টাকার পতনের আঁচ লেগেছে পর্যটন ব্যবসায়। ক্ষতি সামাল দিতে বিকল্প পথ খুঁজছেন ব্যবসায়ীরা। যার অন্যতম পদক্ষেপ হিসেবে বিদেশে ঘুরতে যাওয়ার খরচের একটা অংশ সরাসরি ডলারেই মেটানোর জন্য পর্যটকদের অনুরোধ করছেন তাঁরা।
বিষয়টা কী রকম?
উদাহরণ হিসেবে বলা যাক, কলকাতা থেকে দিন দশেকের জন্য আমেরিকা ঘুরতে গেলে এখন জনপ্রতি খরচ পড়বে প্রায় ৩৪০০ ডলার। ভারতীয় মুদ্রায় সেটা প্রায় ২ লক্ষ ২০ হাজার টাকা। এর মধ্যে বিমান-ভাড়া, ভিসা ও বিমার খরচ বাদ দিয়ে হোটেল ও অন্যান্য খাতে আমেরিকার মাটিতে প্রায় ২০০০ ডলার খরচ হওয়ার কথা। ৩৪০০ ডলারের মোট খরচটাই এত দিন বিদেশি মুদ্রা থেকে ভারতীয় টাকায় পরিবর্তন করে নিয়ে হিসেব কষত পর্যটন সংস্থাগুলি। ভারতীয় টাকাতেই পুরো খরচ মিটিয়ে দিতেন ভ্রমণার্থীরা। কিন্তু টাকার ক্রমাগত পতনের জন্য এখন ব্যবসায়ীরা আর ঝুঁকি নিতে চাইছেন না। বিদেশে যে খরচটা হবে (এ ক্ষেত্রে ২০০০ ডলার), সেটা ভারতের মাটিতে ডলারেই মিটিয়ে দিতে বলছেন তাঁরা।
কেন?
পর্যটন সংস্থাগুলির বক্তব্য, ভ্রমণার্থীদের কাছে ভারতীয় মুদ্রায় নেওয়া পুরো টাকাটাই তারা এত দিন ডলার বা অন্য বিদেশি মুদ্রায় পরিবর্তন করে বিদেশের হোটেল ও অন্যান্য খরচ মেটাত। কিন্তু এই মুদ্রা বিনিময়ের জন্যও কয়েক দিন সময় লাগে। এই সময়ের মধ্যে টাকার দাম পড়ে গেলে ভারতীয় মুদ্রায় পুরো খরচ পাওয়া সত্ত্বেও তা ভাঙিয়ে অপেক্ষাকৃত কম ডলার বা অন্য বিদেশি মুদ্রা মিলবে। অর্থাৎ ধরা যাক, কোনও এক সময়ে ৫৫ টাকায় এক ডলার পাওয়া যেত। এখন এক ডলার পেতে খরচ করতে হচ্ছে ৬৪ টাকা। কাজেই ৫৫ টাকার হিসেব ধরলে আদপে মিলবে এক ডলারেরও কম।
‘আউটবাউন্ড ট্যুর অপারেটর্স অ্যাসোসিয়েশন অফ ইন্ডিয়া’-র কর্তা বিনীত গোপাল এবং ‘ট্র্যাভেল এজেন্ট ফেডারেশন অফ ইন্ডিয়া’র পূর্বাঞ্চলীয় কর্তা অনিল পঞ্জাবীর দাবি, এই বাড়তি টাকাটাও নিজেদের আয় থেকেই মেটাতে হয় পর্যটন সংস্থাগুলিকে। কারণ, এক বার প্যাকেজের দর স্থির করে সেই হিসেবে টাকা নেওয়ার পরে আর ‘টাকার দাম পড়ে গিয়েছে’ বলে ভ্রমণার্থীদের কাছ থেকে বেশি টাকা চাওয়া যায় না। তাই এই ধরনের ঝুঁকি এড়াতে বিকল্প পথ খুঁজছেন পর্যটন ব্যবসায়ীরা। তাঁদের আর্জি, বিমানের ভাড়া বা ভিসার খরচ ভারতীয় টাকাতেই নেওয়া হবে। কিন্তু বিদেশের মাটির খরচটা যেন ডলারের মতো বিদেশি মুদ্রাতেই দেওয়া হয়। সে ক্ষেত্রে তাঁরা সরাসরি ডলারই পাঠিয়ে দিতে পারবেন বিদেশের হোটেল বা পর্যটন সংস্থাকে। তখন ভারতীয় টাকা ডলারে পরিবর্তনের জন্য আলাদা করে আর বিনিময়মূল্য গুনতে হবে না।
টাকার পড়তি দামের জেরে আরও একটি ক্ষেত্রে কিছুটা ধাক্কা খেয়েছেন পর্যটন ব্যবসায়ীরা। ‘ট্র্যাভেল কারেন্সি কার্ড’। বিদেশে পড়তে যাওয়া অনেকেই এই ধরনের কার্ড সঙ্গে নিয়ে যান। কখনও সরাসরি ব্যাঙ্ক থেকে, কখনও বা পর্যটন সংস্থার মাধ্যমে এই ধরনের কার্ড তাঁরা সংগ্রহ করেন। সেই কার্ডে দেশ থেকে নিয়মিত টাকা ভরে দেন অভিভাবকেরা। ব্যাপারটা যদি পর্যটন সংস্থার মাধ্যমে করা হয়, তা হলে সেখানে তারাও কিছু কমিশন পায়। কিন্তু এখন এই কমিশনেও ভাটার টান। ‘ট্র্যাভেল এজেন্ট ফেডারেশন অফ ইন্ডিয়া’র কর্তা অনিলবাবু জানালেন, “টাকার দাম পড়ে যাওয়ায় অনেক অভিভাবকই কার্ডে নতুন করে টাকা ভরার জন্য কয়েকটা দিন অপেক্ষা করার কথা বলছেন। একেবারে যে খরচ না মেটালেই নয়, সেটা বাদ দিয়ে সন্তানের বিদেশে থাকার বাড়তি খরচে রাশ টানছেন তাঁরা।”
কাজেই চিন্তা আরও বেড়েছে পর্যটন ব্যবসায়ীদের। এমনিতেই টাকার পতনের জেরে বিদেশ যাওয়ার খরচ অন্তত ১০% বেড়েছে। ফলে বিদেশ ভ্রমণের হার কিছুটা কমে যাওয়ায় ব্যবসাও কমেছে পর্যটন সংস্থাগুলির। কিন্তু এর চেয়েও তারা বেশি চিন্তিত ভারতীয় টাকা ও বিদেশি মুদ্রার বিনিময় নিয়ে। তাই পরিস্থিতি স্বাভাবিক না হওয়া পর্যন্ত বিকল্প পথেরই সন্ধানে তারা। |