রাখে কপাল কোভারম্যান্সকে মারে কে

ভারত ১ (ইসাক আত্মঘাতী)
পাকিস্তান ০
হাসান বসিরের পাশ দিয়ে একে একে ধীর পায়ে শিবিরে ফিরছেন পাক ফুটবলাররা। হতমান, বিমর্ষ। মাঠের একপাশে এমন ভাবে উপুড় হয়ে শুয়ে আছেন ডেনমার্ক-জাত পাক স্ট্রাইকার, বুঝতে অসুবিধা হচ্ছিল না কষ্টটা কোথায়।
ইতিউতি গ্যালারিতে উড়ছে ভারতের তেরঙ্গা পতাকা। ওড়াচ্ছিলেন দশরথ স্টেডিয়ামে খেলা দেখতে আসা দর্শকরা। যেমন কার্গিলের সেনা ছাউনিতে উড়িয়ে ছিলেন সুনীল ছেত্রীর বাবা কে বি ছেত্রী। চোদ্দো বছর আগে।
কিন্তু সুনীলরা রবিবার রাতে সাফ কাপের গ্রুপ লিগে নিজেদের ‘কৃতিত্বে’ পাকিস্তানকে হারাতে পারলেন না। হাইভোল্টেজ ম্যাচে আত্মঘাতী গোলের লজ্জা নিয়েই ফিরতে হল পাকিস্তানকে। বসিরদের তো আফশোস হবেই।
চিরন্তন লড়াইয়ে নিজেরাই আত্মঘাতী হলে তাকে বাঁচাবে কে? এবং সেটা যদি হয় শুরুতেই।
ডান দিক থেকে নিরীহ একটা বল তুলেছিলেন নির্মল ছেত্রী। পাকিস্তান বক্সে তখন তাদের নিজেদের দুই স্টপার ছাড়া কেউ নেই। তা সত্ত্বেও তড়িঘড়ি বল ক্লিয়ার করতে গিয়ে দুই স্টপার কামরান আর সমর ইসাকের ভুল বোঝাবুঝি হল। কামরানের মাথা টপকে বল ইসাকের পায়ে লেগে গোলে ঢুকে যায়। গোলকিপার ইউসুফ বাট বল ধরতে এগিয়ে এসেছিলেন তখন।
এ রকম আবেগ এবং উত্তেজনায় টইটম্বুর মনস্তাত্বিক ফুটবল-যুদ্ধে এ ধরনের ভুল করলে শাস্তি পেতেই হয়। পাকিস্তানও পেল। ফুলহ্যামে খেলা জইস রহমান থেকে কামরান খান-- মাচের পর রীতিমতো কান্নাভেজা গলায় ভারতীয় সাংবাদিকদের ডেকে ডেকে বলছিলেন, “কত রেজাল্ট হতে পারত আপনারাই বলুন। ৬-১, ৭-১।”
পাক দাবি বাড়াবাড়ি। সীমান্তে গোলাগুলি চলার পর যেমন দু’দেশের তরফে কুটনৈতিক প্রেস ব্রিফিং করা হয় তেমনই শোনাচ্ছিল শাহাজাদ আনোয়ারের ছেলেদের কথাগুলো।

