সাঁকরাইলে জরি হাব চালু হয়নি এখনও। তবে সম্প্রতি হাব চালু করতে ফের নড়েচড়ে বসেছে রাজ্য সরকার।
২০১২ সালের ৪ ফেব্রুয়ারি জরি হাব তৈরির কথা ঘোষণা করেন রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। ওই দিন তিনি সাঁকরাইল ফুড পার্কের একটি অংশে জরি হাবের উদ্বোধনও করেন। তারপরে কেটে গিয়েছে প্রায় দেড় বছর। জরি হাব এখনও চালুই হয়নি। ফুড পার্কটি রয়েছে রাজ্য শিল্পোন্নয়ন নিগমের অধীনে। নিগমের চেয়ারম্যান তথা শিল্পমন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায় বলেন, “জরি হাবটি যত তাড়াতাড়ি সম্ভব চালু করার জন্য হাওড়ার জেলাশাসককে উদ্যোগী হতে বলা হয়েছে। সংশ্লিষ্ট এলাকার বিধায়কদের নিয়ে যাতে তিনি আলোচনা করেন, সে কথাও বলা হয়েছে।” জেলাশাসক শুভাঞ্জন দাস জানান, ২৬ অগস্ট একটি বৈঠক হয়েছে। শনিবার ফের বৈঠক হয়। ভবিষ্যতে আরও আলোচনার অবকাশ আছে বলে জানিয়েছেন তিনি।
নিগমের ফুড পার্কে তৈরি হয়েছিল দ্বিতল সিএফসি ভবন। পরিকল্পনা ছিল এই ভবনের এক অংশে ব্যাঙ্কের শাখা খোলা হবে। থাকবে কনফারেন্স রুম, ল্যাবরেটরি। ফুড পার্কে যে সব সংস্থা কারখানা করেছে, তারা এ সব ব্যবহার করতে পারবে। কিন্তু শাখা খুলতে রাজি হননি কোনও ব্যাঙ্ক কর্তৃপক্ষ।
কনফারেন্স রুম এবং ল্যাবরেটরি ব্যবহার করার জন্য আগ্রহ দেখায়নি সংস্থাগুলি। অব্যবহৃত ২৪০০ বর্গফুটের সিএফসি ভবনটিকেই ‘জরি-হাব’ করা হবে বলে ঘোষণা করা হয়। জরি-হাব উদ্বোধন করে মুখ্যমন্ত্রী জানিয়েছিলেন, এখানে ৬০০ জরিশিল্পী প্রশিক্ষণ নিয়ে কাজ করতে পারবেন। এ ছাড়াও, এখানে গড়া হবে একটি রফতানি বাণিজ্যকেন্দ্র। জরিশিল্পীরা বাণিজ্যকেন্দ্রে তাঁদের উৎপাদিত পণ্য বিক্রি করতে পারবেন। সরকার ন্যায্য দামে জরিশিল্পিদের কাছ থেকে সেই সব পণ্য কিনে নেবে। তা আবার সরকারি উদ্যোগেই আমেরিকা এবং সৌদি আরবে রফতানি করা হবে। কিন্তু সে সব কিছুই হয়নি। |
প্রস্তাবিত হাব।—নিজস্ব চিত্র। |
সাঁকরাইল এবং পাঁচলা জরির কাজের জন্য বিখ্যাত। এখানে প্রায় প্রতিটি ঘরে জরির কাজ হয়। পরবর্তীকালে অবশ্য রাজ্য জুড়ে জরির কাজের প্রসার ঘটেছে। লক্ষ লক্ষ কারিগর জড়িত এই কুটির শিল্পের সঙ্গে। জরিশিল্পীদের অভিযোগ, এই কারবারে মহাজন প্রথা চালু থাকার জন্য তাঁরা ন্যায্য মজুরি পান না। মহাজনেরা দাদন দিয়ে কাজ করিয়ে নেন। সেগুলি চড়া দামে বড়বাজারে বিক্রি করেন। সেখান থেকে পণ্য চলে যায় দেশ, রাজ্য তথা বিশ্বের বাজারে।
পাঁচলা বা সাঁকরাইল এলাকায় জরি-হাব গড়ে তোলার জন্য জরিশিল্পীরা বহু দিন ধরে দাবি করে আসছিলেন। ফলে মুখ্যমন্ত্রী জরি হাব উদ্বোধন করায় তাঁরা খুশিই হন। সারা ভারত জরি শিল্পী কল্যাণ সমিতির পক্ষ্যে মুজিবর রহমান বলেন, “জরি হাব অবিলম্বে চালু করা দরকার। এখানে যদি শিল্পী কারিগদের স্টল দেওয়া হয়, তা হলে দেশের বিভিন্ন রাজ্য থেকে যে সব ক্রেতা আসবেন তাঁদের কাছে সরাসরি পণ্য বিক্রি করা যাবে। বড়বাজারের মহাজনদের কবল থেকে রক্ষা পাবেন কারিগরেরা।”
মুজিবর এই দাবি করলেও হাওড়া জেলা প্রশাসন এবং রাজ্য শিল্পোন্নয়ন নিগমের কর্তারা জানান, জরি শিল্পীদের কাছে আবেদন জানানো হয়েছিল স্টল নেওয়ার জন্য। কিন্তু জরিশিল্পীরা বাড়িতে বসেই কাজ করতে আগ্রহী। সে কারণে তাঁরা এখানে স্টল নিতে রাজি হননি। ফলে কারিগরদের এখানে এনে সরাসরি কাজ করানোর পরিকল্পনাটি আপাতত বাতিল করা হয়েছে। নিগমের এক কর্তা জানান, এখন কিছুটা অন্য ভাবে পরিকল্পনা করতে হচ্ছে। এই ব্যবসার নিয়ম হল, জরির ওস্তাগর অর্থাৎ স্থানীয় ব্যবসায়ীরাই কারিগরদের থেকে পণ্য কিনে নিয়ে কলকাতায় বড় ব্যবসায়ীর কাছে বিক্রি করেন। পরিবর্তিত পরিকল্পনায়, সেই সব ওস্তাগর বা ব্যবসায়ীদের নিয়ে সমবায় তৈরি হচ্ছে। স্টল দেওয়া হবে সমবায়ের হাতে। স্টলে বিক্রি হবে জরির পণ্য। কলকাতার বড় ব্যবসায়ীরা এখান থেকে পণ্য কিনতে পারবেন। অন্য দিকে, শিল্পীরাও বাড়িতে কাজ করে সেই সব পণ্য সরাসরি এখানে এনে পণ্য বিক্রি করতে পারবেন।
পরিকল্পনাকে ঘিরেও কিছু প্রশ্ন উঠেছে। প্রথমত, সমবায় তৈরি করতে গেলে নিয়ম মেনে তার রেজিস্ট্রেশন করা দরকার। সমবায় গঠনের নিয়ম বেশ জটিল এবং সময়সাপেক্ষ। দ্বিতীয়ত, সমবায় যদি স্টল নিতে চায় তা হলে রাজ্য শিল্পোন্নয়ন নিগম তাদের কী শর্তে স্টল দেবে এবং সেই টাকার ভার সমবায়ের পক্ষে বহন করা সম্ভব হবে কিনা সেটাও বিবেচনা করা করা দরকার। এই সব প্রশ্নের মীমাংসার জন্যই প্রশাসন আলোচনা চালাচ্ছে। জেলাশাসক বলেন, “জরি হাব দ্রুত চালু করার জন্য আমরা সব রকমের চেষ্টা চালাচ্ছি। আশা করি কোনও সমস্যা হবে না।” |