শ্রীরামপুর স্টেশন-সংলগ্ন রাস্তায় নাভিঃশ্বাস পথচারীর
চিকিৎসক শুভম পাল জরুরি অস্ত্রোপচারের কাজে সকালে শ্রীরামপুর স্টেশনে নেমেছেন। গন্তব্য শ্রীরামপুর ওয়ালশ হাসপাতাল। কোনওক্রমে স্টেশনের ভিড় ঠেলে সাবওয়েতে নামতেই দেখলেন জল থইথই করছে। পায়ের পাতা-ঢোবা জলে অগত্যা নামতেই হল। টিপটিপ বৃষ্টিতে রিকশা আর বাইকের দাপাদাপিতে ঠোক্কর খেতে খেতে এগোলেন। শেষমেশ একটি রিকশার সামনের চাকা চলে গেল তাঁর পায়ের উপর দিয়ে। হুমড়ি খেয়ে রাস্তার পাশে আপেলের ঝুড়িতে গিয়ে পড়লেন ডাক্তারবাবু। প্রতি দিনই এ ভাবেই শ্রীরামপুর স্টেশন-লাগোয়া রাস্তায় যাতায়াত করেন মানুষজন।
রাস্তার দু’দিকে ফলের বাজার বসে। পথ আগলে থাকে তিনটে রিকশার স্ট্যান্ড। সার সার দাঁড়িয়ে থাকে অটো। বাস স্ট্যান্ডও আছে। এটা-ওটা গাড়িও চলে। সব মিলিয়ে অপরিসর রাস্তায় পথচারীদের নাভিঃশ্বাস। রাস্তা জুড়ে বসা মুচি, খৈনিওলাদেরও কেউ সরতে বলার নেই। রাস্তার অনেকটা দখল করে বেঞ্চ বাড়িয়ে গড়ে উঠেছে চায়ের দোকান। আছে তেলেভাজা, ফুচকাওয়ালা, ঘুগনিওলা খুচরো পসরার তালিকাটা বেড়েই চলে।
আর বেড়ে চলে রাজনৈতিক নেতা-নেত্রীদের ঝুড়ি ঝুড়ি প্রতিশ্রুতি। এক সময়ে শ্রীরামপুরের পুরপ্রধান ছিলেন প্রয়াত কেষ্ট মুখোপাধ্যায়। স্টেশন-লাগোয়া গাঁধী ময়দানের অনেকটা জুড়ে তাঁর সময়ে তৈরি হয়েছিল দ্বিতল সুপার মার্কেট। প্রতিশ্রুতি ছিল, এত দিন রাস্তা জুড়ে বসে থাকা শ’য়ে শ’য়ে হকারেরা উঠে যাবেন সেই নতুন মার্কেটে। ট্রেন থেকে নামা পথচারীদের স্বস্তি দিতে রাস্তা ফাঁকা করে ফেলা হবে। যে বেসরকারি বাসস্ট্যান্ডটির বাস সার করে রাস্তা জুড়ে থাকত, সরে যাবে তা-ও। শ্রীরামপুর জিটি রোডের উপর অমূল্যকাননে ইএসআই হাসপাতাল-লাগোয়া চত্বরে সেই বাসস্ট্যান্ড উঠে যাবে। এত দিন রাস্তায় ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা অটোস্ট্যান্ড সেই জায়গায় স্থান পাবে। শ্রীরামপুর স্টেশন চত্বরের গতি বাড়বে যান চলাচলে।

হাঁসফাঁস দশা। প্রকাশ পালের তোলা ছবি।
প্রাথমিক ভাবে কোনও রকম নিয়মরীতির তোয়াক্কা না করে রাস্তার উপরের আকাশ দখল করে হুমড়ি খেয়ে পড়া সুপার মার্কেটের ব্যাপারে আপত্তি ছিল অনেক এলাকাবাসীর। মাঠের জায়গা দখল না করে মার্কেট গড়ার প্রতিশ্রুতি দেন তৎকালীন চেয়ারম্যান। সব মিলিয়ে আন্দোলনের তোড়জোড় শুরু হয় সেই সময়ে। কিন্তু শেষ পর্যন্ত আন্দোলন বিশেষ জোরদার হয়নি। প্রতিশ্রুতি দেওয়া হয়েছিল, হকারেরা ওঠে যাবেন মার্কেটে। পুরকর্তৃপক্ষ হকারদের সঙ্গে কথাও বলেন। পরে শ্রীরামপুরের ঘিঞ্জি স্টেশন চত্বরের একমাত্র নিঃশ্বাস নেওয়ার মাঠটির দফারফা করে তৈরি হয় সুপার মার্কেট। প্রতিশ্রুতি ছিল যেটুকু অংশ ফাঁকা আছে, সেখানে ঝকঝকে পার্ক তৈরি করে দেবে পুরসভা শহরবাসীর জন্য। কিন্তু রাস্তা জোড়া হকারেরা উঠে যাননি সুপার মার্কেটে। মহকুমা শহরে তৈরি হয়নি বাসস্ট্যান্ড। তৈরি হয়নি শহরবাসীর জন্য পার্ক। সুপার মার্কেটের দোতলা এখন কার্যত ফাঁকাই পড়ে আছে।
বেআইনি ভাবে হকার বসে নিত্য যাতায়াতকারীর মানুষজনের অসুবিধার কথা অস্বীকার করেননি পুরপ্রধান অমিয় মুখোপাধ্যায়। রাজনৈতিক দলগুলির বাধাও এর নেপথ্যে একটা বড় কারণ বলে তিনি জানান। পুরপ্রধান বলেন, “যে ভাবে ব্যবসায়ীরা জামাকাপড়ের হ্যাঙ্গার বাড়িয়ে দিচ্ছে রাস্তা জুড়ে, মানুষের তাতে খুবই অসুবিধা হয়। আইনত ব্যবস্থা নেওয়ার কথা হলে রাজনীতির বাধা আসে। সব পক্ষই বলে, গরিব মানুষ করে খাচ্ছে। পুরসভার তরফে আমরা দ্রুত বৈঠক করে ব্যবস্থা নেব।” পুরপ্রধান জানান, “বাসস্ট্যান্ডের জন্য টাকা পাওয়া গিয়েছে। বর্ষায় কাজ শুরু করা যাচ্ছে না। বর্ষা মিটলেই কাজ শুরু হবে।”





First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.