পুলিশি হেফাজতে ধনেখালির তৃণমূল নেতা শেখ নাসিরুদ্দিনের মৃত্যুর ঘটনার সরেজমিন তদন্ত শুরু করল সিবিআই। মঙ্গলবার সিবিআইয়ের আইজি আরএস ভাটি এবং ডিআইজি মধু তেওয়ারির নেতৃত্বে পাঁচজনের একটি তদন্তকারী দল ধনেখালিতে আসে। ঘটনার এক প্রত্যক্ষদর্শী এবং নিহত নেতার স্ত্রী মানুজা বিবির সঙ্গে কথা বলেন তাঁরা। পুরোটাই ভিডিও রেকর্ডিং করা হয়।
গত ১৮ জানুয়ারি ধনেখালি থানার হেফাজতে নাসিরুদ্দিনের মৃত্যু হয়। স্থানীয় তৃণমূল বিধায়ক অসীমা পাত্রের নির্দেশে পুলিশই তাঁকে পিটিয়ে মেরেছে বলে অভিযোগ করেন মানুজা। জেলা পুলিশের হাত থেকে ঘটনার তদন্তভার সিআইডিকে দেয় রাজ্য সরকার। যদিও তাতে সন্তুষ্ট ছিল না নাসিরুদ্দিনের পরিবার। শুরু থেকেই মামলার নিরপেক্ষ তদন্ত চেয়ে সরব ছিল কংগ্রেস। মানুজা পরে কংগ্রেসের টিকিটে পঞ্চায়েত ভোটে লড়ে জিতেও যান। জুন মাসে হাইকোর্টের নির্দেশে মামলার তদন্তভার নেয় সিবিআই। এর পরে কয়েক মাস কেটে গেলেও সিবিআই সে ভাবে তদন্ত শুরু করেনি। মঙ্গলবারই সিবিআই কার্যত পুরোদস্তুর তদন্ত শুরু করল।
সিবিআইয়ের ডিআইজি মধু তেওয়ারি সোমবার রাত থেকেই হুগলিতে ঘাঁটি গাড়েন। তিনি চুঁচুড়ায় জেলা সার্কিট হাউজে ছিলেন। জেলা প্রশাসনের কর্তা এবং অন্যদের সঙ্গে তিনি কথা বলেন। আইজি আরএস ভাটি মঙ্গলবারই দিল্লি থেকে কলকাতায় আসেন। তার পরেই ধনেখালির উদ্দেশে রওনা হন অফিসারেরা। |
ধনেখালি থানায় সিবিআই। ছবি: দীপঙ্কর দে। |
ধনেখালি থানার উল্টো দিকে জেলা পরিষদের বাংলোয় ওই ঘটনার অভিযোগকারীদের জিজ্ঞাসাবাদ শুরু করেন তাঁরা। প্রত্যক্ষ্যদর্শী শেখ সাবেদ আলি ওরফে পল্টুর সঙ্গে প্রায় দেড় ঘণ্টা কথা হয় তদন্তকারীদের। মানুজা বিবির সঙ্গে প্রায় দু’ঘণ্টা কথা বলেন তাঁরা। পদস্থ কর্তাদের পাশাপাশি ঘটনার তদন্তকারী অফিসার বলবীর শর্মাও তাঁদের জিজ্ঞাসাবাদ করেন। সংবাদমাধ্যমের কাছে অবশ্য সিবিআই কর্তারা মুখ খোলেননি। সাবেদ পরে বলেন, “সে দিনের ঘটনার পুরো বিবরণ দিয়েছি সিবিআইকে।”
ধনেখালির যেখানে পুলিশের সঙ্গে নাসিরুদ্দিনের বচসা ও মারধরের ঘটনা ঘটেছিল, সেই মদনমোহন তলায় যান সিবিআই অফিসারেরা। থানায় যেখানে ওই নেতাকে মারধরের অভিযোগ উঠেছে, সেই জায়গাও দেখেন। থানার শৌচাগারেও যান। ধনেখালি থানার তরফে এর আগে বারবারেই দাবি করা হয়েছিল, শৌচাগারে গিয়ে অসুস্থ হয়ে নাসিরুদ্দিন ওরফে নাসুর মৃত্যু হয়েছে। এর আগেই সিবিআই থানার বাজেয়াপ্ত সিসিটিভি-র ফুটেজ নিজেদের হেফাজতে নেয়।
নাসিরুদ্দিনের মৃত্যুর পরে অভিযোগ উঠেছিল, ধনেখালি থানার তৎকালীন ওসি বরুণ ঘোষের অঙ্গুলিহেলনেই তাঁর অধস্তন অফিসারেরা স্থানীয় বিধায়ক অসীমা পাত্রের বিরুদ্ধ গোষ্ঠীর নেতা হিসেবে পরিচিত নাসিরুদ্দিনকে মারধর করেন। সিআইডি এক এএসআই এবং দুই কনস্টেবলকে গ্রেফতারও করে। তবে সিবিআই অফিসারেরা বরুণবাবুকে নিয়ে খোঁজখবর নিলেও তাঁর সঙ্গে এখনও কথা বলেননি। বিধায়ক অসীমাদেবী এ দিন বলেন, “বিষয়টি বিচারাধীন। তাই এ নিয়ে কিছু বলব না।”
মানুজা পরে বলেন, “এত দিন সে ভাবে তদন্ত না হওয়ায় আমরা হতাশ হয়ে পড়েছিলাম। তবে সিবিআইয়ের পদস্থ কর্তারা এসে যে ভাবে জোরদার তদন্ত শুরু করলেন, তাতে আমরা আশাবাদী। এখন মনে হচ্ছে স্বামীর হত্যার অভিযুক্তেরা সাজা পাবে।”
|