কিশোরী গৃহকর্মীকে অকথ্য অত্যাচার, পাকড়াও দম্পতি
তেরো বছরের মেয়েটির সারা শরীরে ধারাল অস্ত্রের দাগ। কোথাও কোথাও গরম ছ্যাঁকার কালশিটে। চোখের উপরে কপালে গভীর ক্ষত। আর সেই ক্ষতচিহ্ন যাতে চোখে না পড়ে, তাই সেখানে আঠা দিয়ে আটকে দেওয়া হয়েছে চুল।
কিশোরীর এই অবস্থা দেখে শিউরে উঠেছিলেন এক চায়ের দোকানি। তাঁরই দোকান লাগোয়া ফ্ল্যাটে পরিচারিকার কাজ করে ওই মেয়েটি। মাঝেমধ্যেই সাহায্য চেয়ে ফ্ল্যাটের জানালা দিয়ে সে ডাকত ওই দোকানিকে। দিনের পর দিন ওই কিশোরীর মুখে তার উপরে হওয়া অত্যাচারের কথা শুনতে শুনতে এক সময় আর সহ্য করতে পারেননি তিনি। বিষয়টি মেনে নিতে পারছিলেন না ফ্ল্যাটের অন্য বাসিন্দারাও। শেষে সব কিছু জানানো হয় ওই কিশোরীর বাড়ির লোকজনকে। লোক-মুখে মেয়ের উপরে অত্যাচারের খবর পেয়ে ওই কিশোরীর মা ও আত্মীয়েরা এসে তাকে উদ্ধার করেন।
সোমবার রাতে ঘটনাটি ঘটেছে বরাহনগরের বি কে মৈত্র রোড এলাকায়। পরিচারিকার উপরে অমানবিক অত্যাচার করার অভিযোগে গ্রেফতার করা হয়েছে গৃহশিক্ষক নবীন মান্না ও তাঁর স্ত্রী সন্মিলিতা মান্নাকে। মঙ্গলবার সকালে তাঁদের ব্যারাকপুর আদালতে তোলা হয়। ধৃতদের বিরুদ্ধে ৩৪১ (বেআইনি ভাবে আটকে রাখা), ৩২৬ (বেধড়ক মারধর করা), ২৩ জুভেনাইল জাস্টিস (শিশু ও প্রতিরোধ) আইন, ২০০০ প্রভৃতি ধারায় মামলা দায়ের করা হয়েছে।
সেই বালিকার পিঠ জুড়ে আঘাতের চিহ্ন। —নিজস্ব চিত্র
পুলিশ জানায়, রানি পণ্ডিত নামে ওই কিশোরী বরাহনগরের রুস্তমজি পার্সি রোড এলাকার বাসিন্দা। এ দিন দুপুরে বরাহনগর থানায় এসে পুলিশের কাছে অত্যাচারের বর্ণনা দেয় সে। তার সারা শরীরে আঘাতের চিহ্ন। দুই হাতে, পায়ে ও পিঠে অসংখ্য কাটা দাগ, ছ্যাঁকার চিহ্ন এবং কপালে গভীর ক্ষত রয়েছে। রানির কথায়, “কয়েক দিন আগে লাঠি দিয়ে মাথায় মেরেছিল মামা (নবীন)। মাথা ফেটে খুব রক্ত বেরিয়েছিল। তার পরে মামা আর মামি (সন্মিলিতা) মিলে আঠা দিয়ে কপালে চুল আটকে দেয়।” তার অভিযোগ, সব সময় ঘরে আটকে রাখা হত তাকে। বাইরের কারও সঙ্গে মিশতেও দেওয়া হত না। বাসন মাজা, ঘর মোছা, কাপড় কাচা-সহ ঘরের সব কাজই করতে হত। রাতে মালিক ও মালকিনের পা টিপে দিতে হত। কাজে একটু দেরি হলেই বেধড়ক মারধর। কখনও লাঠি, কখনও আবার ব্লেড বা কাটারি দিয়েও আঘাত করা হত। অনেক সময়ে গরম খুন্তি বা রড দিয়েও ছ্যাঁকা দেওয়া হত বলে জানায় রানি।
রানির অভিযোগ, ওই বাড়িতে তিনটি কুকুর রয়েছে। এক দিন একটি কুকুর কামড়াতে এলে তাকে মারে সে। আর সেই অপরাধে তার গায়ে গরম তেল ঢেলে দেন সন্মিলিতা। এ দিন থানায় দাঁড়িয়ে রানি বলে, “মামা-মামি কোথাও বাইরে গেলে আমাকে কুকুরগুলির সঙ্গে ঘরে আটকে রেখে যেত। ঠিক মতো খাবারও দিত না। এক দিন খেতেই দেয়নি। তখনই চায়ের দোকানের কাকুকে ডেকে খাবার চেয়েছিলাম।” রানির অভিযোগ, “কাউকে কিছু জানালে আমাকে আর আমার মাকে চোর বলে পুলিশে দেওয়ার ভয় দেখান হত। তাই বাড়ির কারও সঙ্গেও দেখা করতাম না।”
পুলিশ সূত্রের খবর, সংসারে চরম অভাবের জন্য মাস আটেক আগে তেরো বছরের মেয়েটিকে পরিচারিকার কাজে লাগিয়েছিলেন রানির মা রিনা পণ্ডিত। এ দিন তিনি বলেন “মাঝেমধ্যেই মেয়ের সঙ্গে দেখা করতে যেতাম। কিন্তু ওঁরা বলতেন, রানি বাড়িতে নেই। অন্য কোথাও গিয়েছে। কখনওই দেখা করতে দিতেন না।” দীর্ঘ দিন ধরে ওই কিশোরীর উপরে চলা অত্যাচারের কথা ইদানীং টের পাচ্ছিলেন নবীনের প্রতিবেশীরা। তাঁরা জানান, সব সময়ে ঘর বন্ধ থাকায় মেয়েটির উপরে কী হচ্ছে, সেটা জানা যেত না। তবু মাঝেমধ্যেই কান্নার আওয়াজ পাওয়া যেত। তাঁদের কাছে খবর পেয়েই মেয়েকে নিয়ে আসার সিদ্ধান্ত নেন রিনা।
 
 
 


First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.