মোটরবাইকে সওয়ারির মাথা ফাঁকাই
জীবনের তোয়াক্কা নেই, পরোয়া নেই পুলিশের লাঠিরও।
শহরের রাস্তায় চুল উড়িয়ে সাঁ সাঁ করে বাইক ছোটানোর এমন দৃশ্য চোখে পড়ে আকছারই। ২০০৮ সালের এক সমীক্ষায় জানা গিয়েছিল, দুর্গাপুরে প্রায় ৬৫ শতাংশ চালক হেলমেট ছাড়াই দিব্যি বাইকে ঘোরেন। এতে যে বিপদ বাড়ে তা মেনে নিয়েও সেই চালকদের যুক্তি, হেলমেট পড়লে মাথা ভারি লাগে, গরমে মাথা ঘেমে যায়, পিছনের গাড়ির হর্ন শুনতে অসুবিধে হয়, রাতে সামনের গাড়ির আলো হেলমেটের কাচে পড়ে সমস্যা বাড়ায় ইত্যাদি। শহরে মহিলা চালকদের সংখ্যাও কম নয়। তাঁদের অনেকের আবার মত, হেলমেট পড়ে কোথাও যাওয়া মানেই চুলের স্টাইলের দফারফা।
শিশুদের স্কুলে নিয়ে যাওয়ার এই দৃশ্য প্রতি দিনের।
অথচ এই হেলমেট-অনীহার জন্যই অনেক দুর্ঘটনা ঘটছে। মঙ্গলবার সকালেও এ জোনের দয়ানন্দ রোডের মোড়ে পুলকারের ধাক্কায় মাথায় চোট পায় প্রথম শ্রেণির ছাত্রী শুভেচ্ছা। মায়ের সঙ্গে হেলমেট ছাড়াই স্কুটিতে চড়ে স্কুলে যাচ্ছিল সে। শুভেচ্ছার বাবা দুর্গাপুর ইস্পাতের কর্মী প্রদীপ দাস বলেন, “হেলমেট পড়া থাকলে মেয়ে হয়তো এতটা চোট পেত না।” দুর্ঘটনা ঘটার পরে সচেতন হয়েছেন প্রদীপবাবু। কিন্তু শহর জুড়ে আরও অনেকেই এভাবেই ঘুরছেন। দুর্ঘটনাস্থলের অদূরেই হেলমেট না পরে একাধিক সওয়ারিকে বাইক চালাতে দেখা গিয়েছে। আবার দুর্গাপুরের যে কোনও ইংরাজি স্কুলের সামনে দাঁড়ালেও দেখা যায়, স্কুল পড়ুয়ারা বিশেষ করে ছাত্রীরা স্কুটি চালিয়ে স্কুলে যাচ্ছে, বাড়ি ফিরছে। মাথা কিন্তু ফাঁকা। অনেকসময়ে পিছনে একজন বা দু’জন সহপাঠীকে নিয়েও স্কুটি ছুটছে।
তবে ২০১১ সালে আসানসোল-দুর্গাপুর কমিশনারেট হওয়ার পরে নিয়মিত অভিযান শুরু হওয়ায় পরিস্থিতি কিছুটা বদলেছে বলেই দাবি ইস্টার্ন ইন্ডিয়া অটোমোবাইল অ্যাসোসিয়েশনের দুর্গাপুর শাখার সমীর বসুর। তিনি জানান, হেলমেট না পড়লে কী কী বিপদ হতে পারে, পথ নিরাপত্তা সপ্তাহে সচেতনতা শিবির করে তা প্রচার করেন তাঁরা। তাঁর মতে, একমাত্র সচেতনতাই এর সমাধান। দুর্গাপুর মহকুমা হাসপাতালের প্রাক্তন সুপার মিহির নন্দীও জানান, মাসে গড়ে ১৫-২০ জন পথ দুর্ঘটনায় আহত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হন। অধিকাংশই হেলমেট না পড়ে বড় বিপদ ডেকে আনেন। দীর্ঘ সময় ধরে চিকিৎসা চলে। মিহিরবাবু বলেন, “তবু রাস্তায় অনেককেই দেখি হেলমেট না নিয়ে গাড়ি চালাতে।”
এই পুলকারই দিয়েছে ধাক্কা।
পরিবহণ দফতর সূত্রে জানা গিয়েছে, ‘মোটর যান আইন ১৯৮৮’-এর ১২৯ ধারায় বলা হয়েছে, হেলমেট পড়া বাধ্যতামূলক। কেবল শিখদের ছাড়া। এবং এই হেলমেট ইন্ডিয়ান ব্যুরো অফ স্ট্যান্ডার্ডের নির্দিষ্ট মান অনুযায়ী হতে হবে। হেলমেট না পড়লে ১৭৭ ধারায় আর্থিক জরিমানারও বিধান রয়েছে। এছাড়া মোটর ভেহিক্যালস দফতরের আধিকারিকরা ১৭৭ ধারায় ‘স্পট ফাইন’ করার অধিকারি। পুলিশ জানিয়েছে, গত কয়েক মাসে নিয়মিত বিভিন্ন রাস্তার মোড়ে মোড়ে অভিযান চালানো হচ্ছে। কিন্তু ধৃতেরা জরিমানা দিয়ে ছাড়া পেয়ে যান। আগে থেকে খবর পেলে অনেকে সতর্ক হয়ে অন্য রাস্তাতেও চলে যান। পুলিশের এক আধিকারিক বলেন, “তবে আগের থেকে পুরুষদের মধ্যে হেলমেট পড়ার চল অনেক বেড়েছে। কিন্তু মহিলাদের অনেকেই হেলমেট না পড়েই স্কুটি নিয়ে বেরিয়ে পড়েন। নিয়মিত অভিযান চলে। কিন্তু সঙ্গে মহিলা পুলিশকর্মী না থাকায় কোনও মহিলা হেলমেট ছাড়া স্কুটি নিয়ে যাচ্ছেন দেখেও কিছু বলা যায় না।” বিষয়টি তাঁরা ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানিয়েছেন বলে জানান তিনি।

