শুক্রবার সংসদে প্রকট হয়ে উঠল অর্থনীতির দৈন্যদশা। সরকারের এখন যা অবস্থা, তাতে না-আছে অর্থ না-আছে নীতি। অর্থ দফতর এক রকম দিশাহারা। সমস্যাগুলিকে মাঝেমধ্যে ঠেকিয়ে রাখার চেষ্টা অবশ্য করা হচ্ছে। তাতে এক-দু’দিনের জন্য ফল পাওয়া গেলেও পাকাপাকি সমাধান যে সরকারের নিয়ন্ত্রণে নেই, তার ইঙ্গিত মিলেছে মনমোহন, চিদম্বরম এবং সুব্বারাওয়ের বিভিন্ন বক্তব্য থেকে।
আকাশই এখন প্রধানমন্ত্রীর প্রধান ভরসা, অর্থাৎ কৃষি যদি শস্যশ্যামলা হয়ে শিল্পে সমৃদ্ধি আনতে পারে। সরকারের আশা ছিল, চলতি আর্থিক বছরে অর্থনীতি এগোবে ৫.৫ শতাংশ হারে। প্রথম তিন মাসে বৃদ্ধি হয়েছে মাত্র ৪.৪ শতাংশ। আগের বছরের একই সময়ের তুলনায় ১ শতাংশ কম। কৃষির সুফল পেতে আরও কিছুটা সময় লাগবে। অর্থাৎ দ্বিতীয় ত্রৈমাসিকেও অবস্থার উন্নতি হওয়ার সম্ভাবনা কম। সুতরাং শেয়ার বাজার দু’দিন ওঠায় এবং টাকার দাম সাময়িক কিছুটা বাড়ায় উৎফুল্ল হওয়ার কোনও কারণ নেই।
মার্কিন অর্থনীতির উন্নতি দু’ভাবে আঘাত হেনেছে আমাদের কেন্দ্রীয় কোষাগারে। ভারতের উন্নয়ন সঙ্কুচিত হওয়ায় এ দেশ থেকে এরই মধ্যে লগ্নি প্রত্যাহার করেছে বেশ কিছু বিদেশি আর্থিক সংস্থা। অন্য দিকে মার্কিন অর্থনীতি শক্তিশালী হয়ে ওঠায় সে দেশে আর্থিক ত্রাণ কমে আসার সম্ভাবনা দেখা দিয়েছে। তা যদি হয়, তবে ভারতে ডলার প্রবাহ কমবে এটি ধরেই নেওয়া হচ্ছে। ইউরোপীয় অর্থনীতিতে প্রাণ ফিরলে কিন্তু ব্যাপারটা অন্য রকম হত। |
ইউরোপীয় দেশগুলি একটু চাঙ্গা হলে ভারতের রফতানি বেড়ে ওঠার প্রবল সম্ভাবনা থাকত। বাস্তবে তা কিন্তু এখনও হয়নি। রফতানি বাড়াতে না-পারলে চেষ্টা করতে হবে আমদানি নিয়ন্ত্রণ করতে। সোনা আমদানিতে লাগাম পরিয়ে কাজও হয়েছে কিছুটা। কিন্তু জ্বালানি তেল আমদানির খরচ বেড়েই চলেছে। এই পরিস্থিতিতে দেশের মধ্যে পেট্রোপণ্যের ব্যবহারে রেশনিংয়ের মাধ্যমে কেন নিয়ন্ত্রণ আনা হচ্ছে না, সেই প্রশ্ন এখন অনেকেরই মনে। আগুনে ঘি ঢেলেছে সিরিয়া এবং ইরাকের সমস্যা। ফলে ভারতের এখন নুন আনতে পান্তা ফুরনোর অবস্থা।
