|
|
|
|
বাড়ির খোঁজে উত্তরাখণ্ডের মাসি ফিরছেন কলকাতায় |
রাজীবাক্ষ রক্ষিত • গুয়াহাটি |
উত্তরাখণ্ডের বিপর্যয় থেকে বেঁচে দীর্ঘ দিন ছিলেন স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনের আশ্রয়ে। শেষে ঘরে ফেরার আশায় অসম পাড়ি দিয়েছিলেন ৭৩ বছরের গোলাপি সরকার। গুয়াহাটিতে পৌঁছে কিন্তু তাঁর রাত কাটল আরামে নিজের বিছানার নয়, রেল স্টেশনে। বৃদ্ধার স্মৃতিবিভ্রাটের জন্যই হোক,
বা স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনের সদস্যদের সঙ্গে ভুল বোঝাবুঝির জেরেই হোক, গুয়াহাটি থেকে বৃদ্ধাকে ফের ফিরতে হচ্ছে কলকাতায়। আবারও ঘরের খোঁজে।
উত্তরাখণ্ডে প্রকৃতির রোষে চোখের সামনে সন্তানকে ভেসে যেতে দেখেছিলেন গোলাপিদেবী। সঙ্গী দুই প্রতিবেশীর থেকেও বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছিলেন। তাঁর নিবাস ‘শান্তিপুর’ জানালে এক স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন তাঁকে পৌঁছে দেয় নদিয়ার শান্তিপুরে। রানাঘাটে ওই সংগঠনের চক্ষু হাসপাতালে কিছু দিন কাটান তিনি। সেখানে তাঁর পরিচয়ই হয়ে যায়, ‘উত্তরাখণ্ডের মাসি।’ নদিয়ার শান্তিপুরে তাঁর বাড়ি খোঁজ করেও পাওয়া যায়নি। তাঁর কথা থেকে অন্যরা আন্দাজ করতে পারেন, গোলাপিদেবীর বাড়ি অসমের মঙ্গলদইয়ের শান্তিপুর। সেই সূত্র ধরেই, মঙ্গলবার ট্রেনে তাঁকে পাঠানো হয় অসমের গুয়াহাটিতে।
বুধবার অবশ্য অসম পুলিশ জানতে পারে, এক সময়ে মঙ্গলদই শহরের বাসিন্দা থাকলেও, বছর সাতেক আগে সব বিক্রি করে গোলাপি সরকারের পরিবার কলকাতা পাড়ি দিয়েছে। মানসিক বিভ্রান্তিতে পুরনো বাড়ির নাম বলেছিলেন তিনি। তাই শোকে-দুঃখে বিপর্যস্ত গোলাপিদেবীকে বৃহস্পতিবার রাতের ট্রেনে কলকাতাতেই ফেরত পাঠানো হল। |
|
গুয়াহাটি স্টেশনে গোলাপি সরকার। —নিজস্ব চিত্র |
বুধবার কামরূপ এক্সপ্রেসে গুয়াহাটি স্টেশনে পৌঁছনোর পরেই গোলাপিদেবীর আচরণে বিভ্রান্তি লক্ষ করা যায়। তাঁর কথাতেই জানা যায়, নিজের চোখে তিনি দেখেছেন ছোট ছেলে মানিকের মৃতদেহ থেকে কী ভাবে খুলে নেওয়া হয়েছে আংটি। দেখেছেন লুঠ হয়ে গিয়েছে তাঁর ব্যাগপত্র। তাই মানুষের উপরে বিশ্বাস হারিয়েছেন। বুধবার বিকাল থেকেই গুয়াহাটি স্টেশনে, ওই স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনের স্থানীয় প্রতিনিধিরা গাড়ি-সহ হাজির ছিলেন। কিন্তু ট্রেন থেকে নামতেই রাজি হচ্ছিলেন না বৃদ্ধা। জোর করে প্ল্যাটফর্মে নামাবার পরেও তিনি কিছুতেই গাড়িতে মঙ্গলদই যেতে রাজি হননি। স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনের গুয়াহাটি শাখার সভাপতি রতন গোয়েন্কা বলেন, “সঠিক ঠিকানা না জানায় সন্ধ্যার পর ওঁকে নিয়ে জোর করে কোথাও পাঠাবার ভরসা পেলাম না। তাই রেল পুলিশের দ্বারস্থ হই।”
ততক্ষণে ওই বৃদ্ধা রীতিমতো হিংস্র হয়ে উঠেছেন। কোনও পুরুষ ব্যাগে হাত দিতে চাইলেই এলোপাথাড়ি মারছেন। কখনও কাঁদছেন হাউহাউ করে। কামরূপ মহানগরের এসএসপি আনন্দপ্রকাশ তিওয়ারি ওই বৃদ্ধার ঘর খোঁজার জন্য ‘বীরাঙ্গনা’ বাহিনীর চার মহিলা জওয়ান, এক জন এসআই ও এসকর্ট গাড়ি পাঠান। কিন্তু, জিআরপির ওসি গিরীশ বরা মঙ্গলদই পুলিশের কাছ থেকে জানতে পারেন, ওই বৃদ্ধার ব্যাগে ওই শহরের বনদুর্গা মন্দিরের কাছের যে ঠিকানা দেওয়া ছিল সেই ঠিকানায় আর সরকার পরিবারের কেউ থাকেন না। বড় ছেলে নিমাই সরকার কলকাতায় থাকেন। ছোট ছেলে মানিক মায়ের সঙ্গে উত্তরাখণ্ডে গিয়েছিলেন। দুই কন্যা রূপা ও অলকার বিয়ে হয়ে গিয়েছে। তাঁদেরও সন্ধান মেলেনি।
গোলাপিদেবী নিজে বিক্ষিপ্ত ভাবে বলেন, “ওরা আমার চোখের সামনে মরা ছেলের হাত থেকে আংটিগুলো বের করে নিল। আমার সব কেড়ে নিল। যখনই কাউকে বিশ্বাস করেছি, ঠকেছি। আর কাউকে বিশ্বাস নেই। আমায় কলকাতা পাঠানো হচ্ছে ভেবেছিলাম। তোমরা আমায় গুয়াহাটি নিয়ে এলে কেন? আমি মঙ্গলদই যাব না। আমি বড় ঘরের বউ। এই ভাবে আমায় রাস্তায় পড়ে থাকতে হবে কখনও ভাবিনি।” শেষ অবধি, আরপিএফ-এর মহিলা জওয়ানরা তাঁকে শান্ত করেন। ওসি গিরীশবাবু বলেন, “মানসিক ভাবে ভেঙে পড়লেও, বৃদ্ধা কলকাতায় থাকেন, তা নিশ্চিত করেই বলছেন। আমাদের প্রাথমিক তদন্তেও তা জানা গিয়েছে। আপাতত তিনি আমাদের কাছে শান্ত আছেন। খাওয়া-দাওয়াও করেছেন।” রতন গোয়েন্কা জানান, কাল পুলিশের সাহায্যে বৃদ্ধাকে গুয়াহাটি স্টেশনেই রাখতে হয়। বৃহস্পতিবার রাতে তাঁদের প্রতিনিধিরা বৃদ্ধাকে কলকাতা পাঠাবার ব্যবস্থা করেছেন। কলকাতায় স্বেচ্ছাসেবকেরা বৃদ্ধার বর্তমান ঠিকানার সন্ধান করবেন। |
পুরনো খবর: পাহাড়ি ধসে দিশাহারা বৃদ্ধা খুঁজে পেলেন তাঁর শান্তিপুর |
|
|
|
|
|