সরি স্যর

ব্রাত্য বসু
ব্রাত্য বসু
স্কুলে দুষ্টু ছেলে বলে বেশ ভালই নাম-ডাক ছিল আমার। আর সেই সব দুষ্টুমির জন্য মার খাওয়াও ছিল আমার কাছে সাধারণ ঘটনা। আমাদের বাঙুর মেমোরিয়াল মাল্টিপারপাস স্কুল পোস্ট কলোনিয়ালিজমের আদর্শ উদাহরণ। কর্পোরাল পানিশমেন্টের কোনও ধারণাও ছিল না। তাই হাতখুলে মারতেন আমাদের শিক্ষকরা। একবার কোনও এক দুষ্টুমির জন্য মার খাচ্ছি ভূগোল স্যর অনন্তবাবুর কাছে। আমার স্কেল দিয়ে আঘাত হানছেন আমারই পিঠে। আর প্রচণ্ড কাঁদছি আমি। এক সময় মারের আঘাত সহ্য করতে না-পেরে স্কেলটাই ভেঙে গেল। আমার কান্না মুহূর্তে বদলে গেল। আমি অনন্তবাবুর হাত চেপে ধরে বললাম, স্যর স্কেলের টাকা দিতে হবে। স্যর তো বেয়াকুব। আমিও নাছোড়বান্দা। স্কেল আমাকে কিনে দিতেই হবে। সত্যিই ছুটির পর কিনে দিলেন স্কেল। তবে আজ ওই ঘটনার জন্য বলতে চাই, সরি অনন্তবাবু।

ডা. কুনাল সরকার
ডা. কুনাল সরকার
আমার স্কুল-কলেজ কেটেছে প্রায় মিলিটারি শাসনে। শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে স্যরেরা আর বাড়িতে মা। দ্বিমুখী এই শাসনের উল্টো দিকে আমি। সাপ্তাহিক রিপোর্ট কার্ডে একটু টোল খেয়েছে কি শুরু হয়ে গেল মায়ের গোলা বর্ষণ। তারই ফাঁকে একটু আধটু দুষ্টুমি যে করিনি তা নয়। ক্লাস ইলেভেনে আমাদের অঙ্ক করাতেন ফাদার গোরে। সজ্জন ব্যক্তি। আইনস্টাইনের ছাত্র ছিলেন উনি। পরতেন পুরু কাচের চশমা। ফলে নজর ব্ল্যাকবোর্ড আর সামনের দু’টো বেঞ্চের বেশি যেত না ওঁর। তাই সামনের বেঞ্চ দু’টো ছেড়ে বসলেই নিরাপদ। রোল কল হয়ে গেলে দিব্যি গড়িয়ে নেওয়া যেত বেঞ্চে মাথা দিয়ে। দরজার পাশে বসলে তো কথাই নেই, ক্লাস কেটে ম্যাটিনি শো-ও দেখে আসা যেত। সেই সুযোগের সদ্ব্যবহার আমিও করেছি কয়েক বার। তবে আজ সে কথা মনে পড়লে বেশ খারাপ লাগে। ভাল মানুষ পেয়ে ঠকিয়েছি আমরা! সরি, ফাদার গোরে।


সুচিত্রা ভট্টাচার্য
সুচিত্রা ভট্টাচার্য
অনেক দুষ্টুমি করেছি ছোটবেলায়। সব ক’টা আজ মনেও নেই। তবে একজনের কথা আজও ভুলিনি। ক্লাস এইটে আমাদের সেলাই দিদিমণি। নির্ভেজাল মহিলা। আর সেই সুযোগে দেদার ফাঁকি দিতাম। ক্লাস তো একদম করতাম না। সব সময় ‘দিদি, একটু বাইরে যাব’ বলে বেরিয়ে পড়তাম ক্লাস থেকে। সবাই মিলে ‘হুঁ হুঁ’ করে একটা আওয়াজ করতাম। সকলের আওয়াজ চরম বিরক্তিকর হয়ে উঠত ‘দিদি’র কাছে। সেলাই নিয়ে ওঁর একটা কথা ছিল, “মেয়েরা, ফুটি যেন না ওঠে।” ‘ফুটি’টা যে কী, তা জানতামও না। উলটে দিদির নাম রেখেছিলাম ‘ফুটিদি’। বছর খানেক পরে ক্যানসারে মারা যান উনি। ফিরে তাকালে মনে হয়, কী জ্বালাতনটাই না করেছিলাম আমরা। আজ বলতে চাই, সরি দিদি, একটা সেলাইও আমি করিনি। সব ক’টাই মা করে দিতেন। অনেক কিছু শেখার ছিল আপনার থেকে। হেলায় নষ্ট করেছি সে সুযোগ।

