ভয় কাটাতে আসরে চিদম্বরম, পরোক্ষে দোষ দিলেন প্রণবকে
প্রায় সপ্তাহখানেক মুখ বুজে থাকার পরে বৃহস্পতিবার বেহাল অর্থনীতি সামাল দিতে ফের মুখ খুললেন অর্থমন্ত্রী পি চিদম্বরম। এক দিকে যেমন বললেন যে টাকার দর যেখানে গিয়ে ঠেকেছে সেটা যথাযথ নয়। তেমনই অর্থনীতির সাম্প্রতিক অসুখের জন্য নাম না-করেই দুষলেন তাঁর পূর্বসূরিকে।
চিদম্বরমের দাবি, আজ হঠাৎ নয়। দু’তিন বছর ধরেই একটু একটু করে পায়ের তলার জমি হারিয়েছে ভারতীয় অর্থনীতি। তাঁর কথায়, “গত দু’-তিন বছরে আর্থিক শৃঙ্খলা ভাঙার অনুমতি দেওয়া হয়েছে। মূল্যবৃদ্ধির হারকে ১০ শতাংশের উপরে যেতে দেওয়া হয়েছে।” অর্থমন্ত্রীর মতে এ সবের ফলেই আজ কঠিন হচ্ছে বিশ্বজোড়া আর্থিক মন্দার ধাক্কা সামলানো।
অনেকেরই মতে, চিদম্বরমের এই মন্তব্যের লক্ষ্য আসলে প্রণব মুখোপাধ্যায়। যাঁর হাতে থেকে অর্থ মন্ত্রকের দায়িত্ব নিয়েছিলেন তিনি। নীতির প্রশ্নে তাঁর সঙ্গে প্রণববাবুর যে ফারাক রয়েছে, তা আগেও গোপন করেননি চিদম্বরম। অর্থমন্ত্রী হয়েই প্রণববাবুর আমলে চালু হওয়া কর ফাঁকি প্রতিরোধ আইনকে হিমঘরে পাঠান তিনি। বদল আনতে শুরু করেন অন্যান্য নীতিতেও। আজ সেই মতান্তরকেই ঠারেঠোরে আরও প্রকাশ্যে এনে চিদম্বরমের মন্তব্য, “হারানো জমি অনেকটাই পুনরুদ্ধার করেছি। কিন্তু আরও করতে হবে।”
চিদম্বরমকে কিঞ্চিৎ স্বস্তি দিয়ে এ দিন শেয়ার বাজার ঊর্ধ্বমুখী হলেও টাকার পতন অব্যাহত। গত কয়েক দিন পড়ার পরে শেয়ার সূচক সেনসেক্স আজ এক লাফে ৪০৭ পয়েন্ট বেড়েছে। কিন্তু ডলারের দাম পৌঁছে যায় ৬৫ টাকার উপরে। দিনের শেষে অবশ্য খানিক কমে ডলারের দাম দাঁড়িয়েছে ৬৪.৫৫ টাকা। চিদম্বরমের মতে, টাকার এই দাম হওয়া উচিত নয়। বেশ খানিকটা কম দরেই বিশ্ব বাজারে বিকোচ্ছে টাকা। সেই সঙ্গে দেশের অর্থনীতি নিয়েও হতাশা বা আতঙ্কের কিছু নেই বলে দাবি করছেন তিনি। বলেছেন, জুলাইয়ের হিসেব পেলেই বোঝা যাবে যে কিছুটা হলেও গতি ফিরতে শুরু করেছে বৃদ্ধির চাকায়।
কিন্তু আজ প্রণববাবুকে পরোক্ষে যে ভাবে দোষারোপ করেছেন চিদম্বরম, তা কতটা যথাযথ। অর্থ মন্ত্রক সূত্রে বলা হচ্ছে, ২০০৮ সালে বিশ্বজোড়া মন্দা থেকে দেশের অর্থনীতিকে বাঁচাতে ত্রাণ প্রকল্প ঘোষণা করেছিল কেন্দ্র। বাড়ানো হয়েছিল সরকারি খরচও। যার ফলে ফুলেফেঁপে ওঠে রাজকোষ ঘাটতি। চড়তে শুরু করে মূল্যবৃদ্ধির হার। তাতে লাগাম পরাতে চড়া সুদের জমানা