‘কিছু করার’ আর্জি মোর্চা নেতৃত্বের কাছে
বনধের প্রথম দিনই বিপর্যস্ত পাহাড়-সমতলের পর্যটন
দু’বছর আগের সেই দুঃস্বপ্নের দিনগুলো যেন ফিরে এল সোমবার।
গোর্খা জনমুক্তি মোর্চার ডাকা অনির্দিষ্টকালীন ডুয়ার্স বনধের প্রথম দিনই যা হল, তাতে আশঙ্কায় কাঁটা পাহাড়-সমতলের পর্যটন মহল। দু’বছর আগে মোর্চার এমনই অনির্দিষ্টকালের পাহাড় বনধের স্মৃতি যে আজও তাঁদের মনে ভীষণ টাটকা! বস্তুত, পাহাড়ের অর্থনীতির মেরুদণ্ড বলে পরিচিত পর্যটনে প্রথম দিনের বনধেই যে পরিমাণ আঘাত লেগেছে, তাতে ভবিষ্যৎ ভেবে প্রবল দুশ্চিন্তায় পাহাড় ও লাগোয়া সমতলের পর্যটনের সঙ্গে প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষ ভাবে যুক্ত মানুষজন। তাঁদের প্রশ্ন, ‘আত্মঘাতী’ বনধের নামে অর্থনীতি বিপর্যস্ত করার দিন কবে শেষ হবে? নিজেদের পায়ে কুড়ুল মারার প্রবণতা বন্ধ করা কি কারও পক্ষে সম্ভব নয়?
উত্তরবঙ্গ উন্নয়নমন্ত্রী গৌতম দেব বলেছেন, “রাজ্য সরকার ভীষণ উদ্বিগ্ন। গ্রীষ্মের ভরা পর্যটন মরসুম মাটি হলে অনেকের বিপুল ক্ষতি হবে। আমাদের আশা, আন্দোলনের নামে স্থানীয় অর্থনীতির ক্ষতি কেউ আর করবেন না।”
এ তো মন্ত্রীর আশা। আর বাস্তব কী বলছে?
মোর্চা শিবির বন্ধ নিয়ে অনড়। ফলে, পাহাড়-সমতলের পর্যটনও চরম ক্ষতির মুখে পড়ছে। সমতল থেকে পাহাড়ে যোগাযোগের অন্যতম সড়ক পথ এই তরাই-ডুয়ার্স হয়েই। এই দু’টি অঞ্চলে বন্ধ নিয়ে গোলমাল হলে পাহাড়েও গাড়ি ওঠানামা মুশকিল। গোলমাল সোমবার যথেষ্টই হয়েছে। পাল্লা দিয়ে বাড়ছে পর্যটন মহলের দুশ্চিন্তা।
জিটিএ চুক্তির পরে পাহাড় এবং তরাই-ডুয়ার্সের অনেক পর্যটন ব্যবসায়ীই ব্যাঙ্ক-ঋণ নিয়ে নতুন করে ব্যবসা বাড়িয়েছেন। গত বছরের ব্যবসা স্বস্তি দিয়েছিল তাঁদের। এ বারের গ্রীষ্মের মরসুমের বুকিং দেখেও তাঁরা স্বস্তিতে ছিলেন। বুকিংয়ের প্রবণতা দেখে কয়েকগুণ বেশি আয় হওয়ার ব্যাপারেও নিশ্চিত ছিলেন। আচমকা বন্ধে পরিস্থিতি ঘুরে গিয়েছে। ব্যাঙ্ক-ঋণের কিস্তি উঠবে কি না, সেটাই বুঝতে পারছেন না বহু হোটেল মালিক। বুকিং বাতিলের হিড়িকও পড়েছে পর্যটকদের মধ্যে।
যুযুধান দুই শিবির এই পরিস্থিতির জন্য পরস্পরকে দূষেছে। মোর্চা সভাপতি বিমল গুরুঙ্গ দাবি করছেন, “পর্যটন ব্যবসার ক্ষতির জন্য দায়ী মোর্চা বিরোধী রাজনৈতিক দলের একাংশ। ওরাই বনধ ডাকতে বাধ্য করছে।” পাহাড়-সমতল, দুই এলাকার পর্যটন মহল যে ‘আত্মঘাতী’ বন্ধের পুনরাবৃত্তি চাইছেন না? মোর্চা সভাপতির বক্তব্য, “সরকার আমাদের ডুয়ার্সে সভার অনুমতি না-দেওয়ায় সমস্যা জটিল হয়ে উঠেছে। মুখ্যমন্ত্রীর দফতর থেকেও যোগাযোগ করা হয়নি।”