দীপঙ্কর দে
দীপঙ্কর দে
সেন্ট জেভিয়ার্সের পড়ার চাপে ছোটখাটো দুষ্টুমির বাইরে এগোতে পারিনি আমরা। এমন সময় এলেন বাংলার শিক্ষক বিমল দে। সালটা খুব সম্ভবত ১৯৬১। সুকুমার রায়ের বই থেকে উঠে আসা। হাঁটুর ওপর ধুতি। সাদা পাঞ্জাবিটা নির্ঘাত বাড়িতে কেচে ইস্তিরি করা। জেভিয়ার্সের ‘এলিট’ পরিমণ্ডলে একেবারে বেমানান। ওঁর নাম দিলাম ‘গোল আলু’। ডাকনাম সহ ওঁর ক্যারিকেচার করা থাকত ব্ল্যাকবোর্ডে। সিগারেটের ছাই রেখে দিতাম বসার চেয়ারে। এত দুষ্টুমির পরেও কোনও দিন কিছু বলেননি। এতটাই ভাল মানুষ বিমল স্যর। কিন্তু ওঁর ভালমানুষির সুযোগে আমাদের দুষ্টুমি বাড়তে থাকল চড়চড় করে। একদিন টিফিনে সিঁড়ি দিয়ে নীচে নামছেন। পেছন থেকে ওঁর পাঞ্জাবিতে কালি ছিটিয়ে দিলাম। ঘুরে তাকালেন আমাদের দিকে। চোখ ছলছল, ক্রোধ ফুটে উঠেছে মুখে। কিন্তু কোনও কথা নেই। আমাদেরই এক সহপাঠী নালিশ করল ফাদার বুশের কাছে। শাস্তি স্বরূপ জুটল দশটা করে বেত্রাঘাত। ফাদার তক্ষুনি গিয়ে স্যরের কাছে ক্ষমা চাইতে বললেন। ক্ষমা চাইলাম স্যরের কাছে। আমাদের কথা শুনে উনি বললেন, “আমি কিন্তু ফাদারকে কিছু বলিনি।” বুঝলাম কত বড় মনের মানুষ উনি। কত কিছু শেখার আছে ওঁর থেকে। আজ তাই বলতে চাই, সরি, স্যর।

আলাপন বন্দ্যোপাধ্যায়
আলাপন
বন্দ্যোপাধ্যায়
ছাত্রজীবনে আমি যে খুব দুষ্টু ছিলাম, এমন অপবাদ কেউ দিতে পারবে না। তবে একটা কথা মনে পড়ছে। তখন আমি নরেন্দ্রপুর রামকৃষ্ণ মিশনে পড়ি। ক্লাস সিক্স-সেভেন হবে। জুনিয়র সেকশনে তিনটি ভবন ছিল। নিরঞ্জনানন্দ ভবন, অদ্বৈতানন্দ ভবন আর অভেদানন্দ ভবন। আমি থাকতাম নিরঞ্জনানন্দ ভবনে। অভেদানন্দ ভবনে থাকতেন এক খর্বকায় কিন্তু লম্বা টিকিধারী সন্ন্যাসী মহারাজ। আমরা তাঁর নাম দিয়েছিলাম ‘বিশাল টিকিধারী’। রাত সাড়ে ন’টায় তিনি যখন সান্ধ্যভ্রমণে বেরোতেন, আমরা নিরঞ্জনানন্দ ভবনের দোতলা থেকে সমস্বরে চেঁচাতাম ‘বিশাল টিকিধারী’, ‘বিশাল টিকিধারী’ বলে। প্রচণ্ড বিরক্ত হতেন তিনি। সাঙঘাতিক উত্ত্যক্ত বোধ করতেন। কিন্তু কিছু বলতেন না। তবে আজ মনে হয়, ওঁর সঙ্গে অমন ছেলেমানুষি না-করলেও পারতাম। সরি, স্যর।



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.