মাঠে নামার আগে কিছুটা টেনশনে ছিলেন। জানতেন, চিডি-বলজিৎদের একের পর এক জোরালো শট ধেয়ে আসবে বিদ্যুৎগতিতে। আগে প্রচুর ম্যাচ খেলেছেন। গোলকিপার হিসেবে প্রশংসা কুড়িয়েছেন। কিন্তু ইস্টবেঙ্গলের মতো বড় ক্লাবের বিরুদ্ধে এই প্রথম খেলা। সুযোগের যথাসাধ্য সদ্ব্যবহার করলেন জঙ্গলমহলের ছেলে সুনীল মুর্মু। কখনও চিডির শট আটকালেন, কখনও ডিকার। শনিবার খড়্গপুরে প্রদর্শনী ম্যাচে ইস্টবেঙ্গল ৪-০ গোলে জিতেছে ঠিকই। কিন্তু তারই মধ্যে নজর কেড়েছেন স্পোটর্স ডেভেলপমেন্ট অ্যাকাডেমির খড়্গপুর একাদশের গোলকিপার সুনীল।
ম্যাচের পরেও ঘোর কাটছিল না সুনীলের। বলছিলেন, “ইস্টবেঙ্গলের মতো বড় দলের সঙ্গে আগে কখনও খেলিনি। খেলার সুযোগই আসেনি। তাই মাঠে নামার আগে কিছুটা টেনশনে ছিলাম।” সুনীলের কথায়, “চিডির শটটা আটকে দেওয়ার পর মনে জোর পাই। নতুন করে আত্মবিশ্বাস ফিরে আসে।” ভবিষ্যতে কলকাতার বড় ক্লাবে খেলার স্বপ্ন রয়েছে সুনীলের। তাঁর কথায়, “ইস্টবেঙ্গলের মতো বড় ক্লাবে খেলতে চাই। সুযোগ পেলে নিজের সেরাটা উজাড় করে দেব।” |

শনিবারের ম্যাচে গোলরক্ষকের ভূমিকায় সুনীল মুর্মু।—নিজস্ব চিত্র।
|
সুনীলের বাড়ি ঝাড়গ্রামের প্রত্যন্ত গ্রাম ধানরিতে। অভাবের সংসারে বাবা-মা আর এক ভাই-এক বোন। সুনীলই বড়। বাবা রাবণ মুর্মু চাষ করেন। মা মুগলিদেবী সংসার সামলান। স্পোর্টস ডেভেলপমেন্ট অ্যাকাডেমির খড়্গপুর একাদশের কোচ স্বপন দে বলছিলেন, “সুনীল খুব ভাল খেলে। ইস্টবেঙ্গলের কতগুলো শট আটকে দিল। প্রশিক্ষণ পেলে আগামী দিনে ও আরও ভাল খেলবে।” অ্যাকাডেমির সভাপতি অনিতবরণ মণ্ডলের মতে, “আমাদের জেলায় প্রতিভার অভাব নেই। সুনীলের মতো ছেলেরা তার উজ্জ্বল উদাহরণ।” সুনীলের প্রশংসা করেছেন দলের সঙ্গে আসা ইস্টবেঙ্গল ক্লাবের কর্মকর্তারাও। সুনীল যখন মাঠ ছাড়ছিল, তখন হাততালি দিচ্ছিলেন সকলে। ম্যাচ শেষে লাল-হলুদের ব্রাজিলীয় কোচ মার্কোস ফালোপা বলছিলেন, “এই ধরনের ম্যাচের ফলে স্থানীয় ফুটবল উপকৃত হবে। তরুণ ফুটবলাররা সামনে উঠে আসবে।”
স্পোর্টস ডেভেলপমেন্ট অ্যাকাডেমির খড়্গপুর শাখা শনিবার প্রদর্শনী ম্যাচের আয়োজন করেছিল খড়্গপুর শহরের সেরসা স্টেডিয়ামে। ম্যাচ ঘিরে সকাল থেকে রেলশহরে উন্মাদনা ছিল তুঙ্গে। স্টেডিয়ামে সব মিলিয়ে ১০ হাজার লোক বসতে পারে। দুপুরের আগেই গ্যালারি কানায় কানায় ভর্তি। উদ্যোক্তাদের দাবি, খেলা দেখেছেন প্রায় ১২ হাজার দর্শক। শনিবার সকালেই খড়্গপুরে পৌঁছে গিয়েছিল ইস্টবেঙ্গল। শহরের এক হোটেলে ফুটবলাররা ওঠেন। দুপুরে টিম বাস সেরসা স্টেডিয়ামে পৌঁছনোর পর লাল-হলুদ সমর্থকেরা চিৎকার জুড়ে দেন। রব ওঠে, ‘এ বি সি ডি, গোল দেবে চিডি, ‘আই লিগ জিতবে কারা, ইস্টবেঙ্গল আবার কারা’। দেখে কে বলবে, এটা প্রদর্শনী ম্যাচ। স্পোটর্স ডেভেলপমেন্ট অ্যাকাদেমির খড়্গপুর শাখার সভাপতি অনিতবরণবাবু বলছিলেন, “আমরা এই ফুটবল ঘিরে এই উন্মাদনাটাই আনতে চেয়েছিলাম। খড়্গপুরের খেলাধূলোর প্রসারেই আমাদের এই উদ্যোগ।”
খেলা শুরু হয় বিকেল চারটে নাগাদ। শুরু থেকেই মাঠের দখল চলে যায় ইস্টবেঙ্গলের হাতে। মাঠ শাসন করছিলেন চিডি, অ্যালভিটো, ডিকা, গুরবিন্দর সিংহ, বলজিৎ সিংহরা। তারই মধ্যে কয়েকটি শট অসাধারণ দক্ষতায় আটকে সকলের নজর কাড়েন সুনীল। দ্বিতীয়ার্ধে মাঠে নামেন ওপারা। প্রথমার্ধে ৩-০ গোলে এগিয়ে যায় ইস্টবেঙ্গল। একে একে গোল করেন বলজিৎ, চিডি, গুরবিন্দর। দ্বিতীয়ার্ধে আরও একটি গোল করেন ডিকা। খেলা শেষে ইস্টবেঙ্গলের পক্ষে ফল দাঁড়ায় ৪-০। সুনীল অন্তত হাফ ডজন জোরালো শট আটকে দেন। কয়েক মাস আগে পুলিশের উদ্যোগে ‘জঙ্গলমহল কাপ’ ফুটবল টুর্নামেন্ট হয়েছিল। সেই টুর্নামেন্টে সেরা গোলকিপার হয়েছিলেন সুনীল। তার আগে রাজ্য সরকারের উদ্যোগে লালগড়ে এক প্রদর্শনী ম্যাচেও জঙ্গলমহল একাদশের হয়ে খেলেছেন তিনি। জঙ্গলমহলের এই প্রতিভাবান ফুটবলারের একটাই স্বপ্ন, আরও ভাল খেলা। |