ভটকল নই, কোর্টে ধাঁধা ইয়াসিনের
পুলিশের চোখে ধুলো দিয়ে পালিয়ে যেতে জুড়ি ছিল না ইন্ডিয়ান মুজাহিদিনের অন্যতম প্রতিষ্ঠাতা ইয়াসিন ভটকলের। ধরা পড়ার পরে আজও পরিচয় নিয়ে বিভ্রান্তি তৈরির চেষ্টা করল সে।
দিল্লির এক আদালতে আজ নিজেকে মহম্মদ আহমেদ পরিচয় দেয় ইয়াসিন। তার আইনজীবীও দাবি করেন, তাঁর মক্কেলের ভুল পরিচয় দিয়েছে কেন্দ্রীয় গোয়েন্দা সংস্থা (এনআইএ)। আদালত ইয়াসিন ও তার সঙ্গী আসাদুল্লা আখতারকে ১২ দিন পুলিশি হেফাজতে রাখার নির্দেশ দিয়েছে।
গত বুধবার ভারত-নেপাল সীমান্তের রক্সৌল থেকে ইয়াসিন ও আসাদুল্লাকে গ্রেফতার করে এনআইএ ও বিহার পুলিশের যৌথ বাহিনী। বৃহস্পতিবার রাতে তাদের রাখা হয়েছিল পটনায় বিহার মিলিটারি পুলিশ ক্যাম্পাসে। সেখানে তাদের এনআইএ, আইবি ও ‘র’-এর গোয়েন্দারা জেরা করেন বলে খবর।
আজ দুপুর ১২ টা ৪০ মিনিটে পটনা থেকে বিশেষ বিমানে তাদের দিল্লি নিয়ে আসা হয়। তার আগে পটনায় এসে ইয়াসিনদের জিজ্ঞাসাবাদ করেন এনআইএ-র ডিজি শরদ কুমার। তিনি এর আগে বুদ্ধগয়ার বিস্ফোরণ নিয়ে তদন্ত করতে বিহারে এসেছিলেন। পুলিশ সূত্রে খবর, জেরায় বুদ্ধগয়ার বিস্ফোরণ নিয়ে তথ্য মেলায় স্বয়ং ডিজি তাদের জেরা করেছেন।
শুক্রবার নয়াদিল্লির আদালত চত্বরে ভটকল। ছবি: রয়টার্স।
বিহার পুলিশের একটি অংশের দাবি, জেরায় বুদ্ধগয়ায় বিস্ফোরণের দায় ইয়াসিন স্বীকার করে নিয়েছে। বিস্ফোরণের আগে সে নিজেই ওই এলাকায় ঘুরে গিয়েছিল। আতঙ্ক ছড়ানোর জন্য ইচ্ছে করেই তারা কম ক্ষমতাসম্পন্ন বিস্ফোরক ব্যবহার করেছিল বলেও জানিয়েছে ইয়াসিন। আবার মোতিহারির পুলিশ সুপার বিনয় কুমার জানিয়েছেন, বুদ্ধগয়া বিস্ফোরণের দায় স্বীকার করতে চায়নি ইয়াসিন। তবে এ নিয়ে আরও জিজ্ঞাসাবাদের প্রয়োজন আছে বলে মনে করেন বিনয় কুমার।
বুধবার ইয়াসিনকে গ্রেফতার করার সময়ে তার কাছ থেকে একটা ল্যাপটপ ও মোবাইল উদ্ধার করেছিল পুলিশ। এগুলি থেকে অনেক গুরুত্বপূর্ণ তথ্য পাওয়া যাবে বলে মনে করছেন গোয়েন্দারা।
এ দিনের জেরায় অবশ্য বেশ কিছু গুরুত্বপূর্ণ তথ্য উঠে এসেছে বলে দাবি তদন্তকারীদের। বিহার পুলিশের এক অফিসার জানিয়েছেন, জেরায় ইয়াসিন জানিয়েছে সে আইএসআইয়ের নির্দেশে কাজ করত। মাঝেমধ্যেই সে বৈঠক করত আইএসআই অফিসারদের সঙ্গে। পুলিশের দাবি, তার দুই ভাই রিয়াজ ও ইকবাল এখন পাকিস্তান ও দুবাইয়ে আছে বলে জানিয়েছে ইয়াসিন।
