স্বাধীনতার সময় খাদি শিল্পের খ্যাতির কথা অজানা নয়। মাঝে সময়ের হাত ধরে কখন যেন পোশাকের ক্ষেত্রে খাদি চলে গিয়েছিল পিছনের সারিতে। পরিবর্তনই সময়ের ধর্ম। তাই এখন আধুনিকতার ছোঁয়ায় খাদি শিল্পে দিশা দেখছে ইসলামপুর।
ইসলামপুরের খাদি শিল্পীদের মতে, খাদি শিল্পে ব্যবসার প্রসারের অন্যতম কারণ আধুনিক যন্ত্রের ব্যবহার। আধুনিকতার ছোঁয়া লেগে খাদি শিল্প নতুন করে বাঁচার রসদ খুঁজে পেয়েছে। সেই সঙ্গে সরকারি প্রকল্প ‘ন্যাচারাল ফাইবার মিশনে’ সিল্ক ও কটনকে যুক্ত করার ফলে খাদি শিল্পকে ঘিরে তৈরি হয়েছে নতুন সম্ভাবনাও।
সিল্ক ও খাদির থান কাটতে কাঁচির বদলে ব্যবহার হচ্ছে যন্ত্র। খুব দ্রুত এক সঙ্গে ৫০টি থান থেকে পোশাক উপযোগী কাপড় কাটা হচ্ছে। ফলে পোশাক তৈরিতে সময় লাগছে আগের থেকে অনেক কম। যন্ত্রে কাজের সূক্ষ্মতাও বেড়েছে। আধুনিক পোশাকের সঙ্গে পাল্লা দিতে খাদি শিল্পে কম্পিউটারে তৈরি হচ্ছে আধুনিক নকশা।
রাজ্যের মানচিত্রে খাদি শিল্পের দিক থেকে ইসলামপুরের বিশেষ পরিচিতি রয়েছে। সেই টানেই ইসলামপুরের বিভিন্ন খাদি প্রতিষ্ঠানে ক্রেতারা ভিড় করলে তাদের বসার জন্য পেতে দেওয়া হত চট বা মাদুর। সেখানে এখন কাঁচ ঠেলে ঢুকতে হচ্ছে। ঝাঁ চকচকে আলো, বাতানুকূল ঘর-ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে আধুনিকতার ছোঁয়া। খাদি ব্যবসায়ীদের কথায়, “এক সময়ে ভেবেছিলাম বংশ পরম্পরায় চলে আসা এই ব্যবসা থেকে হাত গুটিয়ে নিতে হবে। কিন্তু এখন মনে হচ্ছে আমাদের ব্যবসার একটা বড় সম্ভাবনা রয়েছে। সেটা হলে আখেরে লাভ হবে কাটুনি ও শিল্পীদেরও।” তাঁদের দাবি, জেলার অভিজাতশ্রেণি থেকে বিভিন্ন জেলার অনেকে এখন দোকানে আসছেন। তাঁদের কথা মাথায় রেখে প্রতিষ্ঠানগুলি আধুনিক হয়েছে। আগের থেকে খাদির চাহিদাও বেড়েছে। |
ক্রেতাদের ভিড়ে নয়, এই শিল্পের সম্ভাবনাও উজ্জ্বল হয়েছে সরকারি বেশ কিছু প্রকল্পের হাত ধরেও। ‘ন্যাচারাল ফাইবার মিশন’ প্রকল্পে নিয়ে যুক্ত করা হয়েছে সিল্ক ও কটনকে। পশ্চিমবঙ্গ খাদি ও গ্রামীন শিল্প পর্ষদের মুর্শিদাবাদ জেলা আধিকারিক বিশ্বজিৎ সরকার বলেন, “ন্যাচারাল ফাইবার মিশন প্রকল্পে সিল্ক ও কটনকে যুক্ত করার ফলে খাদি শিল্পে সম্ভাবনা দেখা দিয়েছে। সরকারি সাহায্যে কাটুনি ও শিল্পীদের দেওয়া হচ্ছে প্রশিক্ষণ। সেই সঙ্গে তাঁদের উপকরণও সরবরাহ করা হচ্ছে।” বিশ্বজিৎবাবু বলেন, “সরকারি ভাবে বিভিন্ন এলাকায় মার্ট তৈরি করে খাদির পণ্য উৎপাদন এবং বিপণন কেন্দ্র গড়ে তোলা হবে। তৈরি হবে খাদি শিল্পের প্রিন্টিং প্রেসও।”
ইসলামপুর এলাকা জুড়ে রয়েছে খাদি শিল্পের বেশ কিছু সমিতি। এমনই এক সমিতি পল্লি উন্নয়ন সংস্থার সম্পাদক সাক্ষীগোপাল ভদ্র বলেন, “আগের তুলনায় মানুষের মধ্যে এখন খাদির পোশাকের চাহিদা অনেকটাই বেড়েছে। শিলিগুড়ি ও রায়গঞ্জে আমাদের দুটি প্রতিষ্ঠানেও খুব ভাল বিক্রি হচ্ছে।”
খাদির পোশাক কিনতে নদিয়ার করিমপুর থেকে ইসলামপুরে এসেছেন অনিমেশ মণ্ডল। তিনি বলেন, “খাদি শিল্পের দিক থেকে ইসলামপুরের পরিচিতি রয়েছে। সেই টানেই সিল্ক ও খাদির পোশাক কিনতে এখানে এসেছি। তবে বিভিন্ন জায়গায় সরকারি স্তরে বিপণন কেন্দ্র গড়ে তুলে ইসলামপুরের খাদি ও সিল্ক বিক্রির বন্দোবস্ত হলে ভাল হয়।” সম্প্রতি ডোমকলের আইসি অরিজিৎ দাশগুপ্তের আত্মীয়পরিজন বেড়াতে এসেছিলেন কলকাতা থেকে। অরিজিৎবাবু বলেন, “ইসলামপুরের এলে আমাকে এখানকার খাদির দোকানে নিয়ে যেতে হয়।” |
পুরনো খবর: খাদি নিয়ে সচেতনতা |