প্রায় হিমঘরে চলে যাওয়া পরিকল্পনাই বিনিয়োগ বাঁচানোর সমাধানসূত্র হিসেবে ফিরে আসছে।
বানতলায় তথ্যপ্রযুক্তি পার্ক বাঁচাতে অবশেষে বিশেষ প্রশাসনিক কর্তৃপক্ষ তৈরির সিদ্ধান্ত নিতে চলেছে রাজ্য। শিল্পমন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায় জানান, ১১০০ একরের এই বিশেষ আর্থিক অঞ্চল দেখাশোনা করতে নির্দিষ্ট কর্তৃপক্ষ থাকা জরুরি। তিনি বলেন, “দূষণ নিয়ে চর্মনগরী ও তথ্যপ্রযুক্তি শিল্প তালুকের বিরোধ মেটানোর পাশাপাশি অন্যান্য নাগরিক পরিষেবার ক্ষেত্রেও নজরদারির কাজ করবে এই কর্তৃপক্ষ।”
প্রসঙ্গত, গত শনিবারই বানতলার দূষণ সমস্যা নিয়ে বৈঠকে বসেন পার্থবাবু। হাজির ছিলেন শ্রমমন্ত্রী পূর্ণেন্দু বসু, দমকলমন্ত্রী জাভেদ খান, পুর ও নগরোন্নয়নমন্ত্রী ফিরহাদ হাকিম, মুখ্যসচিব সঞ্জয় মিত্র, তথ্যপ্রযুক্তি সচিব সুশান্ত মজুমদার, শিল্প সচিব সি এম বাচাওয়াত-সহ দূষণ নিয়ন্ত্রণ পর্ষদ এবং ওয়েবেলের প্রতিনিধিরা। ছিলেন চর্মশিল্পের প্রতিনিধি এবং তথ্যপ্রযুক্তি সংস্থার কর্তারাও। বৈঠক শেষে পার্থবাবু আশ্বাস দিয়েছিলেন সাত দিনের মধ্যেই সমাধানসূত্র হাতে আসবে। |
প্রস্তাবিত সমাধানসূত্র অবশ্য গত পাঁচ বছর ধরে ফাইল-বন্দি। ২০০৯ থেকেই ‘বানতলা ইন্ডাস্ট্রিয়াল টাউনশিপ অথরিটি’ গড়ার বিষয়ে ভাবনাচিন্তার শুরু। অনেকটা সল্টলেক সেক্টর ফাইভের নবদিগন্ত-র ধাঁচে। বিগত সরকারের আমলে পরিকল্পনা তৈরি হয়েও নির্বাচনী আচরণবিধির কারণে তা আটকে যায়।
২০১১ সালে বর্তমান সরকার এ নিয়ে ভাবনা চিন্তা শুরু করলেও তা সরকারের অন্দরমহলে মতানৈক্যের জেরে থমকে যায়। পুর দফতরের দাবি ছিল, এ বিষয়ে রাজ্য উদ্যোগী হলে, তার ঘাড়ের উপর চেপে বসবে বাড়তি আর্থিক বোঝা। পার পেয়ে যাবে পরিকাঠামো গড়ার প্রতিশ্রুতি দিয়ে কম দামে জমি পাওয়া নির্মাণ সংস্থাও। উল্টো দিকে শিল্প দফতরের মত, বানতলার জন্য এই কর্তৃপক্ষ গড়লে উপকৃত হবে সেখানকার শিল্পমহল। নানা টানাপোড়েনের মাঝে পড়ে সল্টলেক সেক্টর ফাইভের নবদিগন্ত-র ধাঁচে প্রশাসনিক কর্তৃপক্ষ বানতলার ভাগ্যে জোটেনি। সমস্যাও উত্তরোত্তর বেড়েছে।
দূষণের ভুত বানতলা চর্মনগরীর লাগোয়া তথ্যপ্রযুক্তি প্রকল্পকে প্রথম দিন থেকেই তাড়া করে ফিরেছে। বছর দুই আগে তথ্যপ্রযুক্তি সংস্থাগুলি নিজেদের লগ্নি বাঁচানোর স্বার্থে বর্জ্য নিকাশি নালা পৃথক করে নেয় নিজস্ব খরচেই। কিন্তু এ সব করেও সুরাহা হচ্ছে না বলে সংস্থাগুলির অভিযোগ। অন্য দিকে চর্মশিল্পের দাবি, প্রথমে বানতলার ওই স্থান চর্মশিল্পের জন্যই নির্দিষ্ট করা ছিল। তাই সেখানে তথ্যপ্রযুক্তি সংস্থাগুলিকে কেন জমি দেওয়া হল, তা নিয়ে ক্ষুব্ধ তারা। একই সঙ্গে তাদের অভিযোগ, অনিয়মিত জল সরবরাহের কারণে নিত্য সমস্যার মুখে পড়েন তাঁরা।
পার্থবাবু জানান, এখন চারটি কমন এফ্লুয়েন্ট ট্রিটমেন্ট প্লান্ট (সিইটিপি) বা বর্জ্য নিষ্কাশন ব্যবস্থা আছে। আরও দু’টি তৈরি করা হবে। জল সরবরাহ ব্যবস্থার দিকে নজর দেওয়া হবে, যাতে চামড়ার কারখানাগুলিতে গভীর নলকূপ তৈরির প্রবণতা কমে। |