ভাল বর্ষাই হাল ফেরাতে
পারে দেশের অর্থনীতির
যেন ১০ গোল হজমের পর ১ গোল শোধ করার শান্তি। বাজারের পরিস্থিতি অনেকটা এই রকম। শেয়ার ও টাকার দাম একনাগাড়ে পড়ার পর সপ্তাহ শেষে কিঞ্চিৎ স্বস্তি। এর মানে এই নয়, নিম্নচাপ পাকাপাকি সরে গিয়েছে। টাকার পতন রোধে চিদম্বরম ও সুব্বারাও যে-একগুচ্ছ পদক্ষেপ করেছেন, তা কিছুটা হলেও কাজ করেছে ডলারের ঊর্ধ্বগতি রোধে। এর প্রভাব পড়েছে বাজারেও। সপ্তাহের শেষ দু’দিনে সেনসেক্স বেড়েছে ৬১৩ পয়েন্ট। ফের অতিক্রম করেছে ১৮,৫০০-এর মাত্রা। যে সব পদক্ষেপে টাকার দাম আবার ঊর্ধ্বমুখী হয়েছে, তার সব কিন্তু শিল্প-সহায়ক নয়। বাজারে টাকার জোগান কমেছে। বাড়ছে সুদের হার।
সূচকের অবস্থান দেখে ততটা আতঙ্কিত না-হলেও নিজের পোর্টফোলিও-র উপর চোখ রাখলে অনেকেরই মন খারাপ হবে। সূচককে ধরে রেখেছে মূলত তথ্যপ্রযুক্তি, ওষুধ ও ভোগ্যপণ্য সংস্থার শেয়ারগুলি। সপ্তাহ শেষে বেড়েছে কয়েকটি ধাতু শেয়ারও। অন্যদের অবস্থা বেশ খারাপ। বিশেষ করে ব্যাঙ্কের। এক দিকে বন্ডের দাম কমায় বড় রকমের লোকসান, অন্য দিকে অনুৎপাদক সম্পদ (এনপিএ) বৃদ্ধি বেশ দুর্বল করে তুলেছে ব্যাঙ্ক শেয়ারগুলিকে। স্টেট ব্যাঙ্ক ও অ্যাক্সিস ব্যাঙ্কের পতন চোখে পড়ার মতো। অত্যন্ত করুণ অবস্থা মিড ক্যাপ ও স্মল ক্যাপ শেয়ারগুলির।
ডলারের দর বৃদ্ধি, বাজারের অনিশ্চিত ভবিষ্যৎ ও সোনা আমদানিতে নানা বিধিনিষেধ আরোপিত হওয়ায় সোনার দাম আবার তুঙ্গে। কিছু দিন আগে এই হলুদ ধাতুর দাম অল্প সময়ের জন্য নামা সত্ত্বেও যাঁরা সোনা কেনেননি, তাঁরা এখন হাত কামড়াচ্ছেন। এক দিকে আমদানি হ্রাস, অন্য দিকে উৎসবের মরসুমে চাহিদা বৃদ্ধির সম্ভাবনা থাকায় সোনার দর স্বল্প মেয়াদে খুব একটা নামবে না বলে বিশেষজ্ঞরদের ধারণা। গত দু’তিন বছরে যাঁরা সোনায় লগ্নি করেছেন, তাঁরা এখন বেজায় খুশি।
ব্যাঙ্ক শিল্পের স্বাস্থ্য এখন আদৌ ভাল নয়। দ্রুত বেড়েছে অনুৎপাদক সম্পদের অনুপাত। ২০১১-এর মার্চে এই অনুপাত ছিল ২.৩৬%, তা গত জুনে বেড়ে হয়েছে ৩.৯২%। এটি ঋণ আদায়ের সম্ভাবনা কমার ইঙ্গিত, যা থাবা বসাতে পারে লাভের খাতায়। রিজার্ভ ব্যাঙ্কের কয়েকটি সাম্প্রতিক সিদ্ধান্তের ফলে সুদ বাড়ার সম্ভাবনা সৃষ্টি হয়েছে বিভিন্ন ব্যাঙ্কঋণে। এইচডিএফসি এবং আইসিআইসিআই ব্যাঙ্ক গৃহঋণে সুদ ০.২৫% বাড়িয়েছে। এতে মাসিক কিস্তি বাড়বে। গৃহনির্মাণ ও সংশ্লিষ্ট শিল্পের জন্য যা দুঃসংবাদ। ডলারের দাম এতটা বাড়ায় পেট্রোল ও ডিজেলের মূল্যবৃদ্ধি এখন শুধু সময়ের অপেক্ষা। তা উস্কে দেবে মূল্যবৃদ্ধিকে। এই পরিস্থিতিতে ছোট-মাঝারি মেয়াদি জমায় সুদ বাড়ানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছে কয়েকটি ব্যাঙ্ক।
