সংস্কার আটকেছে বিজেপি, আক্রমণে মনমোহন
চরাচর সংসদে বিশেষ সরব হতে দেখা যায় না প্রধানমন্ত্রীকে। কিন্তু বিজেপি নেতারা আজ যখন দেশের বেহাল আর্থিক দশার দায় তাঁর ঘাড়েই চাপাতে চাইলেন, ক্ষোভে ফেটে পড়লেন মনমোহন সিংহ। সাফ বললেন, লাগাতার অধিবেশন ভন্ডুল করে চলেছেন বিরোধীরা। সংসদে এসে থমকে যাচ্ছে সংস্কারের যাবতীয় কর্মসূচি। বিনিয়োগকারীরা হতাশ হয়ে আস্থা হারাচ্ছেন। এরই বিরূপ প্রভাব পড়ছে অর্থনীতিতে। সুতরাং এই আর্থিক অচলাবস্থার দায় যদি কারও থাকে, তা বিজেপির।
চলতি অর্থনৈতিক ডামাডোল নিয়ে রাজ্যসভায় বিতর্কের জবাব দিতে গিয়ে আজ আবেগাপ্লুত হয়ে পড়েন প্রধানমন্ত্রী। বিজেপির উদ্দেশে বলেন, দুনিয়ার কোনও দেশের সংসদে বিরোধীদের এমন লাগাতার বিশৃঙ্খলার নজির নেই। মনমোহন জানতে চান, “বিশ্বে এমন কোনও দেশের কথা কি শুনেছেন, যেখানে বিরোধী সাংসদরা ওয়েলে নেমে স্লোগান দেন প্রধানমন্ত্রী চোর!”
মনমোহনের এই আচম্বিত আক্রমণে অবশ্য চুপ থাকেনি বিজেপি। পাল্টা গোলা বর্ষণ করে রাজ্যসভায় বিরোধী দলনেতা অরুণ জেটলি বলেন, “এমন কোনও গণতন্ত্রের কথাও কি আপনারা শুনেছেন, যেখানে প্রধানমন্ত্রীকে ঘুষ দিয়ে আস্থাভোট কিনতে হয়?” পরে অবশ্য প্রধানমন্ত্রীর বক্তৃতা থেকে ‘চোর’ ও জেটলির বক্তৃতা থেকে ‘ঘুষ’ শব্দটি রাজ্যসভার কার্যবিবরণী থেকে বাদ দেওয়া হয়।
প্রথম ইউপিএ জমানা থেকেই মনমোহনকে দুর্বল প্রধানমন্ত্রী বলে কটাক্ষ করে গিয়েছেন আডবাণী-জেটলিরা। তার পর দ্বিতীয় ইউপিএ জমানায় প্রথমে টেলিকম কেলেঙ্কারি, পরে কয়লা খনি বণ্টনে দুর্নীতির দায় প্রধানমন্ত্রীর ঘাড়ে চাপাতে চেয়েছে বিজেপি। কয়লা কেলেঙ্কারি নিয়ে বিজেপির হট্টগোলে এ বারও বাদল অধিবেশনের একটা বড় সময় নষ্ট হয়েছে। বিজেপি সাংসদরা ওয়েলে নেমে ‘মনমোহন চোর হ্যায়’ স্লোগান তুলতেও ছাড়েননি।
মনে করা হচ্ছে, এই ব্যক্তিগত আক্রমণের জবাব দিতেই আজ ফুঁসে উঠেছেন প্রধানমন্ত্রী। যদিও কংগ্রেস নেতৃত্বের বক্তব্য, বিষয়টি তা নয়। নব্বইয়ের দশকে অর্থমন্ত্রী হিসেবে আর্থিক উদারীকরণের নীতি প্রণয়ন করে উন্নয়নের দিশা দেখিয়েছিলেন মনমোহন। কিন্তু সেই মনমোহনই প্রধানমন্ত্রী হওয়ার পর সংস্কারের ঘোড়া ছোটাতে গিয়ে বারবার হোঁচট খেয়েছেন। দলের দিক থেকে সামাজিক সুরক্ষা প্রকল্প ও জনমোহিনী পদক্ষেপ নেওয়ার চাপ তো রয়েইছে, পদে পদে বাগড়া দিয়ে গিয়েছেন শরিকরাও। আবার যে বিজেপি আর্থিক উদারীকরণের মতে বিশ্বাসী, তারাও রাতারাতি অবস্থান বদলে নানা ছুতোনাতায় সংস্কারের বিরোধিতা করে চলেছে। প্রত্যক্ষ বিদেশি লগ্নিই হোক বা পেনশন-বিমা বিলবামপন্থীদের মতো রীতিমতো কট্টর বিরোধিতায় নেমেছেন যশবন্ত সিনহা-সুষমা স্বরাজরা। স্পেকট্রাম দুর্নীতি বা কয়লা কেলেঙ্কারি নিয়েও এমন ‘গেল গেল’ রব তোলা হয়েছে, যে বিদেশি বিনিয়োগকারীরা সন্ত্রস্ত হয়ে পড়েছে। কংগ্রেসের এক শীর্ষনেতা বলছেন, এমনিতেই আন্তর্জাতিক বাজার মন্দা, তার ওপর বিরোধীদের এই সার্বিক মহা-হট্টগোলে বিদেশি লগ্নি যখন আতঙ্কে মুখ ফেরাচ্ছে, দেশের অর্থনীতি মুখ থুবড়ে পড়ার দায় চাপানো হচ্ছে প্রধানমন্ত্রীর ঘাড়ে। এই সম্মিলিত হতাশাই আজ প্রধানমন্ত্রীর বক্তৃতায় ফলঝুরির মতো ঝরে পড়েছে বলে মনে করছেন কংগ্রেস নেতৃত্ব।
