করেছে খোদ ফেডারেশনই। বিদেশি কোচ দেখলেই কর্তাদের লালা ঝরে।
ইস, খুব আফসোস হচ্ছে। সত্তরের দশকে ফুটবলে সাফ কাপ থাকলে, আমাদের বেশির ভাগ ফুটবলার হয়তো সোনার দোকান খুলে ফেলত!
|