তোলা তুলছেন পুরপিতা, নেতার নালিশ মমতাকে
ক জন তৃণমূলের ব্লক সভাপতি। অন্য জন ওই দলেরই কাউন্সিলর। সেই পুরপিতার বিরুদ্ধেই এ বার তোলাবাজি ও সন্ত্রাস চালানোর লিখিত অভিযোগ দায়ের করেছেন ব্লক সভাপতি।
আর তাঁর এই অভিযোগ নিয়েই আড়াআড়ি দু’ভাগ হয়ে গিয়েছে সিঁথি এলাকার তৃণমূল।
দলীয় সূত্রের খবর, সিঁথি এলাকার দু’নম্বর ওয়ার্ডের তৃণমূল ব্লক সভাপতি নির্মল গুছাইত সরাসরি দুর্নীতি ও স্বজনপোষণের অভিযোগ এনেছেন ওই ওয়ার্ডের কাউন্সিলর শান্তনু সেনের বিরুদ্ধে। তাঁর বিরুদ্ধে তোলাবাজি ও সন্ত্রাস ইত্যাদির অভিযোগ তুলে মুখ্যমন্ত্রী, দলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক, রাজ্য সভাপতি এবং উত্তর কলকাতা লোকসভা কেন্দ্রের তৃণমূল সাংসদের কাছে লিখিত অভিযোগ জানিয়েছেন তৃণমূল ব্লক সভাপতি।
শান্তনুবাবু অবশ্য নিজের দলের এক নেতার এই সব অভিযোগের ব্যাপারে কোনও মন্তব্য করতে রাজি হননি। মঙ্গলবার তিনি বলেন, “আমার বিরুদ্ধে ওঠা কোনও অভিযোগ নিয়েই আমার কিছু বলার নেই।” কিন্তু তাঁর বিরুদ্ধে দলীয় নেতা সরব হওয়ায় তৃণমূলের অন্তর্দ্বন্দ্ব আরও এক বার প্রকট হয়ে গিয়েছে।
শান্তনুবাবুর বিরুদ্ধে নির্মলবাবু ঠিক কী কী অভিযোগ এনেছেন?
নির্মলবাবুর অভিযোগ, শান্তনুবাবু এলাকার সমাজবিরোধীদের মদত দিচ্ছেন। তাঁর মদতেই এলাকায় ছোট, মাঝারি ও বড় ব্যবসায়ীদের কাছ থেকে তোলা আদায় করা হচ্ছে। এমনকী সিন্ডিকেটের মাধ্যমে মানুষকে ভয় দেখিয়ে নিম্ন মানের মালপত্র সরবরাহ করাচ্ছেন ওই পুরপিতা। নির্মলবাবুর আরও অভিযোগ, সিপিএমের প্রাক্তন নেতা দুলাল বন্দ্যোপাধ্যায়ের এক সময়ের সাঙ্গোপাঙ্গদের নিয়ে এলাকায় দাপিয়ে বেড়াচ্ছেন শান্তনু। তাদের সাহায্যেই রামলীলা বাগানের কালোয়ার পট্টি, দমদম মেট্রো স্টেশন সংলগ্ন এলাকা থেকে প্রোমোটার ও অটো ইউনিয়ন, সব্জি বিক্রেতা ও দোকানদারদের কাছ থেকে নিয়মিত লক্ষ লক্ষ টাকা তোলা আদায় হচ্ছে বলে ব্লক সভাপতির অভিযোগ। তাঁর বক্তব্য, পুরপিতা দুর্নীতি চালিয়ে যাচ্ছেন সমাজবিরোধী ও সিন্ডিকেটের সাহায্যেই। শান্তনুবাবুর সঙ্গী হিসেবে বিশেষ করে দশ দুষ্কৃতীর নামও করেছেন ব্লক সভাপতি। ওই নেতার বক্তব্য, খোদ পুরপিতার এই ধরনের কার্যকলাপে দলেরই ভাবমূর্তি নষ্ট হচ্ছে। শান্তনুবাবু নিজের বাড়ির কালীপুজোর জন্যও এলাকার দোকানদারদের কাছ থেকে টাকা আদায় করছেন বলে নির্মলবাবু জানান। জোর করে জায়গা দখলের অভিযোগও আছে। সেই জবরদখল করা জায়গায় শান্তনুবাবু গ্যারাজ তৈরি করেছেন বলে জানান ব্লক সভাপতি।
মুখ্যমন্ত্রী তথা দলের শীর্ষ নেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে ব্লক সভাপতি জানিয়েছেন, এই সব কারণে এলাকায় দলের ভাবমূর্তি তলানিতে চলে গিয়েছে। পুরপিতার বিরুদ্ধে যাবতীয় অভিযোগের সব তথ্যপ্রমাণ তাঁর কাছে আছে বলে ব্লক সভাপতির দাবি। নির্মলবাবুর আশঙ্কা, শান্তনুবাবুর এই সব কাজের জন্য দলের এতটাই ক্ষতি হচ্ছে যে, ২০১৪ সালের লোকসভা নির্বাচনে তাঁর দল আর মানুষের কাছে যেতে পারবে না।
দলীয় পুরপিতার বিরুদ্ধে নির্মলবাবুর তিন পাতার লিখিত অভিযোগের সঙ্গে জমা দেওয়া হয়েছে একটি প্রচারপত্রও। ওই প্রচারপত্রে দলীয় কর্মী-সমর্থকদের কাছে ব্লক সভাপতি অনুরোধ করেছেন, সংগঠনের ভাবমূর্তি নষ্ট হতে দেবেন না। তিনি লিখেছেন, ‘মুখ্যমন্ত্রী নির্দেশ দিয়েছেন, প্রোমোটাররাজ, ঠিকাদারি, সিন্ডিকেট এখনই বন্ধ হোক। যে-সব নেতা-কর্মী এ-সবের সঙ্গে জড়িত, তাঁদের দল থেকে বহিষ্কার করা হোক।’ যে-দশ জন সমাজবিরোধীকে সঙ্গে নিয়ে শান্তনুবাবু ওঠাবসা করেন বলে অভিযোগ, তাদের নামও প্রচারপত্রে দেওয়া হয়ছে বলে জানান তৃণমূলের এক শীর্ষ নেতা।
এই অভিযোগের ব্যাপারে দলের শীর্ষ নেতারা কী বলছেন?
তৃণমূলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক মুকুল রায় বলেন, “দলের উত্তর কলকাতা জেলা সভাপতি তথা সাংসদ সুদীপ বন্দ্যোপাধ্যায় এই অভিযোগের বিষয়টি দেখছেন।”
সুদীপবাবু কী বলছেন? তিনি এ দিন বলেন, “শান্তনু এক জন প্রতিষ্ঠিত ব্যক্তি। ইন্ডিয়ান মেডিক্যাল অ্যাসোসিয়েশনের পশ্চিমবঙ্গ শাখার সচিব। ওঁর স্ত্রীও চিকিৎসক। অভিযোগ যখন করা হয়েছিল, সেই সময় ব্লক সভাপতির পদ ছিল। আর ওই পদ নেই। তৃণমূলের স্থানীয় বিধায়ক মালা সাহা ও বরো কমিটির চেয়ারম্যান তরুণ সাহার সঙ্গে কথা বলে নতুন ব্লক সভাপতি নিয়োগ করা হবে।”
 
 
 


First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.