ভুল জমি বাছাই, ক্ষতির আশঙ্কা পেঁয়াজ চাষে |
অপূর্ব চট্টোপাধ্যায় • রামপুরহাট |
লক্ষ্য বাইরে থেকে আমদানি কমানো। তাই উৎপাদন বৃদ্ধির জন্য এ বারই প্রথম খরিফ মরসুমে পেঁয়াজ চাষের সিদ্ধান্ত নেয় রাজ্যের উদ্যান পালন দপ্তর। রাজ্যের ৬টি জেলাতে এই প্রকল্প নেওয়া হয়। কিন্তু দু’দিনের বৃষ্টিতে প্রকল্পের বাস্তব রূপ পাওয়া নিয়ে আশঙ্কা রয়েছে বীরভূমে।
উদ্যান পালন দফতর সূত্রে জানা গিয়েছে, বীরভূম ছাড়া পশ্চিম মেদিনীপুর, বাঁকুড়া, পুরুলিয়া, হুগলি মুর্শিদাবাদ জেলাতে প্রকল্প গ্রহণ করা হয়। বীরভূমে খরিফ মরসুমে পেঁয়াজ চাষের জন্য ১০০ হেক্টর জমি বাছা হয়। সিউড়ি ও বোলপুর মহকুমার ৭৯১ জন চাষিকে গ্রাম পঞ্চায়েত ও পঞ্চায়েত সমিতির মাধ্যমে প্রকল্পের উপভোক্তা করে তাঁদেরকে জুলাই মাসের শেষের দিকে ও অগস্ট মাসের প্রথম দিকে নাসিক থেকে নিয়ে আসা পেঁয়াজের উচ্চ ফলনশীল এবং ভাল জাতের বীজও দেওয়া হয়। উদ্যান পালন বিভাগের জেলা আধিকারিক সুবিমল মণ্ডল জানান, খরিফ মরসুমে পেঁয়াজ চাষের জন্য উপভোক্তাদের উঁচু জমি, যেখানে জল দাঁড়ায় না বিশেষ করে ধান চাষ হয় না এমন জমি বাছতে বলা হয়েছিল। কিন্তু দেখা যাচ্ছে কিছু ক্ষেত্রে নীচু জমি বেছে নেওয়ার জন্য দু-দিনের বৃষ্টিতে কিছুটা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। মঙ্গলবার ও বুধবার যথাক্রমে মহম্মদবাজার ও বোলপুর এলাকার চাষিদেরকে এ ব্যাপারে বোঝানো হয়েছে বলে জানিয়েছেন সুবিমলবাবু।
খরিফ মরসুমে পেঁয়াজ চাষের জন্য জেলার সিউড়ি মহকুমার সিউড়ি১ ব্লকে ১৫ হেক্টর, সিউড়ি২ ব্লকে ২৫ হেক্টর, রাজনগর ব্লকে ৩০ হেক্টর, মহম্মদবাজার ব্লকে ১৫ হেক্টর জমি-সহ বোলপুর মহকুমার বোলপুর-শ্রীনিকেতন ব্লকে ১৫ হেক্টর জমি চিহ্নিত করা হয়। বোলপুর ব্লকের অধীন বাহিরী গ্রামের চাষি ননীগোপাল বুট বলেন, “নিজের ৫ কাঠা জমি ছাড়াও গ্রামেরই আরও কয়েকজন চাষি মিলে মোট দু’বিঘে জমিতে পেঁয়াজ চাষ করার জন্য বীজতলা তৈরি করি। কিন্তু যে জমিতে পেঁয়াজ চাষ করার জন্য বাছা হয়েছে সেই জমির মাটি দু’দিন ধরে বৃষ্টিপাতের ফলে চাষের উপযুক্ত করার সময় পাওয়া গেল না। ফলে পেঁয়াজ চাষের ভবিষ্যৎ নিয়ে একটু সমস্যা দেখা দিয়েছে।”
প্রায় একই সুরে ওই ব্লকের কঙ্কালীতলা গ্রামের চাষি অনির্বাণ সেনও বলেন, “১ বিঘার মতো জমিতে পেঁয়াজ চাষের জন্য বীজতলা তৈরি করেছি। কিন্তু এরকম ভাবে আর কয়েকদিন বৃষ্টিপাত হতে থাকলে পেঁয়াজ রোপণে সমস্যা হবে। কারণ বৃষ্টিতে জমির ঘাস নতুন করে জন্মাবে। তাতে পেঁয়াজ চাষ করা যাবে না।”
অগস্ট মাস প্রায় শেষ হতে চলল। জেলাতে এখনও পর্যন্ত প্রায় ৫০ মিলিমিটার বৃষ্টির ঘাটতি আছে। জেলা কৃষি দপ্তর সূত্রে খবর, মঙ্গলবার পর্যন্ত জেলায় ২ লক্ষ ৪৭ হাজার ৯৩২ হেক্টর জমিতে ধান চাষ হয়েছে। জেলার মুখ্য কৃষি প্রবন্ধক প্রদীপকুমার মণ্ডল বলেন, “বর্ষাকালের যে বৃষ্টি সেটা গত দু’দিন থেকে শুরু হয়েছে। এর আগে মে মাস থেকে বৃষ্টি শুরু হলেও খাপ ছাড়া ভাবে হয়েছে। স্বাভাবিক ভাবে জেলায় সব জায়গায় সমানভাবে বৃষ্টি হয়নি। এর ফলে এখনও পর্যন্ত ধান রোয়ার কাজও শেষ হয়নি।” তিনি আরও বলেন, “জেলাতে মঙ্গলবার পর্যন্ত রামপুরহাট মহকুমায় ৯০ শতাংশ জমিতে ধান রোয়ার কাজ হয়েছে। বোলপুর ও সিউড়ি মহকুমায় যথাক্রমে ৮৮ ও ৬৪ শতাংশ জমিতে রোয়ার কাজ শেষ হয়েছে।” আগামী এক সপ্তাহের মধ্যে জেলায় ৩ লক্ষ হেক্টরের বেশি পরিমাণ জমিতে খরিফ মরসুমের ধান চাষ হবে বলে আশাবাদী প্রদীপবাবু। |