এমনিতে নিজের জন্মদিন তেমন পালন-টালন করেন না তিনি। তবে এ বার করবেন। করবেন নিজের ও দলের রাজনৈতিক লক্ষ্য পূরণের দিকে আর এক ধাপ এগোতে।
অন্যান্য বার জন্মদিনে আর পাঁচটা দিনের মতোই কাজে ডুবে থাকতে দেখা গিয়েছে তাঁকে। এক বার শুধু অনেক জোরাজুরিতে ইটালিয়ান পেস্ট্রি শপ থেকে ‘এগ-লেস’ কেক আনিয়ে খাইয়েছিলেন সবাইকে। ব্যস! ওইটুকুই। তবে প্রতি জন্মদিনে নিয়ম করে মায়ের কাছ থেকে আশীর্বাদ নিয়ে আসেন নরেন্দ্র মোদী।
জন্মদিন থেকে উৎসব-আড়ম্বরকে দূরে রাখতে চাইলেও রাজনীতিকে কিন্তু সরিয়ে রাখেননি মোদী। দু’বছর আগে তিনি ‘সদ্ভাবনা মিশন’ শুরু করেছিলেন নিজের জন্মদিনে। এখন তিনিই দলের অঘোষিত কাণ্ডারী। নিজের ভাগ্য তো বটেই, গোটা দলের ভাগ্যও এখন অনেকটাই নির্ভর করছে তাঁর উপরে। ভোট বছরে তাই জবরদস্ত জাঁকজমকে মোদীর জন্মদিন পালন করতে চান বিজেপি-র কর্মীরা। এমন বড় আড়ম্বর যাতে গোটা দেশ হয়ে ওঠে মোদীময়। গত বার রাজ্যে বিধানসভা নির্বাচন ছিল বলে মোদী তাঁর জন্মদিন পালন করতে দেননি। কিন্তু এ বারে ছাড়ার পাত্র নন কর্মীরা।
মোদীও এ বার না করেননি। তিনি জানেন, তাঁকে ঘিরে কর্মীদের আবেগ থাকলেও সামনের পথ বিস্তর কঠিন। তাই কর্মীদের এই আবেগকে কাজে লাগাতে পারলে আখেরে লাভ তাঁরই। এ জন্য তাঁর জন্মদিনকে ঘিরে উচ্ছ্বাসকে বিজেপি-র কর্মসূচিতে বদলে নেওয়ার দাওয়াই দিয়েছেন তিনি। কর্মীদের নির্দেশ দিয়েছেন, ঘটা করে যদি জন্মদিন পালন করতেই হয়, তা হলে সেটিকে গঠনমূলক কাজে লাগানো হোক। ১৭ সেপ্টেম্বর তাঁর জন্মদিন থেকে ২৫ সেপ্টেম্বর দীনদয়াল উপাধ্যায়ের জন্মদিন পর্যন্ত টানা ন’দিন ধরে নেওয়া হোক ঠাসা কর্মসূচি। জন্মদিনও পালন হবে, মজবুত করা যাবে সংগঠনও। ভোট বছরে যেটা খুব জরুরি দল ও মোদী উভয়ের পক্ষেই।
ঠিক কী দাওয়াই দিয়েছেন মোদী?
ভোটব্যাঙ্ক বাড়াতে বিজেপি-র যুব-কৃষক-মহিলা সব মোর্চাকে ঝাঁপাতে বলেছেন তিনি। এই কর্মীরা বুথ স্তর পর্যন্ত ছড়িয়ে পড়বেন নতুন সদস্য জোগাড় করতে। বিশেষ নজর থাকবে তরুণ প্রজন্মের দিকে। শুধু গুজরাতেই এই ন’দিনে ১ লক্ষ যুবককে সামিল করার লক্ষ্যমাত্রা দিয়ে রেখেছেন মোদী। তাঁর নির্দেশ, পঞ্চায়েত স্তরে গিয়ে মানুষকে বোঝাতে হবে কংগ্রেসের ব্যর্থতা। রক্তদান ও চিকিৎসা শিবির বা বৃক্ষরোপণের মতো সামাজিক কাজের মাধ্যমে পাশে টানতে হবে মানুষকে। মোদী-ঘনিষ্ঠ এক নেতার কথায়, “দলের কিছু শীর্ষ নেতা এখনও গোঁ ধরে থাকলেও মোদীই দলের ভবিষ্যৎ। ফলে তাঁর জন্মদিনকে ঘিরে যে নির্দেশ মোদী দিয়েছেন, তাতে দলেরই লাভ হবে। ব্র্যান্ড মোদীকে সামনে রেখেই আমরা এখন এগোচ্ছি।”
শুধু জন্মদিনই নয়, মোদীকে নিয়ে একটি পূর্ণ দৈর্ঘ্যের ছবি তৈরিরও পরিকল্পনা হচ্ছে। লোকসভা ভোটের আগেই যাতে ছবিটি মুক্তি পায় তার জন্য এক অনাবাসী গুজরাতি কাজও শুরু করে দিয়েছেন ইতিমধ্যেই। গুজরাতের অখ্যাত এক স্টেশন ভদনদরের পাশে বাবার চায়ের দোকানে কাজ করা থেকে কী ভাবে উত্থান হয়েছে মোদীর, সেটাই তুলে ধরা হবে এই ছবিতে।
মোদীকে এর আগেও বহু ভাবে পণ্য করেছে বিজেপি-র কর্মী ও সমর্থকরা। মোদী টি-সার্ট, মোদী টুপি, মোদী কাপ ইতিমধ্যেই ছেয়ে গিয়েছে সমর্থকদের মধ্যে। হায়দারাবাদে মোদীর সভায় বেনজির ভাবে প্রবেশমূল্য বসানো হয়েছে উত্তরাখণ্ডের ত্রাণে অর্থ সংগ্রহ করতে। এ বারে মোদীর জন্মদিনকেও ইভেন্ট বানিয়ে ভোটব্যাঙ্ক বাড়াতে ঝাঁপাচ্ছে তাঁর দল।
|