প্রাচীর টপকে দফতরে ঢুকে টিভি দেখা নিয়ে বচসায় এক বিএসএনএল কর্মীর মাথায় রড মেরে খুন করার অভিযোগ উঠল এক যুবকের বিরুদ্ধে। শুক্রবার সকালে ফালাকাটা থানার গুয়াবরনগর পঞ্চায়েতের জয়চাঁদপুর গ্রামে ঘটনাটি ঘটে। পুলিশ জানায়, জখম ওই কর্মীকে স্থানীয়রা ফালাকাটা হাসপাতালে নিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করেন। রাস্তায় তিনি মারা যান। হতের ছেলের অভিযোগের পর পুলিশ অভিযুক্ত যুবক, তার বাবা ও কাকাকে গ্রেফতার করেছে। ওই ঘটনায় সিপিএম নেতা জলপাইগুড়ি জেলা পরিষদের প্রাক্তন সদস্য রঞ্জিত বর্মন-সহ দুই জনকে পুলিশ খুঁজছে।
আলিপুরদুয়ারের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার আকাশ মেঘারিয়া বলেছেন, “দফতরের ঘরে টেলিভিশন দেখতে নিষেধ করার ঘটনার জেরে ঘটনাটি ঘটেছে বলে জানা যাচ্ছে। পুরো ঘটনার তদন্ত চলছে। তিন জনকে ধরা হয়েছে।” পুলিশ জানিয়েছে, নিহতের নাম যুগলপদ রায় (৫৮)। তাঁর বাড়ি জয়চাঁদপুর গ্রামে। ধৃতদের নাম, বলরাম বিশ্বশর্মা এবং তার বাবা অবনী বিশ্বশর্মা এবং কাকা অনিল বিশ্বশর্মা। অনিলবাবু বিএসএনএলের কর্মী। তিনি ওই অফিসে কর্মরত। আগেও অভিযুক্ত যুবক দেওয়াল টপকে দফতরে ঢুকে টেলিভিশন দেখত বলে অভিযোগ।
পুলিশ জানিয়েছে, বৃহস্পতিবার রাত থেকে এ দিন সকাল আটটা পর্যন্ত যুগলবাবু ওই অফিসে ডিউটি ছিল। ভোরবেলা অফিসের মূল গেটে তালা ঝুলিয়ে উল্টো দিকে নিজের বাড়িতে স্নান করে ফের কাজে যোগ দেন। সেই সময় তিনি দেখেন ঘর খুলে পাড়ার যুবক বলরাম টিভি দেখছে। বলরামকে ঘর থেকে বার হয়ে যেতে বলতেই দুই জনের মধ্যে কথা কাটাকাটি শুরু হয়। তার পরে ধস্তাধস্তি। আচমকা বলরাম ঘরের ভেতর পড়ে থাকা একটি রড দিয়ে যুগলবাবুর মাথায় আঘাত করে বলে অভিযোগ। চিৎকার শুনে বাড়ি থেকে বেরিয়ে অফিসের ঘরে ঢুকে যুগলবাবুর ছেলে নন্দদুলাল রক্তাক্ত অবস্থায় বাবাকে মেঝেতে লুটিয়ে পড়ে থাকতে দেখেন। নন্দদুলালকেও ওই রড দিয়ে বলরাম মারার চেষ্টা করে। দুই জনের মধ্যে ধস্তাধস্তি শুরু হয়। চিৎকার চেঁচামেচি শুনে লোকজন ছুটে আসার পর বলরামকে মারধর করা শুরু হয়। বেগতিক দেখে বলরাম দৌড়ে খানিক দূরে নিজের বাড়িতে ঢুকে পড়ে। বাসিন্দারা বাড়ি ঘিরে আর এক দফায় বলরামকে মারধর করে পুলিশের হাতে তুলে দেন বাসিন্দারা।
তদন্তকারী অফিসারেরা জেনেছে, বিএসএনএল-টাওয়ার রক্ষণাবেক্ষণের জন্য যুগলপদবাবুর ছেলে নন্দদুলাল অস্থায়ী কর্মী হিসাবে কাজ করেন। নন্দদুলালবাবুর কথায়, “আমাকেও বলরাম রড দিয়ে মারার চেষ্টা করে। লোকজন ছুটে না এলে আমাকেও ও মেরে ফেলত। এর আগেও ওকে ঘরে ঢুকতে বারণ করেছিল বাবা।” তিনি পুলিশকে লিখিত অভিযোগে জানান, এলাকার প্রাক্তন জেলাপরিষদের সদস্য রঞ্জিত বর্মনের মদতে বলরাম-সহ তার বাবা, কাকা যুগলবাবুকে খুন করেছে।
তৃণমূল পরিচালিত গুয়াবর নগর গ্রাম পঞ্চায়েতের প্রধান সুভাষ রায় বলেন, “ঠান্ডা মাথায় ওই কর্মীকে খুন করা হয়েছে। টাওয়ারের জায়গাটি বহু বছর আগে বলরামদের ছিল। যুগলবাবু মারা গেলে ফাঁকা পদে তাঁর পরিবারের কারও চাকরি হবে সেই লোভে খুন করানো হয়। সিপিএম নেতা রঞ্জিত বর্মন এ খুনের পরিকল্পনা করেছেন।”
থানার লক-আপে বসে অভিযুক্ত বলরাম বলেন, “টেলিভিশনে ফুটবল দেখছিলাম। হঠাৎ যুগলবাবু এসে আমাকে গালিগালাজ করায় মাথা গরম হয়ে যায়।” বলরামের বাবা অবনীবাবু ও কাকা বিএসএনএল কর্মী অনিলবাবু বলেছেন, “ছেলেটার মাথাটা খারাপ। আমরা বাড়িতেই ছিলাম। আমাদের ফাঁসানো হয়েছে।” অভিযুক্ত সিপিএম নেতা রঞ্জিত বর্মনের কথায়, “ঘটনার সময় বাড়িতেই ছিলাম। রাজনৈতিক চক্রান্ত করে নাম জড়ানো হয়েছে।”
বিএসএনএলের তরফে ইঞ্জিনিয়র বিপুল চক্রবর্তী বলেন, “পুলিশকে ব্যবস্থা নেওয়ার কথা বলা হয়েছে।” |