ভারতীয় ফুটবলের ইতিহাসে নজিরবিহীন ঘটনা ঘটে গেল মঙ্গলবার।
ক্লাব বাঁচাতে কোনও রকম অগ্রিম ছাড়াই মাঠে নেমে পড়ছেন ইউনাইটেড স্পোর্টসের কোচ ও ফুটবলাররা। আজ বুধবার থেকেই। কল্যাণী স্টেডিয়ামে শুরু হচ্ছে গত আই লিগের চার নম্বর ক্লাবের অনুশীলন। এই অভিনব সিদ্ধান্ত নিতে মুখ্য ভূমিকা নিলেন সেই ফুটবলাররাই, যাঁদের কাছে আই লিগের অন্য ক্লাবের লক্ষ লক্ষ টাকার প্রস্তাব আছে।
গত বছরের বকেয়া না পেয়ে মোহনবাগান ও চার্চিল ব্রাদার্সের বেশ কয়েক জন ফুটবলার কয়েক দিন আগে ফেডারেশনে অভিযোগ করেছেন। দলবদলের বাজারে টাকা নিয়ে দর কষাকষি প্রতি মরসুমেই ঘটে। সেখানেই কেন এই উলট পুরাণ? তা-ও আবার পেশাদারিত্বের যুগে? কিসের টানে ফিরে এল ছয়-সাত-আট দশকের এই আবেগ? ডেম্পো, পুণে এফ সি, মোহনবাগান যাঁর পিছনে এ বার পৌনে এক কোটি টাকার প্রস্তাব নিয়ে এখনও দৌড়চ্ছে সেই লালকমল ভৌমিকের যুক্তি, “টাকাই সব নয়। সম্পর্কটাই সব থেকে বড়। ক্লাবের সমস্যা হতেই পারে। এত দিন তো খেলেছি কোনও সমস্যা হয়নি। আমি জানি টাকা জোগাড় করতে পারলে ক্লাব ঠিক দিয়ে দেবে। ক্লাবটা আগে বাঁচাই।”
ইউনাইটেডকে বাঁচাতে কর্তাদের সঙ্গে স্পনসরের খোঁজে নেমেছেন দেশের অন্যতম সেরা মিডিও লালকমলও। তাঁর সঙ্গী অধিনায়ক দীপক মণ্ডলও। দীপক বলছিলেন, “কোচ এসে গিয়েছেন। অন্য সব দল অনুশীলনে নেমে পড়েছে। এখন আগে অনুশীলনে নামি। তার পর টাকার কথা ভাবা যাবে। কোচও সেটাই চাইছেন।” আর মহমেডান যাঁকে দলে নেওয়ার জন্য মরিয়া, সেই সংগ্রাম মুখোপাধ্যায়ের মন্তব্য, “সমস্যা আজ না হোক কাল মিটে যাবে। কিন্তু অনুশীলনে না নামলে পিছিয়ে পড়ব।” |
শহরে র্যান্টি। ছবি: শঙ্কর নাগ দাস |
ইউনাইটেড কর্তারা কার্যত ঠিকই করে ফেলেছিলেন, আর্থিক সমস্যা না মিটলে তাঁরা দল তুলে দেবেন। কিন্তু এ দিনের ঘটনায় তাঁরা আপ্লুত। “ফুটবলাররা যে ভাবে আমাদের পাশে দাঁড়িয়েছে সেটা শুধু ময়দানে নয়, ভারতীয় ফুটবলে কখনও হয়নি,” বলছিলেন ইউনাইটেড কর্তা নবাব ভট্টাচার্য। এ দিন ফুটবলারদের সিদ্ধান্তের পর রাতেই মাঠ ও ড্রেসিংরুম ঠিক করতে কল্যাণীতে কোচকে নিয়ে যান কর্তারা। এক কর্তা ময়দান মার্কেটে গিয়ে বল ও জার্সির ব্যবস্থা করেন।
এ দিন বারাসাত স্টেডিয়ামে দলের জুনিয়র ফুটবলারদের ম্যাচ দেখতে এসে দীপক মণ্ডল, সংগ্রাম মুখোপাধ্যায়, লালকমল ভৌমিক, মহম্মদ রফিকরা আলোচনায় বসেন কোচ এলকোর সঙ্গে। সেখানেই সিদ্ধান্ত হয়, অনুশীলনে নেমে পড়ার। পাশাপাশি সিনিয়র ফুটবলাররা কর্তাদের বলেন, “র্যান্টি মার্টিন্সকে যে কোনও মূল্যে রেখে দিন।”
কিন্তু কী করবেন এ দিনই শহরে আসা দেশের সবথেকে হাই প্রোফাইল বিদেশি স্ট্রাইকার? “আমি ইউনাইটেডে খেলব বলেই কলকাতায় এসেছি। মোহনবাগান বা অন্য ক্লাবের কথা ভাবতে যাব কেন?” বলে দিয়েছেন আই লিগের গতবারের সর্বোচ্চ গোলদাতা। আজ ছেলে-মেয়েদের স্কুলে ভর্তি করে ইউনাইটেডের অনুশীলনে আসার কথা র্যান্টির। সেখানে কোচের সঙ্গে কথা বলবেন তিনি। কিন্তু ক্লাবের এই আর্থিক অবস্থার কথা জেনেও কি তিনি অন্যদের মতো অপেক্ষা করবেন? অগ্রিম নিয়ে চুক্তিবদ্ধ র্যান্টি বলেছেন, “সারা বিশ্বেই আর্থিক মন্দা চলছে। আমার দেশে ফুটবলেও একই সমস্যা। কোচের সঙ্গে আমার যোগাযোগ আছে।”
কর্তাদের ধারণা, বৃহস্পতিবার থেকেই অন্যদের সঙ্গে অনুশীলনে নেমে পড়বেন নাইজিরিয়ান গোলমেশিন। যদিও শোনা যাচ্ছে, র্যান্টির এজেন্ট তাঁকে মুম্বইয়ের একটি ক্লাবে খেলানোর জন্য উঠেপড়ে লেগেছেন।
|