|
|
|
|
সন্ত্রাসবাদীর বাবা হয়ে বাঁচতে চাই না: জারার |
নিজস্ব প্রতিবেদন |
উত্তর কর্নাটকের সমুদ্রঘেঁষা ছোট্ট শহর ভটকল। এখানেই সিদ্দিবাপ্পাদের বাড়ি। লোকে বলে, ‘সন্ত্রাসের কারখানা’।
নিচু স্বরে বলে চলেছেন বৃদ্ধ। নাম জারার সিদ্দিবাপ্পা। তাঁর বছর তিরিশের জোয়ান ছেলে আহমেদকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। তবে আহমেদ নয়, ইয়াসিন ভটকল নামেই কুখ্যাত সে। দুই ভাইকে নিয়ে জঙ্গি সংগঠন ইন্ডিয়ান মুজাহিদিন তৈরি করেছিল। আর তার পর ৭ বছর ধরে দেশ জুড়ে পরপর বিধ্বংসী বিস্ফোরণ ঘটিয়ে এসেছে।
ইয়াসিন ভটকল ধরা পড়ার পর পরিবারের তরফে জানানো হয়েছিল, “ইয়াসিনকে গ্রেফতার করায় নিশ্চিন্ত লাগছে। ভেবেছিলাম, হঠাৎ শুনব ভুয়ো সংঘর্ষে ওকে মেরে ফেলেছে পুলিশ।”
কিন্তু আজ প্রকাশ পেল মনের কথা। জারার সিদ্দিবাপ্পা জানালেন এখনও মনে মনে ভাবছেন, আহমেদ না হয়ে যদি অন্য কেউ হয়! তিনি সন্ত্রাসবাদীর বাবা হয়ে বাঁচতে চান না। |
|
জারার সিদ্দিবাপ্পা |
১৯৮৩-এ ভটকলের এক স্বচ্ছল মুসলিম পরিবারে জন্ম ইয়াসিনের। বাড়ির বড় ব্যবসা দুবাইয়ে বড় হয়ে উঠছিল। ইয়াসিনকে ভাল স্কুলে ভর্তি করেন তার বাবা। স্কুলের গণ্ডি পেরিয়ে কর্নাটক কলেজে ভর্তি হয় ইয়াসিন। ভাল ছাত্র হিসেবে সুখ্যাতিও ছিল তার। শোনা যায়, ’৯০-এর দশকে সাম্প্রদায়িক দাঙ্গা, ভটকলের অশান্ত পরিবেশে ক্রমে বদলে যায় তার জীবন। ছেলেটার এ হেন পরিবর্তন ভাল চোখে দেখেনি সিদ্দিবাপ্পা পরিবার। এ সব থেকে দূরে সরাতে দুবাইয়ে পাঠিয়ে দেওয়া হয় ইয়াসিনকে। জারারও তখন দুবাইয়ে। ও দেশে থেকে ব্যবসা সামলাচ্ছিলেন তিনি। ছেলেকে ব্যবসার কাজে যুক্ত করেন। কিন্তু লাভ হয়নি।
এ দিন জারার সিদ্দিবাপ্পা বললেন, “সাত বছর হল ওকে দেখিনি। এখানে থাকার সময়, ও কিন্তু ভাল ছেলে ছিল। ব্যবসার কাজে দুবাই গেল। আর তার পর কোথায় যেন হারিয়ে গেল।”
সিদ্দিবাপ্পা পরিবারের জীবনটা দুঃস্বপ্ন হয়ে গিয়েছে তার পর থেকেই। জারার বললেন, “আমরা একঘরে হয়ে গিয়েছি। কেউ আমাদের সঙ্গে কথা বলে না। আত্মীয়স্বজন আসে না। আমাদের দিকে সবাই সন্দেহের নজরে তাকান। প্রত্যেক দিন একটু একটু করে মৃত্যুর দিকে এগিয়ে যাচ্ছি।”
জারারের কথায়, “আমি জানি না ও আমার ছেলে কি না। আজ পুলিশ এসে ইয়াসিনের গ্রেফতারের নোটিস ধরিয়ে গিয়েছে। ওকে এক বার দেখতেই হবে।” ওই যে তাঁর সন্তান, না দেখলে বিশ্বাস করতে পারছেন না বৃদ্ধ। ফের বললেন, “ও যখন এখানে ছিল, কত ভাল ছেলে ছিল।”
আর এক ছেলে সামাদকে নিয়েও আতঙ্কে ভোগেন তিনি। ইয়াসিন ভেবে ২০১০-এ সামাদকে গ্রেফতার করেছিল পুলিশ। তা ছাড়া সামাদও তো সেই ভটকল ভাইদের এক জন। সব সময়ই নজরবন্দি। “সামাদের জীবনটাও নষ্ট হয়ে গিয়েছে।” বললেন জারার।
এখনও ছেলেকে জঙ্গি ভাবতে নারাজ জারার। “এক বার নিশ্চিত হই ও আমাদের ছেলে, কিছু একটা করবই। আমার বিশ্বাস ও নিরপরাধ। ওকে বাঁচাতে আমাদের তরফে যা যা করা উচিত নিশ্চয় করব।” তবু তাঁর কথায় হতাশা ঝরে পড়ছিল।
ভটকল শহরটা অবশ্য এমনটা ভাবছে না। আর কোনও ইয়াসিনের শহর হতে চায় না তারা। বরং সে অধ্যায় ভুলে নিজেদের মতো করে বাঁচতে চায়। ইয়াসিনের নাম ধরেই শহরটার গায়ে জড়িয়ে গিয়েছে ‘সন্ত্রাসের আখড়া’-র তকমা। তার গ্রেফতারের সঙ্গে সঙ্গেই সে দুর্নাম থেকে মুক্তি চায় ভটকল। |
|
|
|
|
|