বজায় রাখতে বাধ্য হয় রিজার্ভ ব্যাঙ্ক। ফলে ধাক্কা খায় শিল্প। মন্ত্রকের দাবি, এই কারণেই চিদম্বরম এ দিন বলেছেন যে, আন্তর্জাতিক কারণের সঙ্গে ঘরোয়া সমস্যারও মূল্য চোকাতে হচ্ছে আমাদের। যদিও কেউ কেউ প্রশ্ন তুলছেন, অর্থনীতির এই দুর্দিনে নিজের সরকারেরই প্রাক্তন অর্থমন্ত্রীকে এ ভাবে দোষারোপ আসলে চিদম্বরমের অসহায় অবস্থার প্রতিফলন কি না।
অর্থমন্ত্রীর অবশ্য দাবি, অবস্থা যতটা খারাপ মনে করা হচ্ছে, আসলে ততটা নয়। তাঁর আশা, চলতি আর্থিক বছরের প্রথম তিন মাসে বৃদ্ধির হার তেমন না-বাড়লেও বাকি সময়টায় তা ঘুরে দাঁড়াবে। আসবে বিদেশি লগ্নি। যে কোনও মূল্যে রাজকোষ ঘাটতিকে বেঁধে রাখা হবে জাতীয় আয়ের ৪.৮ শতাংশে। আর চলতি খাতে লেনদেন ঘাটতিকে ৭ হাজার কোটি ডলারে।
শেয়ার বাজার ও লগ্নিকারীদের মধ্যে তৈরি হওয়া আতঙ্ককে কী ভাবে দূর করা যায়, তা নিয়ে এ দিন নর্থ ব্লকে রিজার্ভ ব্যাঙ্কের বিদায়ী গভর্নর ডি সুব্বারাও ও মনোনীত গভর্নর রঘুরাম রাজনের সঙ্গে তিন ঘণ্টা বৈঠক করেন চিদম্বরম। ছিলেন অর্থ বিষয়ক সচিব অরবিন্দ মায়ারামও।
কেন্দ্রের সঙ্গে লগ্নিকারীদের যোগাযোগের অভাব যে বিপর্যয়ের একটা কারণ, তা আজ মেনে নিয়েছেন চিদম্বরম। তাঁর মতে, সেই কারণেই সরকারি পরিসংখ্যান বা বিবৃতিতে আস্থা না রেখে ‘কাল্পনিক দুশ্চিন্তা’য় ভুগছে শিল্পমহল। যেমন, চলতি খাতে ঘাটতি কমাতে সম্প্রতি ডলারের পায়ে বেড়ি পরানোর চেষ্টা করেছিল রিজার্ভ ব্যাঙ্ক। কিন্তু তাতে ফল হয়েছে উল্টো। যে কারণে এ দিনও অর্থমন্ত্রী বলেছেন, “টাকার ওঠা-নামা ঠেকাতে এই সব ব্যবস্থা সাময়িক। পরিস্থিতি শোধরালেই এই সব সিদ্ধান্ত ফিরে দেখা হবে।”
একই প্রতিশ্রুতি সুব্বারাওয়েরও। আশ্বাস দিয়েছেন বিদেশি মুদ্রার ভাঁড়ার নিয়েও। তবে টাকার দর পড়ায় মূল্যবৃদ্ধি যে ফের মাথাচাড়া দিতে পারে, সেটা মেনে নিয়েছেন তিনি।
অবস্থা ফেরার নমুনা পেশ করতে চেয়েছেন চিদম্বরমও। তাঁর যুক্তি, এপ্রিল থেকে জুন পর্যন্ত ৯১৪ কোটি ডলার বিদেশি লগ্নি এসেছে। গত বছরের একই সময়ের তুলনায় যা ৭০% বেশি। জুলাইয়ের প্রাথমিক হিসেবও বলছে, রফতানিও বেড়েছে ১১.৭%। কমেছে বাণিজ্যিক ঘাটতি। এই ইতিবাচক ইঙ্গিত সত্ত্বেও শুধু বিদেশি আর্থিক সংস্থাগুলির শেয়ার বেচে দেওয়ার কারণেই আতঙ্ক ছড়াবে কেন, সেই প্রশ্ন তুলেছেন তিনি।

পুরনো খবর:



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.