—নিজস্ব চিত্র।

হেলমেট ছাড়া স্কুটিতে ছাত্রী, জখম দুর্ঘটনায়
দুর্ঘটনার
পরে।
ডিএসপি হাসপাতালে
জখম স্কুলছাত্রী শুভেচ্ছা।
মায়ের স্কুটির পিছনে বসে যাওয়ার সময়ে পুলকারের ধাক্কায় জখম হল এক ছাত্রী। চোট পেয়েছেন তাঁর মা। মঙ্গলবার সকালে দুর্ঘটনা ঘটে দুর্গাপুরের এ-জোনের দয়ানন্দ রোডের মোড়ে। শুভেচ্ছা দাস নামে প্রথম শ্রেণির ওই ছাত্রী বা তার মা বীথিকাদেবী কারও মাথায় হেলমেট ছিল না। সকালে অরবিন্দ রোডের বাসিন্দা বীথিকাদেবী মেয়েকে স্কুলে পৌঁছে দিতে যাচ্ছিলেন। পথে নিয়ন্ত্রণ হারানো একটি পুলকার তাঁদের স্কুটির পিছনে ধাক্কা মারে। শুভেচ্ছা রাস্তায় ছিটকে পড়ে। মাথা থেকে রক্ত ঝরতে থাকে। আশপাশ থেকে লোকজন ছুটে আসেন। বেগতিক দেখে পুলকারটি ফেলে পালায় চালক। শুভেচ্ছাকে ডিএসপি হাসপাতালে ভর্তি করানো হয়। তার মাথায় তিনটি সেলাই দিতে হয়েছে। বীথিকাদেবীকে প্রাথমিক চিকিৎসার পরে ছেড়ে দেওয়া হয়। শুভেচ্ছার বাবা, ডিএসপি-র কর্মী প্রদীপবাবু বলেন, “হেলমেট থাকলে হয়তো মেয়ের চোট গুরুতর হত না।” পুলকারটি আটক করা হয়েছে। চালকের খোঁজ চলছে।

— নিজস্ব চিত্র।



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.