দীর্ঘ দিনের দাবি ছিল সেতু সংস্কারের। কিন্তু সংস্কারের জন্য সেতু ভাঙার কাজ শুরু হতেই স্থানীয় বাসিন্দাদের দুর্ভোগ চরমে পৌঁছেছে। সপ্তাহ দুয়েক আগে হলদিয়া-মেচেদা রাজ্য সড়কে হিজলি টাইডাল খালের ওপর ওই সেতুটি ভাঙার কাজ শুরু হয়। ফলে এখন ঘুরপথে রাজ্য সড়কে উঠতে হওয়ায় সমস্যা বেড়েছে। ছোট যানের জন্য পূর্ত দফতর রেল সেতুর পাশে একটি কাঠের অস্থায়ী সেতু নির্মাণও করে দিয়েছে। কিন্তু সেটি ব্যবহার না করে সঙ্কীর্ণ কলেজ রোড দিয়ে যানবাহন যাতায়াত করায় যানজট বাড়ছে।
পঞ্চাশের দশকের শেষের দিকে রাজ্য সড়কে হিজলি টাইডাল খালের ওপর এই সেতু তৈরি হয়। ১৯৯০ সালের পর থেকেই সংস্কারের অভাবে সেতুটি বিপজ্জনক হতে শুরু করে। গত বছরের ২৭ জুন স্থানীয় তৃণমূল বিধায়ক তথা রাজ্যের পূর্তমন্ত্রী সুদর্শন ঘোষ দস্তিদার সেতুটি নতুন ভাবে গড়ার জন্য শিলান্যাস করেন। ঠিক হয়, প্রায় সাড়ে ৪ কোটি টাকা ব্যায়ে নতুন সেতুটি গড়ে তোলা হবে। কিন্তু বছর ঘুরলেও কাজ এগোয়নি।
সপ্তাহ দুয়েক আগে দেড় বছরের ‘ওয়ার্ক ওর্ডারে’ কাজ শুরু হয়। ঠিক হয় বাস-সহ বড় যানগুলি এলাকার তেরপেখ্যা মোড় থেকে কাপাসএড়্যা দিয়ে ৪১ নম্বর জাতীয় সড়ক ধরে নন্দকুমারের দিকে যাবে। পূর্ত দফতর রেল সেতুর পাশে একটি কাঠের অস্থায়ী সেতু নির্মাণ করে। ছোট যানবাহন গেঁওখালির রাস্তা হয়ে ওই কাঠের সেতু দিয়ে ব্লক প্রশাসনিক অফিসের পাশ দিয়ে রাজ্য সড়কে ওঠার কথা ঠিক হয়। কিন্তু ম্যাজিক ভ্যান, ট্রেকার-সহ যাবতীয় ছোট যানবাহনগুলি তা ব্যবহার না করে সিনেমা মোড় থেকে কলেজ রোড হয়ে পুরনো বাজার দিয়ে গিয়ে উঠছে রাজ্য সড়কে। ফলে সঙ্কীর্ণ কলেজ রোডে যানজট বাড়ছে। কলেজ রোডের ধারে অনেক স্কুল-কলেজ থাকায় দুর্ঘটনাও ঘটছে। স্থানীয় বাসিন্দা নান্টু চক্রবর্তীর কথায়, “মেয়ে সাইকেলে করে স্কুলে যায়। তাই সবসময় দুশ্চিন্তায় থাকি। ওই রাস্তায় যান নিয়ন্ত্রণে প্রশাসনের ব্যবস্থা নেওয়া উচিত।” এ দিকে হলদিয়া মহিষাদলে আসা বাসগুলি তেরপেখ্যা মোড় পর্যন্ত চলছে। ফলে তেরাপেখ্যা মোড় থেকে মহিষাদলে আসতে নাকাল হতে হচ্ছে নিত্যযাত্রীদের। মেচেদা থেকে মহিষাদলে আসা বাসগুলিও পুরনো বাসস্ট্যান্ড পর্যন্ত আসায় গন্তব্যস্থলে পৌঁছতে সমস্যার মুখে পড়ছেন যাত্রীরা।
রাজ কলেজের অধ্যাপক শেখর ভৌমিক, ব্লক অফিসের কর্মী সন্ধ্যা তুঙ্গ বলেন, “আমাদের এত সময় নেই যে এভাবে আগামী দেড় বছর ঘুরপথে এসেও তেরপেখ্যা বা পুরনো বাসস্ট্যান্ড থেকে এতটা পথ হেঁটে যাব। তাই সেতুর আগে পর্যন্ত বাস চালানো হোক। এছাড়া একটা অস্থায়ী পায়ে চলার সেতু তৈরি করা প্রয়োজন।” মহিষাদলের ব্লক প্রশাসনিক আধিকারিক প্রদ্যুতকুমার পালই বলেন, “অভিযোগ পেয়েছি। আমি উর্ধ্বতন আধিকারিকদের বিষয়টি জানিয়েছি। আমি পুলিশের সঙ্গেও যান নিয়ন্ত্রণের বিষয়ে কথা বলব। একটা কাঠের সেতু পূর্ত দফতরের করা উচিত।”
পূর্ত দফতরের এগ্জিকিউটিভ ইঞ্জিনিয়ার শঙ্কর নারায়ণ সাহার দাবি, “আমরা একটা কাঠের সেতু তৈরি করে দিয়েছি। কিন্তু সেটি কেউ ব্যবহার না করায় সমস্যা বাড়ছে। পথ চলার অস্থায়ী সেতু করার চিন্তাভাবনা করছি।” হলদিয়ার পুলিশ সুপার অমিতাভ মাইতি বলেন, “যানজটের কথা মাথায় রেখে অতিরিক্ত সিভিল পুলিশ দেওয়া হয়েছিল। আমি ওসি ও মহকুমাশাসকের সঙ্গে কথা বলে বৈঠক ডেকে সমস্যা সমাধানের
চেষ্টা করব।” |