দার্জিলিঙের সাম্প্রতিক আন্দোলনে চায়ের ভবিষ্যত নিয়ে উদ্বিগ্ন চা পর্ষদ। দেশের চা রফতানির সিংহভাগই যোগান দেয় দার্জিলিং। সে কারণে পাহাড়ে ফের লাগাতার বন্ধ শুরু হওয়ায় কেন্দ্রীয় সরকারের তরফে পদক্ষেপ করার জন্য পর্ষদের শীর্ষস্তর থেকে অনুরোধ করা হয়েছে। দার্জিলিঙের চা পাতা বোঝাই গাড়ি চলাচলের ব্যবস্থা করতে মোর্চাকে চা পর্ষদ সূত্রে আর্জি জানানো হতে পারে বলে জানা গিয়েছে। তবে কেন্দ্রীয় সরকারের অনুমতি মিললেই পর্ষদ মোর্চার সঙ্গে যোগাযোগ করতে পারে বলে কয়েকটি চা মালিক সংগঠনের সূত্রে ইঙ্গিত মিলেছে।
চা পর্ষদের উত্তরবঙ্গের উপ অধিকর্তা কল্যাণকুমার ভট্টাচার্য অবশ্য এ বিষয়ে সরাসরি কিছু বলতে চাননি। শুক্রবার জলপাইগুড়িতে একটি অনুষ্ঠানে যোগ দিয়ে কল্যাণবাবু বলেন, “দার্জিলিঙের বর্তমান অস্থিরতার কারণে চা শিল্পে কিছু প্রভাব পড়েছে। দার্জিলিং চায়ের বেশিরভাগটাই রফতানি করা হয়। সে কারণে দার্জিলিং চা বাজারে না এলে খুবই সমস্যার কথা। তবে আমরা আশা করছি দ্রুত পরিস্থিতি স্বাভাবিক হবে।” |
ক্ষুদ্র চা চাষিদের পরিচয়পত্র বিলি করার অনুষ্ঠান জলপাইগুড়িতে। ছবি: সন্দীপ পাল। |
পৃথক গোর্খাল্যাণ্ডের দাবিতে গত মাসের শেষ থেকে শুরু হওয়া টানা আন্দোলনে ক্ষতির মুখে পড়ছে পাহাড়ের চা বাগানগুলি। বাগান সূত্রে খবর, অনেক বাগানেই উৎপাদন প্রায় বন্ধ হয়ে যেতে বসেছে। চা বাগানকে বন্ধ বা অন্য আন্দোলন থেকে ছাড় দেওয়া হলেও বাগানগুলিতে পাতা তোলা ছাড়া আর কোনও কাজ হচ্ছে না বলে পর্ষদ সূত্রে জানানো হয়েছে। তৈরি চা পাতা বাগান থেকে বের না হওয়ায় অধিকাংশ বাগান কর্তৃপক্ষই উৎপাদন বন্ধ করে দেওয়ার চিন্তাভাবনা করছে বলে পর্ষদকে জানিয়েছে। কয়েকটি বাগান কর্তৃপক্ষই ইতিমধ্যেই উৎপাদন বন্ধ করে দিয়েছেন বলে জানা গিয়েছে।
পর্ষদ সূত্রে জানা গিয়েছে দেশের একটি অন্যতম নামী ব্র্যাণ্ডের চা পাতা প্রস্তুতকারী সংস্থার কারখানায় চলতি মাসের মাঝামাঝি অন্তত ৩০ হাজার কেজি চা পাতা তৈরি হয়ে কারখানায় পড়ে ছিল। সংস্থার তরফে কেন্দ্রীয় সরকারের একটি শীর্ষমহলেও যোগাযোগ করা হয়। স্থানীয় মোর্চা নেতৃত্বের সঙ্গে যোগাযোগ করেও কোনও সুরাহা হয়নি। শেষে সমাধানসূত্র খুঁজে বের করতে মোর্চার এক প্রভাবশালী নেতার সঙ্গে যোগাযোগ করা হয়। সেখানেও সদর্থক কোনও সাড়া না পাওয়ায় সংস্থার তরফে উপাদন বন্ধ করে দেওয়ার সিদ্ধান্ত হয়। তবে গত ১৫ অগস্টের সময়ে চার দিন বন্ধ শিথিল করা হলে, চা পাতা বাইরে নিয়ে যাওয়া হয়। ফের পাহাড়ে টানা আন্দোলন শুরু হওয়ায় একই ধরনের পরিস্থিতির পুনরাবৃত্তি হবে বলে ধরে নিয়েছে চা পর্ষদ। সে ক্ষেত্রে দেশের আর্ন্তজাতিক বাজার ক্ষতিগ্রস্ত হবে বলে ধরেই নিয়েছে চা পর্ষদ। এ দিন জলপাইগুড়িতে ক্ষুদ্র চা চাষিদের পরিচয়পত্র বিলি করার একটি অনুষ্ঠানে যোগ দিয়েছিলেন কল্যাণবাবু। চা পর্ষদের সহকারী অধিকর্তা অভিজিৎ সরকারও উপস্থিত ছিলেন। ক্ষুদ্র চা চাষিদের বায়োমেট্রিক কার্ড বিলি করা হয়েছে। ওই কার্ড পরিচয়ের স্বীকৃতি ছাড়াও চা চাষিরা আর্থিক লেনদেনেও কাজে লাগাতে পারবেন বলে জানিয়েছে জলপাইগুড়ি জেলা ক্ষুদ্র চা চাষি সমিতি। সংগঠনের সাধারণ সম্পাদক বিজয়গোপাল চক্রবর্তী বলেন, “চা পর্ষদের এই উদ্যোগে ছোট চাষিরা খুবই উপকৃত হবেন।”
|