ঝকঝকে বিলাসবহুল কোনও হোটেলের ডিলাক্স ঘর নয়। রবিবার কল্যাণীতে র্যান্টি মার্টিন্সের খোঁজ পাওয়া গেল ২০/২০-র একটা খুপচিতে! দেওয়াল ঘেঁষে দু’টো চৌকি পাতা। একটায় অর্ধেক মশারি টাঙানো। অন্যটায় কাপড়-জামা বোঝাই। তবু চোখে-মুখে কোনও বিরক্তি নেই নাইজিরিয়ান গোলমেশিনের।
র্যান্টি কোচ এলকো সাতৌরির অবস্থাও প্রায় এক। তবে চৌকি নয়, বিছানার ব্যবস্থা আছে তাঁর ঘরে। দিন নেই, রাত নেই, স্ত্রী মারিস ফোনে শুধু একটাই কথা বলে যাচ্ছেন, “বাড়ি ফিরে এসো।” সাত বছরের ছেলে জিয়ন লুকা ভয়েস মেলে মেসেজ করে রেখেছে, “কাম ব্যাক সুন ড্যাড। লাভ ইউ।” বন্ধু আর্থার পাপাসেরও পরামর্শ, “আবেগের বসে কোনও কাজ কোরো না।”
আপনজনদের ডাক ও চরম অনুকূল পরিস্থিতি কোনও কিছুই যেন বাধা নয় কোচ-ফুটবলারদের সামনে! সে জন্যই হয়তো ইউনাইটেড স্পোর্টসের আর্থিক দুর্দিনে বন্ধুত্বের হাত ছাড়ছেন না র্যান্টিরা। ক্লাবে স্পনসর নেই। কবে আসবে তার নিশ্চয়তাও দিতে পারছেন না কর্তারা। কিন্তু তাতে কী? র্যান্টি বলছিলেন, “গত বছর গোয়া ছেড়ে কলকাতায় আসার কোনও পরিকল্পনা ছিল না আমার। ইস্টবেঙ্গল-মোহনবাগান দু’টো ক্লাবেরই প্রস্তাব ছিল। ইউনাইটেডও প্রস্তাব দিয়েছিল। কিন্তু আমি প্রথমে না করে দিয়েছিলাম। কিন্তু পরে ওরা এমন প্রস্তাব দিল যে ফেরাতে পারিনি। যে ক্লাব আমাকে কলকাতায় নিয়ে আসতে পারে, আমার বিশ্বাস সেই ক্লাবের কর্তারা চাইলে সব কিছু করতে পারে।”
ইউনাইটেডে থাকার পিছনে অবশ্য আরও একটা বড় উদ্দেশ্য লুকিয়ে আছে র্যান্টি। প্রথমে বলতে না চাইলেও, একটু জোর করতেই র্যান্টি নিজেই রহস্যভেদ করলেন, “পাঁচ বছর কলকাতা ছেড়ে কোথাও যাব না। বিদেশের কোনও ক্লাব থেকে প্রস্তাব পেলে আলাদা কথা।” আসলে র্যান্টি এই সিদ্ধান্তের সঙ্গে তাঁর পরিবারের সুখ-স্বাচ্ছন্দও ওতপ্রোত ভাবে জড়িয়ে। তাঁর কথায়, “কলকাতাকে আমার স্ত্রী ভালবেসে ফেলেছে। ছেলেমেয়েদের এখানকার স্কুলে ভর্তি করেছি। এখন অন্য কোথাও গেলে ওদের অসুবিধা হবে।” তা হলে কি ইউনাইটেডেই পাঁচ বছর খেলবেন? র্যান্টি জবাব, “ইউনাইটেডের সঙ্গে আমার এক বছরের চুক্তি। পরের বছর কলকাতার অন্য কোনও ক্লাব থেকে প্রস্তাব পেলে নিশ্চয়ই ভেবে দেখব। আর ইউনাইটেড ধরে রাখতে পারলে রাখবে!”
নিজের আগামী মরসুমের ফুটবল-ভবিষ্যৎ নিয়ে র্যান্টি ধোঁয়াশা রেখে দিলেও, নাইজিরিয়ার জাতীয় দলে তাঁর অভিষেক করা নিয়ে আর কোনও সংশয় রাখলেন না। র্যান্টি কথায়, “নভেম্বরেই জাতীয় দলে অভিষেক হচ্ছে আমার। কোচ স্টিভন কেশি আমাকে ফোন করে জানিয়েছেন। শেষ বার নাইজিরিয়ায় আমার প্র্যাক্টিস দেখে উনি দারুণ খুশি হয়েছিলেন। কিন্তু প্রথম দল আগেই বেছে নেওয়ায়, সুযোগ হয়নি। কিন্তু মনে হচ্ছে আর বেশি দিন অপেক্ষা করতে হবে না আমাকে।”
ইউনাইটেড কোচ এলকো সাতৌরিও নিজের বারো বছরের ফুটবল কেরিয়ারে প্রথমবার এ রকম কোনও জাঁতাকলে পড়েছেন। তবু তিনি অনড়, “মধ্যপ্রাচ্য কোনও ক্লাবের কোচ হলে এক বারের জন্য ভাবতাম না। মরসুম শেষ হলেই ছেড়ে দিতাম। কিন্তু এখানকার ব্যাপারটাই আলাদা। এখানে এত অল্প সময়ে যে সম্মান পেয়েছি, তা কোনও দিন ভুলব না। এই পরিস্থিতিতে ফুটবলারদের মোটিভেট করা খুব কঠিন। কিন্তু আমি গোটা ব্যাপারটাকে একটা চ্যালেঞ্জ হিসেবেই নিয়েছি। তবে আমার বিশ্বাস আই লিগ শুরুর আগে সব সমস্যা মিটে যাবে। না হলে অন্য কিছু ভাবতে হবে।” |