প্রতি দিনই ইতিহাস গড়ছে টাকা। বুধবারও সৃষ্টি হল পতনের নতুন রেকর্ড। টাকা ৮৬ পয়সা পড়ায় প্রতি ডলারের দাম গিয়ে ঠেকল ৬৪ টাকা ১১ পয়সায়। বিশেষজ্ঞদের আশঙ্কা, টাকা আরও পড়বে।
টাকার সঙ্গে সমান তালে পড়ছে শেয়ার বাজারও। এই দিনও সেনসেক্স পড়েছে ৩৪০.১৩ পয়েন্ট। বাজার বন্ধ হওয়ার সময়ে সূচক দাঁড়িয়েছে ১৭,৯০৫.৯১ অঙ্কে, যা গত ১১ মাসে সবচেয়ে কম। টাকার মতো বাজারের পতন নিয়েও শঙ্কিত বিশেষজ্ঞরা। কারণ, মাত্র গত চার দিনের লেনদেনেই সেনসেক্স পড়েছে প্রায় ১৪৬২ পয়েন্ট।
এ দিনও বেড়েছে সোনার দাম। কলকাতায় প্রতি ১০ গ্রাম ২৪ ক্যারাট সোনা ১৮৫ টাকা বেড়ে হয়েছে ৩২,১৫৫ টাকা। গয়নার সোনাও ১৭৫ টাকা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৩০,৫০৫ টাকা।
তবে সকলের চোখ এ দিন ছিল আমেরিকার দিকে। বাজার থেকে বন্ড কেনার কর্মসূচির ইতি করা হবে কি না, তা নিয়ে আমেরিকার কেন্দ্রীয় ব্যাঙ্কের জুলাইয়ের বৈঠকের সিদ্ধান্ত বুধবার প্রকাশ করার কথা ছিল। ভারতীয় সময় অনুযায়ী মধ্যরাত্রির পর তা প্রকাশ করা হলে জানা যায়, বন্ড কেনা কমিয়ে আনার ব্যাপারে তেমন কোনও সময়সীমা স্থির করেনি ১২ সদস্যের নীতি নির্ধারক কমিটি। কমিটির বেশির ভাগ সদস্যই একমত যে, মাসে ৮৫০০ কোটি ডলারের এই ত্রাণ প্রকল্প কাটছাঁট করার সময় এখনও আসেনি। কারণ অর্থনীতি তার জন্য প্রস্তুত নয়। |
প্রসঙ্গত, নিজেদের আর্থিক অবস্থা ফেরাতে বন্ড কেনার মাধ্যমে বাজারে ডলারের জোগান বাড়িয়ে চলছিল মার্কিন সরকার। তারা বন্ড কেনা বন্ধ করে দিলে ডলারের জোগান কমত। ব্যাঙ্কিং বিশেষজ্ঞ বি কে দত্ত মনে করেন, “জোগানের ওই ঘাটতি মেটাতে বিভিন্ন দেশ থেকে ডলার আমেরিকায় লগ্নি করার প্রবণতা দেখা দিতে পারত। তা হলে ভারতে বিশেষ করে বিদেশি লগ্নিকারী সংস্থাগুলির মধ্যে শেয়ার বিক্রি করে তা ডলারে পরিণত করে মার্কিন বাজারে লগ্নির হিড়িক পড়ে যেত। এর জেরে ভারতে ডলারের চাহিদা বাড়লে তা ডলারের দামকে আরও উপরের দিকে ঠেলে তুলত।”
আপাতত মার্কিন সরকার ত্রাণ প্রকল্প চালিয়ে গেলে তা ভারতের শেয়ার বাজার ও টাকার উপর ইতিবাচক প্রভাবই ফেলবে বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা। টাকার অঙ্কে ডলারের মূল্যবৃদ্ধি ভারতের অর্থনীতির পক্ষে কতটা ক্ষতিকর, সেটা ইতিমধ্যেই উপলব্ধি করছে দেশের অর্থনীতি। ডলারের দাম বাড়ায় পেট্রোল আমদানি খাতে খরচ আরও বাড়ছে। ফলে দেশে ওই সব পণ্যের দাম বাড়ার সম্ভাবনাও প্রবল বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা। তবে মার্কিন শীর্ষ ব্যাঙ্কের সিদ্ধান্ত নতুন করে শেয়ার বাজারে আতঙ্ক সৃষ্টি কিছুটা কমাতে পারে বলে মত বিশেষজ্ঞদের।
শেয়ার বাজারে হাল অবশ্য শুধু ভারতেই যে খারাপ, তা নয়। এ দিন এশিয়া ও ইউরোপ ও আমেরিকার অধিকাংশ শেয়ার সূচকের মুখও ছিল নীচের দিকে।
|