এরই মধ্যে আশার কথা শুনিয়েছে রিজার্ভ ব্যাঙ্ক। ২০১৩-’১৪ সালে বৈদেশিক মুদ্রার চলতি খাতে লেনদেন ঘাটতি বা ক্যাড ২০১২-’১৩-র তুলনায় কম হবে বলে ব্যাঙ্কের বার্ষিক রিপোর্টে জানানো হয়েছে। ক্যাড বৃদ্ধিই টাকার পতনের প্রধান কারণ। সোনা আমদানিতে লাগাম, অন্যান্য অনাবশ্যক পণ্যের আমদানি হ্রাস এবং রফতানি বৃদ্ধির প্রয়াস এই ঘাটতি কমাতে সাহায্য করবে। কৃষিকে ভিত্তি করে শিল্প ঘুরে দাঁড়ানোর চেষ্টা করবে বলে মনে করা হচ্ছে। এ বারের ভাল বর্ষাকে আশীর্বাদ হিসাবে দেখছেন বিশেষজ্ঞরা। এতে গ্রামীণ অর্থনীতি চাঙ্গা হবে। চাহিদা বাড়বে শিল্পপণ্যের। চলতি বছরের প্রথম কয়েক মাসে পরোক্ষ কর আদায় বেড়েছে। এটি একটি সুখবর।
অর্থাৎ আপাতদৃষ্টিতে যতটা খারাপ মনে হচ্ছে, বাস্তবে পরিস্থিতি হয়তো ততটা খারাপ নয়। মাঝারি থেকে দীর্ঘ মেয়াদে অর্থনীতি ঘুরে দাঁড়াবে, এই বিশ্বাস অনেকেরই আছে। বাজারের দুর্দিনে যখন কোনও আইপিও-র দেখা নেই, ইক্যুইটিতে লগ্নির কথা ভাবতেই চাইছেন না লগ্নিকারীরা, বরং কী করে বেরিয়ে আসবেন তার পরিকল্পনা করছেন সে অবস্থায় বাজার ঘুরে দাঁড়াবে এই বিশ্বাস মাথায় রেখে আইডিবিআই মিউচুয়াল ফান্ড এনেছে ৮০সি ধারায় কর সাশ্রয়কারী (ইএলএসএস) নতুন প্রকল্প। নাম আইডিবিআই ট্যাক্স সেভিং ফান্ড। প্রকল্পের লক-ইন মেয়াদ তিন বছর এবং এই সময়ের মধ্যে অর্থনীতি ঘুরে দাঁড়াবে বলে মনে করেন ফান্ডের উদ্যোক্তারা। ইএলএসএস প্রকল্পে লগ্নি করলে লগ্নিকারীরা যেহেতু গোড়াতেই ১০ থেকে ৩০% করছাড়ের সুযোগ পাচ্ছেন, তাই লোকসানের ঝুঁকি অনেকটাই কমে যাচ্ছে। সংগৃহীত অর্থ দুর্বল বাজারে লগ্নি করা হবে। তাই বেশ কম দামে প্রথম সারির ব্লু-চিপ কেনা সম্ভব হবে বলে মনে করা হচ্ছে। অনেক মিউচুয়াল ফান্ডের পুরনো ইএলএসএস প্রকল্প থাকলেও তারা তা নতুন করে বিপণনের ব্যাপারে এখনও বাজারে নামেনি।
অর্থাৎ এই বাজারে এক রকম ওয়াকওভার পেয়ে গেল আইডিবিআই। ইস্যু বন্ধ হচ্ছে ৩ সেপ্টেম্বর। আর কিছু দিনের মধ্যেই হয়তো বাজারে দেখতে পাব করমুক্ত বন্ডের নতুন ইস্যু। খুব সম্ভবত রুরাল ইলেকট্রিফিকেশন কর্পোরেশন এ বছর প্রথম বাজারে নামবে। সম্প্রতি সরকারি বন্ডের ইল্ড বেড়ে ওঠায় করমুক্ত বন্ডে ৮ শতাংশের বেশি সুদ পাওয়া যেতে পারে বলে মনে করা হচ্ছে। দীর্ঘ মেয়াদে এটি বেশ ভাল লগ্নি। মেয়াদ ১০, ১৫ এবং ২০ বছর। উঁচু হারে করদাতারা প্রস্তুত হতে পারেন এ ধরনের বন্ডে লগ্নি করার জন্য। ঝুঁকি নিতে যাঁরা পিছপা নন, তাঁরা এখন কমা জলের সুযোগ নিয়ে অল্প অল্প করে ব্লু-চিপ তুলে রাখতে পারেন ভবিষ্যতের কথা মাথায় রেখে।

পুরনো খবর:



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.