টানা ছ’দিনই পতনের নতুন নজির গড়ার পর সেই রাস্তায় ছেদ টানল টাকা। শুক্রবার এক লাফে ডলারে তার দাম বাড়ল ১৩৫ পয়সা। এক দিনে দরের উত্থান বিচারে গত দশ বছরে যা দ্বিতীয় সর্বোচ্চ। লেনদেন শেষে ডলার দর দাঁড়ায় ৬৩.২০ টাকায়। বৃহস্পতিবার অর্থমন্ত্রী ও রিজার্ভ ব্যাঙ্কের দেওয়া আশ্বাসই দেওয়ালে পিঠ ঠেকা টাকাকে এ দিন অক্সিজেন জুগিয়েছে বলে বিশেষজ্ঞদের দাবি।
ভারতীয় মুদ্রার হাল ফেরার দিনে ছন্দপতন ঘটেনি শেয়ার বাজারেও। গতকাল ৪০৭ পয়েন্ট ওঠার পর এ দিনও ২০৬.৫০ অঙ্ক উঠেছে সেনসেক্স। দিনের শেষে থিতু হয়েছে ১৮,৫১৯.৪৪ পয়েন্টে। টাকার টানা পতনে ছেদ পড়া এবং ইউরোপের আকাশ থেকে ধীরে ধীরে মন্দার মেঘ সরার ইঙ্গিতই এর কারণ বলে মনে করছেন অনেকে।
টাকা-শেয়ারের এই জোড়া উত্থানের দিনে আশার কথা শুনিয়েছে বার্কলেজ-ও। বহুজাতিক আর্থিক সংস্থাটির মতে, চলতি খাতে বাণিজ্য ঘাটতি কমাতে কেন্দ্র ও শীর্ষ ব্যাঙ্ক যে সমস্ত নীতিতে জোর দিচ্ছে, আখেরে তা ফল দেবে। অনেকটাই কমবে চলতি খাতে ঘাটতি। যে কারণে এই অর্থবর্ষের জন্য এই ঘাটতির পূর্বাভাস ৬,৮০০ কোটি ডলারে নামিয়ে এনেছে তারা। একই সঙ্গে দাবি করেছে, আগামী ৬-১২ মাসের মধ্যেই ডলারের দর নামবে ৬১ টাকাতে। অর্থমন্ত্রী পি চিদম্বরমও বলেছেন, “টাকার পতনে রাশ টানতে রিজার্ভ ব্যাঙ্ক যে সমস্ত পদক্ষেপ করেছে, মূল্যবৃদ্ধি নিয়ন্ত্রণে রাখতেও তা সাহায্য করবে।” শনিবার বিদেশি আর্থিক সংস্থাগুলিকে আশ্বস্ত করতে মুম্বইয়ে তাদের সঙ্গে বৈঠকেও বসতে পারেন তিনি। |
বাজারের এক বড় অংশ মনে করে, সকলকে কিছুটা চমকে দিয়ে টাকার এতখানি ঘুরে দাঁড়ানোর পিছনে বড় ভূমিকা রয়েছে আগের দিন অর্থমন্ত্রী ও শীর্ষ ব্যাঙ্কের আশ্বাসের। বৃহস্পতিবার ডলার এক সময় ৬৫ টাকার উপরে উঠে যাওয়ার পর চিদম্বরম বলেছিলেন, টাকা যেখানে গিয়ে ঠেকেছে, তা তার সঠিক মূল্যায়ন নয়। আসলে তার দাম হওয়া উচিত অনেকটাই বেশি। দেশের অর্থনীতি নিয়েও অযথা হতাশা বা আতঙ্কের কিছু নেই বলে দাবি করছিলেন তিনি। আশা প্রকাশ করেছিলেন, দ্বিতীয় ত্রৈমাসিক থেকেই কিছুটা হলেও গতি ফিরতে শুরু করবে বৃদ্ধির চাকায়। জানিয়ে দিয়েছিলেন, যে কোনও মূল্যে রাজকোষ ও চলতি খাতে ঘাটতিকে নির্দিষ্ট লক্ষ্যমাত্রার মধ্যে বেঁধে রাখবেন তাঁরা।
শীর্ষ ব্যাঙ্কের গভর্নর ডি সুব্বারাওয়েরও আশ্বাস ছিল, টাকার দর পড়লেও পরিস্থিতি সামলানোর মতো বিদেশি মুদ্রা মজুত রয়েছে দেশের ভাঁড়ারে। মূলত এই দুই আশ্বাসে ভর করেই এ দিন উঠেছে টাকা। অনেকে আবার মনে করেছেন, ইতিমধ্যেই তলানি ছুঁয়ে ফেলা টাকা আর তেমন পড়বে না।
টাকার মুখ তোলা এ দিন টেনে তুলেছে বাজারকেও। এই উত্থানে ইন্ধন জুগিয়েছে ইউরোপ নিয়ে আশার আলো ও জাপান, তাইওয়ানের মতো কিছু এশীয় দেশে শেয়ার বাজারের চাঙ্গা ভাবও। |