বিহারের দ্বারভাঙা, সমস্তিপুর এবং মধুবনিতে কাজ করার সময় দু’বছর আগে সমস্তিপুরের মহম্মদ ইরসাদ খানের মেয়েকে বিয়ে করে ইয়াসিন। তার স্ত্রী এবং সন্তান এখন দুবাইয়ে আছে বলে পুলিশ সূত্রে দাবি। ইয়াসিনের সঙ্গে যোগাযোগ রাখার অভিযোগে আগেই মহম্মদ ইরসাদ খানকে গ্রেফতার করেছে এনআইএ।
এনআইএ সূত্রে খবর, বিভিন্ন এলাকায় বিস্ফোরণ নিয়ে জেরা করার সময়ে ইয়াসিনের মধ্যে কোনও পরিবর্তন দেখা যায়নি। গোয়েন্দাদের মতে, একেবারেই কট্টর জঙ্গি সে। তাই বিস্ফোরণ ঘটানো নিয়ে তার মনে কোনও অনুশোচনা নেই। এক এনআইএ কর্তার কথায়, “আমদাবাদ, হায়দরাবাদ, দিল্লি, পুণে, মুম্বইয়ে বিস্ফোরণ ঘটানোর কথা অকপটে স্বীকার করেছে ইয়াসিন। জানিয়েছে, এই কাজের জন্য সে গর্বিত।”
গোয়েন্দা সূত্রে খবর, গত ঈদে স্ত্রীকে এক লক্ষ টাকা পাঠায় ইয়াসিন। ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টের মাধ্যমে পাঠানো হয় সেই টাকা। আর তাতেই সতর্ক হয়ে যান গোয়েন্দারা।
২০০৮ সালে আসাদুল্লা আখতার ইন্ডিয়ান মুজাহিদিনের ‘আজমগড় মডিউল’ চালু করে। সেই অভিজ্ঞতাকে কাজে লাগিয়ে ‘বিহার মডিউল’ শুরু করতে চেয়েছিল ইয়াসিন। এই বিষয়ে সে আসাদুল্লার অভিজ্ঞতাকে কাজে লাগিয়েছিল। জেরায় ইয়াসিন ‘বিহার মডিউল’ নিয়ে সে অনেক তথ্য জানিয়েছে বলে দাবি গোয়েন্দাদের।
এনআইএ গোয়েন্দারা জানিয়েছেন, দুবাই থেকে যে তার সংগঠনের জন্য টাকা আসত তা তাঁরা আগেই জানিয়েছেন। তবে সম্প্রতি সে জাল টাকার কারবারে পুরোপুরি যুক্ত হয়ে পড়েছিল বলে জানিয়েছে ইয়াসিন। গোয়েন্দাদের দাবি, পাকিস্তান থেকে বাংলাদেশ হয়ে নেপাল সীমান্তে টাকা আসত। সেখান থেকে তা আনা হত বিহার এবং উত্তরপ্রদেশে।
আজ ইয়াসিনদের দিল্লির আদালতে তোলা হলে আইনজীবী এম এস খান দাবি করেন, তাঁদের মক্কেলদের কোনও জঙ্গিযোগের প্রমাণ এনআইএ-র হাতে নেই। এনআইএ-র তরফে ইয়াসিনদের ১৪ দিনের পুলিশি হেফাজতের আর্জি জানানো হয়। ১২ দিন পুলিশি হেফাজতের নির্দেশ দেয় আদালত।
২০০৮ সালের ১৩ মে জয়পুরে ধারাবাহিক বিস্ফোরণের ঘটনায় ইয়াসিনের যোগ নিয়ে তদন্ত করার জন্য শীঘ্রই রাজস্থান থেকে পুলিশের একটি বিশেষ দল দিল্লি আসবে বলে জানিয়েছেন রাজস্থান সন্ত্রাসদমন শাখার এডিজি অলোক ত্রিপাঠী।
ইতিমধ্যেই ইয়াসিনের ঘটনায় রাজনীতির রং লেগেছে। আজ সমাজবাদী পার্টির নেতা কামাল ফারুকি বলেন, “সংখ্যালঘু বলেই হয়তো গ্রেফতার হতে হয়েছে ইয়াসিনকে।” এই মন্তব্যের জেরে বিতর্ক শুরু হয়। ফারুকির বিরুদ্ধে মুখ খোলে কংগ্রেস ও বিজেপি।

এই সংক্রান্ত আরও খবর...

পুরনো খবর:


First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.