খাদ্য সুরক্ষা বিল গরিবের জন্য ভাল হলেও সময়োচিত হয়নি বলে মনে করছেন অনেকেই। অর্থনীতির চূড়ান্ত খারাপ অবস্থায় সরকারের এত বড় ভর্তুকির দায়িত্ব নেওয়াকে ভাল চোখে দেখছে না বিদেশি লগ্নিকারীরা। মুখে ভর্তুকি কমানোর কথা এবং আর্থিক সংস্কারের কথা বললেও বাস্তবে এত বড় ভর্তুকি ভারতের ক্রেডিট রেটিং কমাতে পারে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে। তা যদি হয় তবে তা বড় আঘাত হানবে বাজারে।
মনমোহন সিংহ অবশ্য সংসদকে আশ্বস্ত করেছেন যে, আর্থিক সংস্কার থেকে পিছিয়ে আসার কোনও প্রশ্ন নেই। মনে রাখতে হবে, খাদ্য সুরক্ষা বিলের বিপুল ব্যয়ভার বহন করতে হবে আমজনতাকেই। এতে চাপতে পারে নতুন করের বোঝা। প্রত্যক্ষ করবিধি বিল এখনকার মতো প্রত্যাহার করা হয়েছে। গরিবের জন্য অর্থসংস্থান করতে, না অতি বড়লোকদের অতিরিক্ত করের বোঝা পুনর্বিবেচনা করতে এই প্রশ্ন এখন অনেকেরই মনে।
সংসদে পাশ হওয়ার পর দ্রুত রাষ্ট্রপতির স্বাক্ষর পাওয়ায় কোম্পানিজ বিল এরই মধ্যে আইনে পরিণত হয়েছে। কার্যকর হবে সরকারি গেজেটে প্রকাশিত হওয়ার পর। ১৯৫৬ সালের কোম্পানি আইন এ বার জায়গা করে দেবে কোম্পানি আইন ২০১৩-কে।
দেশের অর্থনীতি ভাল রকম ঝিমিয়ে পড়লেও পৌষ মাস চলছে রফতানি প্রধান কোম্পানিগুলির কাছে। এই তালিকায় উপরের দিকে আছে টিসিএস, ইনফোসিস, উইপ্রো, এইচসিএল, বজাজ অটো, লুপিন, সিপ্লা, আইটিসি, টেক মহীন্দ্রা ইত্যাদি। বাজার দরের সর্বকালীন রেকর্ড গড়েছে টিসিএস। কোম্পানির ১ টাকার শেয়ার শুক্রবার হাতবদল হয়েছে ২০৫০ টাকা পর্যন্ত দামে।
আগের দু’টি অর্থবর্ষে বছরের শেষ দিকে বাজারে এলেও এ বার কিন্তু এরই মধ্যে বাজারে এসেছে করমুক্ত বন্ড। রাষ্ট্রায়ত্ত রুরাল ইলেকট্রিফিকেশন করপোরেশন (রেটিং ‘এএএ’) আকর্ষণীয় সুদ-সহ এ বার প্রথম এসেছে করমুক্ত বন্ড নিয়ে। ব্যক্তিগত লগ্নিকারীদের ১০ লক্ষ টাকা পর্যন্ত লগ্নির উপর সুদ দেওয়া হবে ৮.৭১ শতাংশ হারে, যা করমুক্ত পিপিএফ অ্যাকাউন্টের সুদ থেকেও এক চুল বেশি। পিপিএফ অ্যাকাউন্টে কিন্তু বছরে ১ লক্ষ টাকার বেশি জমানো যায় না। মনে রাখতে হবে করমুক্ত ৮.৭১ শতাংশ করযোগ্য ১২.৬২ শতাংশের সমান (৩০.৯ শতাংশ করের ক্ষেত্রে)। ৩৫০০ কোটি টাকার এই ইস্যুর প্রথম দিনেই আবেদন জমা পড়েছে ১৮২৫ কোটি টাকার। সঙ্গের সারণিতে দেওয়া হল এই ইস্যুর প্রয়োজনীয় সব তথ্য।
করমুক্ত বন্ড ইস্যু করার অনুমতি পেয়েছে আরও ১২টি কোম্পানি। বাজার থেকে এই খাতে মোট এ বছর সংগ্রহ করা যাবে ৪৮০০০ কোটি টাকা। |