লাগাতার পাহাড় বন্ধের আওতা থেকে চা-বাগানকে ছাড় দিয়েছে গোর্খা জনমুক্তি মোর্চা। যদিও আট দিন ধরে বন্ধ চলায় শ্রমিকদের বিলি করার রেশন সামগ্রীই হোক বা বাগানের কারখানা চালানোর কয়লা-ডিজেল সবই বাড়ন্ত হয়ে পড়েছে। বাগানে কাজ করায় অসুবিধা না থাকলেও বন্ধের আওতা থেকে বাগানের গাড়ি ছাড় পায়নি। তাই রসদ যোগাড় হোক বা তৈরি চা-পাতা বাজারে নিয়ে যাওয়া কোনওটাই সম্ভব হচ্ছে না। এই পরিস্থিতিতে চা-বাগান বন্ধ করে দেওয়ার চিন্তা-ভাবনা শুরু করছেন বাগান মালিকপক্ষ।
বাগান বন্ধ হয়ে গেলে মজুরি মিলবে না। এ দিকে, টানা বন্ধ চলতে থাকায় নিত্য প্রয়োজনীয় জিনিসের দাম আকাশছোঁয়া। সেই পরিস্থিতিতে দিন কী ভাবে চলবে, দুশ্চিন্তায় পড়েছেন চা-শ্রমিক, কর্মীদের একটা বড় অংশ।
পরিস্থিতি যে প্রশাসনের অজানা নয়, এ দিন সেই ইঙ্গিত মিলেছে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের মন্তব্যে। শনিবার মহাকরণে মোর্চাকে বন্ধ তোলার চরমসীমা (৭২ ঘণ্টা) দিতে গিয়ে পাহাড়ে স্কুল-কলেজ-রেশন দোকান রোখার পাশাপাশি, ‘চা বাগানেও কাজ হবে’ বলে মন্তব্য করেছেন তিনি। |
তবে পাহাড়ের ৮৭টি চা-বাগানের মালিকপক্ষের প্রতিনিধিদের নিয়ে গঠিত ‘দার্জিলিং টি অ্যাসোসিয়েশন’-এর প্রধান উপদেষ্টা সন্দীপ মুখোপাধ্যায় বলেন, “দু’-তিন দিনের রেশন মজুত রয়েছে। তারপরে শ্রমিকদের রেশন দিতে পারব না। তখন বাগান বন্ধ করে দেওয়া ছাড়া রাস্তা নেই।” এই সংগঠনের সদস্য বাগানগুলির মোট শ্রমিকসংখ্যা প্রায় ৭০ হাজার। সন্দীপবাবুর কথায়, “কয়লা, ডিজেলেরও জোগান বন্ধ হয়ে গিয়েছে। তাই চা উৎপাদন করাও সম্ভব হবে না। চা-বাগানকে বন্ধের আওতার বাইরে রাখা হলেও আমাদের গাড়ি চলাচল করাতে বাধা আসছে। তাই আমরা বিভিন্ন জোগান যেমন পাচ্ছি না, তেমনই উৎপাদিত চা-ও বাজারে পাঠাতে পারছি না।”
জুন মাসের শেষ থেকে পাহাড়ে বর্ষা মরসুমের চা-পাতা তোলা শুরু হয়েছে। চা পরিভাষায় একে ‘মনসুন ফ্লাশ’ বলা হয়। বর্ষার মরসুমে অগস্ট পর্যন্ত পাতা তোলা সম্ভব হয়। মালিকপক্ষের বক্তব্য, মরসুমের মাঝপথে বাগান বন্ধ করলে আন্তর্জাতিক বাজারের অনেকাংশই দার্জিলিং চায়ের উৎপাদনকারীদের হাতছাড়া হবে। সন্দীপবাবু বলেন, “সমস্যা সমাধানে আমরা শ্রমিক সংগঠনগুলিকেও পদক্ষেপ করার আর্জি জানিয়েছি।” তবে মোর্চা প্রভাবিত চা শ্রমিক সংগঠন ‘দার্জিলিং তরাই ডুয়ার্স প্ল্যান্টেশন লেবার ইউনিয়ন’-এর সাধারণ সম্পাদক সুরজ সুব্বা বলেন, “পৃথক গোর্খাল্যান্ডের দাবিতে আন্দোলন শুরু হয়েছে। এই ধরনের বিভিন্ন সমস্যা আসতেই পারে। গোর্খাল্যান্ডের দাবি অন্য যে কোনও সমস্যা বা বিষয়ের থেকে অনেক বেশি গুরুত্বপূর্ণ।” |