পাহাড়বাসীদের রসদ দিল তৃণমূল
প্রথমে কেউ সামনে আসতে চাইছিলেন না। স্থানীয় তৃণমূল সমর্থক দু’একজন এগোতেই ধীরে ধীরে এদিক-ওদিক থেকে জড়ো হয়ে গেলেন আরও ২৫-৩০ জন পাহাড়বাসী। বেলা তখন প্রায় দেড়টা। কিছুটা সময় যেতে ভিড় আরও বাড়ল। মিরিকের সিংবুলিতে একটি
প্রাথমিক বিদ্যালয়ে পাহাড়বাসীদের হাতে চাল-আটা-আলু তুলে দিলেন তৃণমূলের দার্জিলিং জেলা সভাপতি গৌতম দেব।
মোর্চার একের পর এক আন্দোলনের জেরে এক মাস ধরে পাহাড়ে রেশন ব্যবস্থা কাজ করছে না। আর তাতেই সমস্যায় পড়েছেন সাধারণ পাহাড়বাসী। সেই সমস্যা কাটাতেই শুক্রবার সুখিয়াপোখরিতেও পাহাড়ের মানুষের হাতে কাঁচা আনাজ তুলে দেন গৌতমবাবু। তৃণমূল নেতৃত্বের ধারণা ছিল, মোর্চার ফতোয়া না মেনে বড়জোর জনা পঞ্চাশ এলাকাবাসী হাজির হবেন ত্রাণ নিতে। কিন্তু দিনের শেষে দু-জায়গায় অন্তত ৩০০ জন তৃণমূলের দেওয়া চাল-আটা-আলু নিয়ে বাড়ি ফিরলেন। কিন্তু তা নিয়ে ফেরার সময় পাহাড়ের মানুষ যেন কিছুটা সন্ত্রস্ত ছিলেন।
ত্রাণ বিলি চলাকালীন আধাসেনার পাহারা। মিরিকের সিং বুলি চা বাগানে। ছবি: বিশ্বরূপ বসাক।
উভয় সঙ্কটে পড়েছেন তাঁরা। এক দিকে ঘরে রসদ ফুরিয়ে যাচ্ছে। রেশন দোকান খুলছে না। অথচ হাতের কাছে রসদ পেয়েও তা নিলে গোর্খা জনমুক্তি মোর্চার নেতাদের হুমকির মুখে পড়ার আশঙ্কা রয়েছে। একজন বলেই ফেললেন, “খানিকটা নিরুপায় হয়েই রসদ নিতে হল। যা আছে কপালে তা-ই হবে।”
এ দিন তৃণমূলের এই কর্মসূচিকে মোর্চা নেতাদের অনেকেই সমালোচনাও করেছেন। এমনকী, যেখানে ত্রাণ বিলি হয়েছে, তার অদূরে দাঁড়িয়ে মিরিকের মোর্চা নেতাদের কয়েক জন কটাক্ষ করেন, “দু-চার দিন পাহাড়ে রসদ দিয়ে তৃণমূল পায়ের তলার মাটি শক্ত করার স্বপ্ন দেখছে।”
গৌতমবাবু অবশ্য দাবি করেছেন, দলীয় সংগঠন গড়ার জন্য তাঁরা পাহাড়ে ত্রাণসামগ্রী নিয়ে যাননি। তাঁর যুক্তি, “আমরা গোড়া থেকেই চাইছি জিটিএ-এর মাধ্যমে মোর্চা পাহাড়ের উন্নয়নে গতি আনুক। সে জন্য জিটিএ নির্বাচনে প্রার্থী দিয়েও শেষ পর্যন্ত আমরা প্রতিদ্বন্দ্বিতা থেকে সরে দাঁড়িয়েছি। কিন্তু জিটিএ গঠনের পর থেকে বারেবারে পাহাড়ে আন্দোলনের নামে অশান্তি তৈরি করায় মানুষ বিপাকে পড়েছেন।” তাঁর অভিযোগ, “পাহাড়-সমতলের বিভেদ তৈরির চেষ্টা হচ্ছে।” তিনি বলেন, ‘‘কিন্তু সমতলের মানুষ যে পাহাড়বাসীর পাশে রয়েছেন, সেই বার্তা দিতে সাধারণ সমতলবাসী হিসেবেই আমরা কর্মসূচি নিয়েছি।” তিনি জানান, অনেকের রেশন কার্ড নেই। সে কথাটাও তাঁদের মাথায় রাখতে হচ্ছে। পাহাড়ের আরও ২০ জায়গায় ত্রাণ দেওয়া হবে।
দার্জিলিং পাহাড়ে খাদ্য সরবরাহ স্বাভাবিক রাখতে আজ, শনিবার খাদ্য ভবনে জরুরি বৈঠক ডেকেছেন খাদ্যমন্ত্রী জ্যোতিপ্রিয় মল্লিক। আজ থেকে পাহাড়ে মোর্চা ‘ভুখা হরতাল’ কর্মসূচি পালনের ডাক দিয়েছে। তার মোকাবিলায় খাদ্য বণ্টনের মতো জরুরি পরিষেবা চালু রাখতে বেশ কিছু পদক্ষেপ করছে রাজ্য সরকার। শুক্রবার খাদ্যমন্ত্রী বলেন, “পাহাড়ে খাদ্য সরবরাহ স্বাভাবিক রাখার নির্দেশ দিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। সেই নির্দেশ মেনে আমরা কয়েকটি পরিকল্পনা নিয়েছি।”
পাহাড়ে অচলাবস্থা তৈরি করতে মোর্চা নেতারা রেশন ডিলার, দোকানদারদের দোকান বন্ধ রাখার জন্য হুমকি দিচ্ছেন বলে খাদ্যমন্ত্রী এ দিন অভিযোগ করেন। রেশন দোকান মোর্চা সমর্থকেরা জোর করে বন্ধ করলেও পাহাড়ের বাসিন্দাদের কাছে খাদ্য সামগ্রী যাতে সহজে পৌঁছয়, তার জন্য থানা, বিডিও ও স্থানীয় পঞ্চায়েত দফতর থেকে সমান্তরাল দোকান চালুর সিদ্ধান্ত নিয়েছে রাজ্য। সে জন্য আজ খাদ্য ভবনে ডিলার, সরবরাহকারী এবং আধিকারিকদের নিয়ে বৈঠক করবেন খাদ্যমন্ত্রী। রাজ্য সরকারি সূত্রের খবর, মোর্চার ভুখা হরতাল ব্যর্থ করতেই সরকার খাদ্য সরবরাহ স্বাভাবিক রাখতে চায়। সেই সঙ্গে মোর্চাকে সরকার বার্তাও দিতে চায়-পাহাড়ের জনজীবন বিপর্যন্ত করাকে কোনও ভাবেই বরদাস্ত করা হবে না।
দলের তরফেও পাহাড়বাসীর পাশে থাকার বার্তা দিতে চায় শাসক দল তৃণমূল।
এ দিন প্রথমে সিংবুলিতে মাথা পিছু সকলকে ১০ কেজি চাল, ৫ কেজি আটা ও ২ কেজি করে আলু দেওয়া হয়। সিংবুলির কয়েকজন শ্রমিক জানান, তাঁরা গোর্খাল্যান্ডের আন্দোলনে আগেও অংশ নিয়েছেন। এখনও তা ফের হচ্ছে। আন্দোলন হোক। তা বলে দিনের পর দিন ঘরে বসে থাকলে খাবার জুটবে কোথা থেকে? এটা নেতারা কেন বুঝতে পারছেন না?

পুরনো খবর:




First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.