পাকিস্তানকে হারিয়ে কোচের সঙ্গে মেহতাব-জুয়েলদের উল্লাস। রবিবার। ছবি: ফেসবুক
তবে এটাও ঘটনা ম্যাচটা যদি প্রথম পয়ঁতাল্লিশ মিনিটে শেষ হয়ে যেত, তা হলে লেখাই যেত, ‘খেলল পাকিস্তান, জিতল ভারত।’ কিন্তু পরের অর্ধ দেখার পর সেটা বলা যাচ্ছে না। বরং লিখতে হচ্ছে, ‘সুনীল তুমি হ্যাটট্রিকটা করতে পারলে, আত্মঘাতী গোলে জেতার কাঁটাটা এমন ভাবে বিঁধত না।’
খেলা শুরুর আগে দু’দেশের জাতীয় সঙ্গীত যখন বাজছে তখন দেখলাম প্রতিটি পাক ফুটবলার ডান হাত দিয়ে বুকের কলজে ছুঁয়ে আছেন। কিন্তু সাউন্ড সিস্টেমে যখন বেজে উঠল ‘জন গণ মন’ তখন সুনীল-মেহতাবরা অনেকেই চোখ বন্ধ করে গলা মেলালেন। ব্যতিক্রম শুধু রহিম নবি। কোভারম্যান্সের ব্রিগেডের মধ্যে তিনিই একমাত্র ফুটবলার যাঁর ডান-হাত ছুঁয়ে ছিল নিজের হৃদ্পিন্ড।
টিম লিস্টে সেই নবিই রিজার্ভ বেঞ্চে? ইউরো পাক জয়ী দলের প্রাক্তন ফুটবলার, হাইপ্রোফাইল ডাচ কোচও তা হলে অঙ্কে ভুল করেন? ডান দিকে নির্মল ছেত্রী। বাঁ দিকে তা বলে মোহনরাজ? ক্লাব ফুটবলে যাঁর একমাত্র অবদান নিজের বক্সের আশেপাশে বিশ্রী ফাউল করে বিপক্ষকে ‘মোহনভোগ’ তুলে দেওয়া।
খেলা শুরুর কিছুক্ষণের মধ্যে পিছিয়ে পড়ার পর দক্ষিণের সেই মোহনরাজকেই ‘খনি’ হিসাবে বেছে নিল পাক টিম। পাকিস্তান দল নামিয়েছিল ৪-১-৪-১ ফর্মেশনে। সামনে বসির। বুদ্ধিমান ছয় ফুটের কাছাকাছি উচ্চতার ছেলেটিই দিলেন পুরো টিমকে ‘মোহন-রাজের’ খোঁজ। জেগে উঠল পাকিস্তান। বাঁ দিক থেকে তৈরি হওয়া ঝড় সামলাতে টিম ভারত তখন নিজেদের সীমানা সামলাতে হিমশিম খাচ্ছে। ছোট ছোট পাস, কখনও ত্রিকোণ পাস বা লম্বা দৌড়ের পাক হানায় তখন ঘুম ছুটেছে গতবারের সাফ চ্যাম্পিয়নদের। গোলে সুব্রত পাল না থাকলে তখনই ম্যাচটা পাকিস্তানের পক্ষে ৩-১ হয়ে যায়। বসিরের একটা শট পোস্টে লেগে যখন ফিরল তখন কোভারমান্স ব্রিগেড রীতিমতো কাঁপছে। সুব্রত পাল অনবদ্য তিনটে গোল সেভ করলেন। রঙিন মশাল হলেন অর্ণব মণ্ডলও। কত বল যে এই বঙ্গসন্তান ক্লিয়ার করলেন! মেহতাব হোসেন এ দিন ম্যান অব দ্য ম্যাচ হলেন। ২০০৫ করাচি সাফের পর আবার। কিন্তু তা পেতে পারতেন অর্ণবও। মেহতাব বলছিলেন, “ইনশাল্লাহ। অসাধারণ অনুভূতি হচ্ছে। পাকিস্তানের বিরুদ্ধে আমি ম্যাচের সেরা। চাপটা কেটে গেল।”
ডাচ কোচের ঘুম ভাঙল ৬৪ মিনিটে। পূর্ণিমার চাঁদও যেন আলো ছড়াতে শুরু করল। দুটো পরিবর্তন করলেন কোভারম্যান্স। মোহনরাজকে বসিয়ে নামালেন নবিকে। নামানো হল অলউইনকে বসিয়ে টগবগে জুয়েল রাজাকেও। পালটা আঘাত হানতে শুরু করলেন সুনীল-লেনিরা। হাসান বসির আটকে যেতেই পাকিস্তান দিশাহারা। সুনীল সহজ সুযোগগুলো কাজে লাগাতে পারলে ঢাকার গতবারের সাফের ফলের পুনরাবৃত্তি হতেই পারত।
সাংবাদিক সম্মলনে এসে তাই ডাচ কোচকে ঝাঁঝালো প্রশ্নের মুখে পড়তে হল। মোহনরাজকে নামানোর জন্য কি আপনার কোনও আফসোস আছে? “না, কারণ ও পজিটিভ লেফটব্যাক। সবে টিমে সুযোগ পেয়েছে। নতুন ছেলে। নবি নামার পর খুব ভাল খেলেছে। তবে সুব্রত পাল আউটস্ট্যান্ডিং।”
কোভারম্যান্স অবশ্য স্বীকার করে নিয়েছেন তাঁর টিম ভাল খেলেনি। “দলের খেলায় আমি খুশি নই। তবে নবি-জুয়েল নামার পর খেলাটা আমাদের মুঠোয় চলে এসেছিল। আমি ছেলেদের যে সিডি দেখিয়েছিলাম তার চেয়ে অনেক ভাল খেলেছে পাকিস্তান। কিন্তু ম্যাচের ফলটাই আসল। গ্রুপের সবথেকে টাফ ম্যাচটা পেরিয়ে গেলাম।” জাতীয় কোচের গলায় অনেকটাই স্বস্তি।
তীব্র চাপ থেকে বেরিয়ে এসে পাকিস্তানকে হারানোর পর পুরো টিম ইন্ডিয়াতেও স্বস্তির মুক্ত বাতাস। তা সত্ত্বেও কোভারম্যান্সের রাতের ঘুম কাড়বেই মোহনরাজ-জেজের-অলউইনদের বিশ্রী ফর্ম। এবং অবশ্যই সেট পিসের ব্যর্থতা। শনিবার ক্লোজড ডোর প্র্যাকটিসে ডাচ কোচের প্রধান লক্ষ্যই ছিল সেট পিসের উন্নতি। কিন্তু কোথায় কী? টিম সূত্রের খবর কোভারম্যান্স কোনও ম্যাচের আগে নিজেই সিডি জোগাড় করেন। গত দু’দিনে পাক টিমের পাঁচটি ম্যাচের নির্বাচিত অংশ টিম-ক্লাসে দেখিয়েছিলেন তিনি। কিন্তু কেন যে তিনি সেট পিস অনুশীলনের সময় পাক টিমের উচ্চতার কথা মাথায় রাখেননি, সেটাই আশ্চর্যের। মেহতাবের তোলা গোটা আটেক কর্নার তাই কোনও কাজে লাগেনি।
পাক ম্যাচ জেতার পর সামনে এ বার ‘মিশন বাংলাদেশ’। নেহরু কাপের পর নেপাল-- কোভারমান্সের ভাগ্য যেভাবে শুরু থকেই সঙ্গ দিতে শুরু করেছে তাতে ভারত গ্রুপ চ্যাম্পিয়ন হয়ে শেষ চারে যেতেই পরে।
রাখে কপাল মারে কে?

ভারত: সুব্রত, নির্মল, অর্ণব, গৌরমাঙ্গী, মোহনরাজ (নবি), ফ্রান্সিস, মেহতাব, লেনি, জেজে, অলউইন (জুয়েল), সুনীল।

পুরনো খবর:




First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.