দেশের চলতি আর্থিক পরিস্থিতি নিয়ে আজ সংসদের দুই সভাতেই বিবৃতি দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী। বলেছেন, “চিন্তার কারণ নেই। দেশের অর্থনীতির মৌলিক বিষয়গুলি এখনও অটুট।” কিন্তু মনমোহনের ওই বিবৃতির সমালোচনাতেই সরব হন বিরোধী দলনেতা অরুণ জেটলি। বলেন, “দেশের আর্থিক সঙ্কটের কারণ ও তার দাওয়াই নিয়ে প্রধানমন্ত্রী কিছুই বললেন না, কেবল মেঠো রাজনৈতিক বক্তৃতাই দিয়ে গেলেন।”
জেটলি এ কথাও বলেন, ইউপিএ-র আর্থিক নীতি নিয়ে ইদানিং সরকারের মন্ত্রীরাই পূর্বতন অর্থমন্ত্রীর (প্রণব মুখোপাধ্যায়) সমালোচনা করছেন। কিন্তু প্রধানমন্ত্রী তখন কী করছিলেন? অর্থমন্ত্রী হিসাবে দেশ মনমোহনকে মনে রেখেছে, কিন্তু প্রধানমন্ত্রিত্বের মেয়াদ শেষ হওয়ার পরেই মানুষ তাঁকে ভুলে যাবে।
এর পরেই ক্ষোভে ফেটে পড়ে পাল্টা জবাব দেন মনমোহন। বিজেপি তাঁর রাজনৈতিক কর্তৃত্ব নিয়ে প্রশ্ন তোলায় মনমোহন আজ শুনিয়ে দেন, মন্ত্রিসভার সদস্যরা তাঁকে কতটা মর্যাদা ও সম্মান দেন। এমনকী জি-২০ গোষ্ঠীর মঞ্চেও তাঁর বক্তব্য কতটা গুরুত্ব দিয়ে শোনেন উন্নত ও উন্নয়নশীল দেশের রাষ্ট্রপ্রধানরা।
তবে সংসদের চৌহদ্দিতেই সীমাবদ্ধ না থেকে বিকেলে সোশ্যাল সাইটেও ছড়িয়ে পড়ে প্রধানমন্ত্রী বনাম বিজেপির এই লড়াই। লোকসভায় বিরোধী দলনেতা সুষমা স্বরাজ টুইটারে মন্তব্য করেন, “টাকা মূল্য হারাচ্ছে, আর প্রধানমন্ত্রী হারাচ্ছেন তাঁর মর্যাদা।” একটুও দেরি না করে জবাব দিয়েছেন তথ্য ও সংস্কৃতি মন্ত্রী মণীশ তিওয়ারি, “সুষমাজি, প্রধানমন্ত্রী মর্যাদা হারাননি। বাস্তব হল, বিজেপি তার জনপ্রিয়তা হারিয়েছে, হতাশা তাদের ঘিরে ধরেছে এবং বিরোধী নেত্রী দলে তাঁর গুরুত্ব হারিয়েছেন।” কংগ্রেস নেতা অজয় মাকেনও
টুইটারে মনমোহনের হয়ে সওয়াল করে লিখেছেন, “প্রধানমন্ত্রী বিজেপির মুখের সামনে আয়না তুলে ধরেছেন। ১৯৯৯ থেকে ২০০৪-এ কংগ্রেস বিরোধী পক্ষে থাকার সময়ে লোকসভার ১৮.৯৫ শতাংশ সময় নষ্ট হয়েছিল। এখন সেটা ৩৬.৭ শতাংশে দাঁড়িয়েছে।”
প্রধানমন্ত্রীর আক্ষেপের পরেও অবশ্য সংসদের উভয়কক্ষে আজ যথারীতি হট্টগোল হয়েছে, হয়েছে সময় নষ্টও। এমনকী টাকার দাম কমা ও অর্থনৈতিক সঙ্কট নিয়ে তৃণমূল সাংসদরা আজ স্লোগান দিয়ে লোকসভার অধিবেশন ভন্ডুল করে দেন। তার আগে সংসদে গাঁধী মূর্তির পাদদেশে ধর্নায় বসেন তৃণমূল সাংসদরা।

এই সংক্রান্ত আরও খবর...


First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.