মোর্চার একটি শিবির অবশ্য মনে করছে, গ্রীষ্মের পর্যটন মরসুমে দেশ-বিদেশের পর্যটকেরা পাহাড়-তরাই-ডুয়ার্সের প্রতি বিমুখ হয়ে পড়লে রাজ্য সরকারের উপরেও চাপ বাড়বে। মোর্চার এক নেতা বলেন, “অতীতেও কয়েক দিন টানা বনধের মাধ্যমে চাপ বাড়ানোর পরে রাজ্য সরকারের তরফে আলোচনার প্রস্তাব মেলায় পরিস্থিতি স্বাভাবিক হয়েছে।”
পর্যটনে কোপ
এপ্রিল-জুনে ডুয়ার্সে পর্যটক
• ৪৫ হাজার (রাজনৈতিক অশান্তির জেরে ভাটা)
• ২০১১-১২: ১ লক্ষ ৫০ হাজার
• ২০১২-১৩: ৪৫ হাজার (২৩ এপ্রিল পর্যন্ত)
বন্ধ-গোলমালের প্রভাব
• ডুয়ার্সে বেসরকারি রিসর্টে ১০৫টি এবং সরকারি বাংলোয় ৩২টি পর্যটক দলের বুকিং বাতিল। এদের বুকিং ছিল ২৪ এপ্রিল থেকে ১ মে-র মধ্যে।
• এ সময় রোজ গড়ে ২৫০ জন পর্যটক গরুমারা যান। সোমবার তা ৫০ পেরোয়নি।
তথ্য: ইস্টার্ন হিমালয়ান ট্রাভেল অ্যান্ড ট্যুর অপারেটরস অ্যাসোসিয়েশন,
বন ও পর্যটন বিভাগ, রিসর্ট ওনার্স অ্যাসোসিয়েশন।
ক্ষমতা নিয়ে দরকষাকষির এই রাজনীতিতে পাহাড়-তরাই-ডুয়ার্সের অর্থনীতির অন্যতম ভিত পর্যটন ব্যবসাই কি বারবার শিকার হবে?
মোর্চা-শিবিরের বিরোধী ‘তরাই-ডুয়ার্স অ্যাকশন কমিটি’র তরফে ল্যারি বসু বলেন, “আমাদের দোষ দিয়ে লাভ নেই। কে বা কারা বন্ধ রাজনীতিতে আমাদের অর্থনীতির সবচেয়ে বেশি ক্ষতি করেছে, তা রাজ্য ও কেন্দ্র জানে। তবু কেন্দ্র ও রাজ্য কড়া মনোভাব দেখায়নি। পর্যটন ব্যবসার ক্ষতি ঠেকাতে কেন্দ্র ও রাজ্যকেই কঠোর পদক্ষেপ করতে হবে।”
বন্ধ-রাজনীতিতে পাহাড়-তরাই-ডুয়ার্স তেতে ওঠায় কতটা ভোগান্তি হতে পারে, তা এ দিন টের পেয়েছেন অবসরপ্রাপ্ত সরকারি কর্মী বারীন বিশ্বাস। উত্তর ২৪ পরগণার ইছাপুরের বাসিন্দা বারীনবাবু এ দিন দার্জিলিং মেলে এনজেপি পৌঁছন। সেখান থেকে দার্জিলিঙের হোটেল পৌঁছতে তিনগুণ বেশি ভাড়া দিতে হয়েছে তাঁকে। সত্তরোর্ধ্ব বারীনবাবু বললেন, “আমি একা আসায় কোনও মতে দার্জিলিঙে পৌঁছেছি। কিন্তু, আমার কামরায় থাকা মহারাষ্ট্রের ৪০ জন পর্যটকের দল দার্জিলিং না গিয়ে গাড়ি ঘুরিয়ে সিকিমে চলে গিয়েছেন।” টালিগঞ্জের সুবিমল চট্টোপাধ্যায়কে এনজেপি থেকে দার্জিলিং যেতে সাড়ে ৩ হাজার টাকা গাড়িভাড়া দিতে হয়েছে। আবার সল্টলেকের অরিত্র দত্ত রবিবার সুনতালেখোলায় পৌঁছলেও এ দিন তাঁদের ঘরবন্দিই থাকতে হয়েছে। ইস্টার্ন হিমালয়ান ট্র্যাভেল অ্যান্ড ট্যুর অপারেটরস অ্যাসোসিয়শনের সভাপতি সম্রাট সান্যাল বলেন, “বনধের রাজনীতি এ ভাবে চলতে থাকলে আমাদের অনেক সদস্যই ব্যবসা ছেড়ে দিতে বাধ্য হবেন। দ্রুত পরিস্থিতি স্বাভাবিক না হলে আমাদের অনশনে বসার কথাও ভাবতে হবে।”
উত্তরবঙ্গ উন্নয়ন মন্ত্রীর আশ্বাস, “রাজ্যের তরফে যা করণীয় তা করা হচ্ছে। এনজেপি, বাগডোগরায় বন্ধের সুযোগে যাতে ২-৩ গুণ হারে গাড়ি ভাড়া নেওয়া না হয়, সে দিকে খেয়াল রাখার জন্য পরিবহণ দফতর, পুলিশকে বলব।”



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.