বস্তা বস্তা চাল রয়েছে। আটা আছে। হাজির রেশন দেওয়ার লোকও। কোথাও জনতা দূর থেকেই তা দেখে সরে গেল। কোথাও আবার সরকারি রেশন নিতে উপচে পড়ল ভিড়। বুধবার দার্জিলিং পাহাড়ের তিন মহকুমায় সরকারি দরে চাল-আটা বিলি শুরুর দিনের ছবিগুলো এমনই পরস্পরবিরোধী।
দিনের শেষে সরকারি হিসেব অনুযায়ী, পাহাড়ের ১১টি রেশন বিলির জায়গা থেকে চাল-আটা নিয়েছেন অন্তত ২৫০ জন। আজ, বৃহস্পতিবার স্বাধীনতা দিবসের ছুটি থাকলেও পাহাড়ের বাসিন্দাদের কথা মাথায় রেখে সরকারি রেশন দোকান খোলা রাখার বিজ্ঞপ্তি জারি করা হয়েছে। দার্জিলিঙের জেলাশাসক পুনীত যাদব বলেন, “এ দিন সরকারি ভাবে ১১টি জায়গা থেকে বাসিন্দাদের একাংশ রেশন নিয়েছেন। বৃহস্পতিবার রেশন দোকান থেকেই রেশন বিলি করা হবে।”
যদিও মোর্চার সাধারণ সম্পাদক রোশন গিরির দাবি, “সরকারের রেশন বিলির চেষ্টা ব্যর্থ। কারণ, মানুষ তা কিনতে যাননি।” পাশাপাশি, মোর্চা নেতার অভিযোগ, রেশনের পণ্যের গাড়িতে তৃণমূল সমর্থকেরা পাহাড়ে গিয়ে গোলমাল পাকানোর চেষ্টা করেছেন। এমনকী, কয়েকটি এলাকায় সরকার মনোনীত জিটিএ-সদস্য মিলন ডুকপা কেন ছিলেন, সেই প্রশ্নও তুলেছে মোর্চা। ছিলেন। মিলন ডুকপা বলেন, “জিটিএ সদস্য হিসেবে নাগরিকদের প্রতি আমি দায়বদ্ধ। তাঁদের পাশে দাঁড়ানোর দায়িত্ব আমারও আছে।”
এ দিন সকালে শিলিগুড়ির দার্জিলিং মোড় থেকে রেশনের জিনিস নিয়ে সব ক’টি গাড়ি একযোগে পাহাড়ের বিভিন্ন দিকে রওনা দেয়। বিভিন্ন এলাকার থানা ও পঞ্চায়েত অফিস লাগোয়া এলাকায় রেশন মজুত করা হয়। কার্শিয়াঙের রাস্তায়
গাড়িধুরা ফাঁড়ির কাছে মজুত করা হয় চাল-আটার বস্তা। কয়েকজন পুলিশকর্মী রাস্তায় টহলের সময়ে বাসিন্দাদের রেশন নেওয়ার অনুরোধ করেন। রেশন নিতে কেউ বাধা
দিলে বা আগামী দিনে সমস্যা হলে পুলিশ কড়া ব্যবস্থা নেবে বলে আশ্বাসও দেয়। এর পরেই গুটিগুটি পায়ে বাসিন্দারা এগিয়ে এসে
লাইনে দাঁড়ান।
দুপুরের দিকে উপচে পড়ে ভিড়। ভিড়ের মধ্যে থেকে প্রায় সকলেই জানান, ১২ দিন ধরে বন্ধ-কার্ফুর ঘেরাটোপে থাকা পাহাড়ে দোকানপাট, বাজার বন্ধ থাকায় স্কোয়াশের
ডাঁটা এবং জঙ্গলি-কচুই ক’দিন
ধরে খাচ্ছেন।
রোহিণীর জগদম্বা মন্দিরের কাছে রেশন নিতে অবশ্য সাকুল্যে চার জনকে দেখা গিয়েছে। দুধিয়া কমিউনিটি হল, বিজনবাড়ি, সৌরিণী এলাকাতে একই ভাবে শিবির করা হয়। সকাল থেকে কিছু বাসিন্দা কাছাকাছি ভিড় করে দাঁড়িয়ে ছিলেন। কিন্তু মোর্চার কিছু লোকজন তাঁদের রেশন নিতে নিষেধ করে যান বলে অভিযোগ। ভয়ে তাই অনেকে আর সেখানে দাঁড়াননি। তবে অনেকে ‘যা আছে কপালে’ মনোভাব নিয়ে পরিবারের খাবারের ব্যবস্থা করতে চাল, আটা নিয়ে গিয়েছেন। খাদ্য সরবরাহ দফতর সূত্রে জানা গিয়েছে, পানিঘাটা এলাকায় ১১৮ জন, গাড়িধুরা ফাঁড়ি থেকে শতাধিক, সুকিয়াপোখরি কেন্দ্র থেকে ১৯ জন রেশনের সামগ্রী নিয়েছেন। দুধিয়া, বিজনবাড়ির মতো কেন্দ্রে অবশ্য এ দিন কেউ যাননি।
এ দিন বাসে চড়ে প্রথমে রোহিণী ও পরে শিমুলবাড়ি চা বাগানে যান উত্তরবঙ্গ উন্নয়নমন্ত্রী গৌতম দেব ও খাদ্যমন্ত্রী জ্যোতিপ্রিয় মল্লিক। বেলা সাড়ে ১১টা নাগাদ শিমূলবাড়ি চা বাগানে দাঁড়িয়ে ছিলেন ৭০ বছরের বৃদ্ধা মিনা দর্জি। মন্ত্রীর সামনে ভেঙে পড়ে বৃদ্ধা বলেন, “বাড়িতে চাল নেই, খাবার নেই। হাতে টাকা নেই।” বৃদ্ধার নাম-ঠিকানা নিয়ে তাঁর হাতে ব্যক্তিগত ভাবে ৫০০ টাকা দিয়ে রেশন নেওয়ার অনুরোধ করেন মন্ত্রী।
পরে গৌতমবাবু বলেন, “পাহাড়ে যাঁদের রেশন কার্ড আছে, তাঁরা চাল-আটা নিতে শুরু করেছেন। রেশন দোকান না খোলা পর্যন্ত এই ব্যবস্থা চলবে। যাদের রেশন কার্ড নেই, তাঁদের জন্যও চাল-আটা দেওয়ার ব্যবস্থা হবে।” |