পাহাড়ে পর্যটনে এখনই ক্ষতি সাড়ে ১২ কোটি
গোর্খা জনমুক্তি মোর্চার টানা আন্দোলনের জেরে পুজোর ছুটিতে পাহাড়ে যাওয়ার আগ্রহে টান পড়েছে। রাজ্য পর্যটন দফতরের উত্তরবঙ্গের ডেপুটি ডিরেক্টর সুনীল অগ্রবাল বলেছেন, “লাগাতার আন্দোলনের জেরে দার্জিলিঙের পর্যটন ব্যবসা কার্যত মুখ থুবড়ে পড়ছে। অক্টোবরে দার্জিলিং শহর ও তার আশেপাশে পাহাড়ের বিভিন্ন জায়গায় থাকার জন্য প্রায় ১০ কোটি টাকার বুকিং হয়েছিল। আন্দোলনের জেরে সাড়ে ৭ কোটি টাকার বুকিং বাতিল হয়েছে। রেস্তোরাঁ, গাড়ির ব্যবসায় ক্ষতির বহর কমপক্ষে ৫ কোটি টাকা।” সব মিলিয়ে প্রায় ১২ কোটি টাকার বেশিই ক্ষতি ইতিমধ্যেই হয়ে গিয়েছে। পর্যটনের সঙ্গে যুক্ত পাহাড়ের ছোট-বড়-মাঝারি ব্যবসায়ী চরম লোকসানের মুখে পড়েছেন।
সরকারি সূত্রের খবর, প্রায় ৮০ শতাংশ পর্যটক বুকিং বাতিল করেছেন। তবে ওই পর্যটকদের অন্তত ২০ শতাংশ ডুয়ার্সকে গন্তব্য করে নিয়েছেন। কারণ এ বার গোলমালের প্রভাব ডুয়ার্সে পড়েনি। ফলে পুজোর মাসে ডুয়ার্সে পর্যটকদের ঢল নামবে। পর্যটন দফতর সূত্রের খবর, ডুয়ার্সের কোনও পর্যটন কেন্দ্রের হোটেল, অতিথি নিবাস, বাংলো, হোম স্টে কোথাও একটিও ঘর খালি নেই।
তাই দার্জিলিঙের পর্যটন ব্যবসায় যুক্ত গাড়ির ব্যবসায়ী, ‘গাইড’, রেস্তোরাঁ কর্মীদের একাংশ উপার্জনের বিকল্প উপায় খুঁজতে মরিয়া। ইতিমধ্যেই কয়েকশো গাড়ির চালক, রেস্তোরাঁ কর্মী, হোটেল কর্মী শিলিগুড়ি ও ডুয়ার্সে গিয়ে কাজ করছেন।
তবে পাহাড় ছেড়ে ডুয়ার্সে যেতে অনেকে বাধাও পেয়েছেন। তাঁদের অভিযোগ, মোর্চা নেতাদের একাংশ ফতোয়া দিয়েছেন, রোজ নিয়ম করে মিটিং-মিছিলে অংশ নেওয়ার জন্য পাহাড়ে থাকতে হবে। পর্যটন দফতরের এক কর্তা জানান, অন্তত ৫০ জন হোটেল মালিকও পুজোর মরসুমে সমতলে নেমে ব্যবসা করবেন ভেবেছিলেন। কিন্তু পাহাড়ের নেতাদের কেউ কেউ তাঁদেরও কার্যত হুমকি দিয়েছেন বলে অভিযোগ পৌঁছেছে পর্যটন দফতরে। উত্তরবঙ্গ উন্নয়ন মন্ত্রী গৌতম দেব বলেন, “পাহাড়ের মানুষের রুটি-রুজির অধিকারও কেড়ে নেওয়ার চেষ্টা হচ্ছে। পাহাড়ে কাজের সুযোগ নেই বলে কেউ সমতলে গিয়ে কাজ করতেই পারেন। তাতে বাধা দেওয়া হবে কেন? আমরা পুলিশ-প্রশাসনকে ওই অভিযোগ নিয়ে তদন্ত করে ব্যবস্থা নিতে বলেছি।” পুজোর আগে যাতে পাহাড়ের পরিস্থিতি স্বাভাবিক হয়, সে জন্য ফের মোর্চা নেতাদের আন্দোলন তুলে নিয়ে জিটিএ চালানোয় মন দেওয়ার অনুরোধ করেছেন গৌতমবাবু। তিনি বলেন, “এখনও সময় রয়েছে। আন্দোলন তুলে পাহাড়কে স্বাভাবিক রাখলে গত বছরের চেয়েও বেশি পর্যটক আসতে পারেন দার্জিলিঙে।”
অগস্টের গোড়ায় আন্দোলন শুরুর পর থেকে রাজ্য সরকার বারবার আশ্বাস দিচ্ছিল, পরিস্থিতি শীঘ্রই স্বাভাবিক হবে। পর্যটন ব্যবসায় যুক্তরাও সে কথা পর্যটকদের বোঝানোর চেষ্টা করেছেন। তাতে গোড়ার দিকে অল্প-স্বল্প বুকিং বাতিল হয়েছে। কিন্তু সপ্তাহখানেকের মধ্যে অবস্থা বদলে যায়। পরিস্থিতি দেখে অগস্টের ১০ তারিখের মধ্যেই কার্যত সব বিদেশি পর্যটক অক্টোবরের বুকিং বাতিল করেন। বৃহস্পতিবার মোর্চা সভাপতি বিনয় তামাঙ্গ গ্রেফতারের পরে ফের অনির্দিষ্টকালের বন্ধের ডাক দেয় মোর্চা। এর পরে রাতের মধ্যেই বুকিং বাতিলের হিড়িক পড়ে। ট্যুর অপারেটর ও পর্যটন দফতর সূত্রে জানা গিয়েছে, এখন যে ২০ শতাংশ পর্যটক বুকিং বাতিল করেননি, তাঁরাও বিকল্পের সন্ধান করছেন।
সেপ্টেম্বরের গোড়ায় মুখ্যমন্ত্রীর পাহাড়ে যাওয়ার কথা। তাঁর সফরের আগে বা পরে কোনও সমাধান সূত্র মিলতে পারে। সে কথা মাথা রাখছেন পর্যটন ব্যবসায়ীরা। দার্জিলিং পাহাড়ের ট্যুর অপারেটর পদম লামা বলেন, “বিদেশের সব পর্যটক অক্টোবরের বুকিং বাতিল করেছেন। দেশের কিছু পর্যটক এখনও বুকিং বাতিল করেননি। আমরাও অপেক্ষা করছি। এমন তো দীর্ঘদিন চলতে পারে না।”

পুরনো খবর:



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.