ইন্ডিয়ান ব্যাডমিন্টন লিগ যত এগোচ্ছে ততই উজ্জ্বল দেখাচ্ছে ভারতীয়দের প্লেয়ারদের। আইপিএলে যেমন সচিন-কোহলিদের পাশাপাশি ক্রিস গেইল-মাইক হাসির মতো বিদেশি ক্রিকেটাররাও ধারাবাহিক মহাদাপট দেখান, আইবিএলের ছবিটা ঠিক সে রকম নয়। বরং বিশ্বের এক নম্বর ব্যাডমিন্টন তারকা লি চং উইয়ের একশো শতাংশ সাফল্য বাদে অন্য তারকা বিদেশিরা বেশ ম্লানই। বিশ্বের তিন নম্বর মেয়ে জুলিয়েন শেঙ্ক হেরেছেন। অল ইংল্যান্ড চ্যাম্পিয়ন টিন বাউন এখনও পর্যন্ত জিতেছেন মাত্র একটি ম্যাচ। তার চেয়েও বড় কথা, কী উঠতি তরুণ, কিংবা প্রবীণ ভারতীয় বিশ্বের প্রথম কুড়ি, কখনও প্রথম দশের মধ্যে থাকা বিদেশিদেরও হারিয়ে চমকে দিচ্ছেন। আবার কখনও দুই ভারতীয়ের মধ্যে লড়াইয়ে বিখ্যাত সিনিয়রকে অপ্রত্যাশিত হারিয়ে দিচ্ছেন কোনও উঠতি জুনিয়র।
শুক্রবারই যেমন বঙ্গা বিটস বনাম পুণে পিস্টন্স ‘টাই’য়ের প্রথম ম্যাচেই অঘটন ঘটালেন ৩০ বছর বয়সি ভারতের টমাস কাপ অধিনায়ক অনুপ শ্রীধর। বিশ্বের ৬০ নম্বর ভারতীয় স্ট্রেট গেমে ২১-১২, ২১-১৮ পয়েন্টে বিশ্ব র্যাঙ্কিংয়ে আট নম্বর হংকংয়ের হু ইউন-কে হারিয়ে ঘরের মাঠে পুণেকে অপ্রত্যাশিত ১-০ ম্যাচে এগিয়ে দেন। ইউন আগের দিনই আইবিএলের স্ট্যান্ডার্ডকে বিশ্ব ব্যাডমিন্টন চ্যাম্পিয়নশিপের খেলার মানের সমান বলেছিলেন। চব্বিশ ঘণ্টার মধ্যেই সেই মন্তব্য যে এ ভাবে বুমেরাং হয়ে তাঁর ম্যাচেই সত্যি হয়ে উঠবে বোধহয় নিজেও বোঝেননি। |
|
|
অনুপ: হারালেন বিশ্বের আট নম্বরকে |
সৌরভ: কাশ্যপ-বধের নায়ক |
|
অনুপের জীবনের সেরা র্যাঙ্কিং সেই ছ’বছর আগে ছিল ২৪। জীবনের সেরা জয়ও সেই সময়ই তাঁর পাওয়া। হারিয়ে দিয়েছিলেন প্রাক্তন অলিম্পিক ও বিশ্বচ্যাম্পিয়ন কিংবদন্তি ইন্দোনেশিয়ান তৌফিক হিয়ায়েতকে। তবে হয়তো তার পাশেই এ দিন প্রবীণ অনুপের বিশ্বের আট নম্বরের বিরুদ্ধে জয়টা থাকবে। চব্বিশ ঘণ্টা আগেই বিশ্বের ১৭ নম্বর মালয়েশিয়ান লিউ ড্যারেনকে হারিয়ে অঘটন ঘটানোর পাশাপাশি দিল্লি স্ম্যাশার্স ম্যাচে আওয়াধি ওয়ারিয়র্সকে মধুর জয় এনে দিয়েছিলেন এক তরুণ ভারতীয় গুরুসাই দত্ত।
এ দিন আবার অনুপ শ্রীধরের অপ্রত্যাশিত জয়ে তেতে উঠে পরের দু’টো ম্যাচও জিতে নিয়ে পুণে পিস্টন্স দু’ম্যাচ বাকি থাকতে ‘টাই’ পকেটে পুরে নেয়, ৩-০ এগিয়ে যাওয়ায়। বঙ্গ বিটসের বিশ্ব র্যাঙ্কিংয়ে ১৯ নম্বর স্প্যানিশ মেয়ে ক্যারোলিন মারিন আগের ‘টাই’য়ে আওয়াধির নতুন ভারতীয় সুপারস্টার পি ভি সিন্ধুকে হারিয়ে চমকে দিলেও আজ পুণের জুলিয়েন শেঙ্কের কাছে ২০-২১, ১০-২১ হারেন।
২-০ ম্যাচে এগিয়ে থাকা পুণে পিস্টন কোচ নিখিল কানেতকর ডাবলসে চমৎকার স্ট্র্যাটেজি নেন আগের তিনটি ম্যাচে খেলা ভারতীয় জুটি রূপেশ কুমার-সনভ টমাসকে হঠাৎ বসিয়ে ড্যানিশ-মালয়েশিয়ানের বিদেশি জুড়ি জোয়াকিম নিয়েলসেন-কিয়ং তানকে নামিয়ে। রূপেশ-সনভ তিনটে ম্যাচেই হারলেও তাঁরাই পুণে দলের এক নম্বর ডাবলস টিম। আচমকা নতুন জুটিকে সামনে পেয়ে বঙ্গ বিটসের তারকা কোচ বিমল কুমার হয়তো ঠিক মতো হোমওয়ার্ক করার সময় পাননি। ফলে ভারতীয় পার্টনার অক্ষয় দিওয়ালকরকে নিয়ে খেলে বিশ্ব ডাবলস র্যাঙ্কিংয়ে ছ’নম্বর ড্যানিশ কার্স্টেন মগেনসেনের পক্ষেও সম্ভব হয়নি বেঙ্গালুরুর দলকে লড়াইয়ে ফেরানো।
মগেনসেনদের ১৮-২১, ১৮-২১ হারের সঙ্গেই পুণে পিস্টন্সের চার ম্যাচে তৃতীয় জয় যেমন নিশ্চিত হয়ে যায়। তেমনই বঙ্গা বিটস-ও ছ’দলের লিগ টেবলে আগের মতোই সর্বশেষ স্থানেই থেকে যায়। ফলে দ্বিতীয় পুরুষ সিঙ্গলসে বঙ্গা বিটসের সেরা ভারতীয় তারকা, বিশ্বের ১৪ নম্বর পারুপল্লি কাশ্যপের ম্যাচও নিয়মরক্ষার হয়ে দাঁড়ায়।
যদিও সেই লড়াইয়ে কাশ্যপকে ২০ বছর বয়সি উঠতি ভারতীয় প্রতিভা সৌরভ বর্মা এক গেম পিছিয়ে পড়েও ১৯-২১, ২১-১৮, ১১-৪ হারিয়ে ম্যাচটাকে হঠাৎই আলোচনার কেন্দ্রে এনে দেন। একই সঙ্গে যেন আরও বড় হয়ে ওঠে ‘অঘটনের আইবিএল’ ক্যাচলাইন! আর শেষমেশ ‘টাই’ ৪-১ জিতে পুণে পিস্টন্স ১৪ পয়েন্টে দ্বিতীয় স্থানে উঠে এল। ৫-০ জিতলে পুণে শীর্ষে থাকা সাইনার হায়দরাবাদ হটশটসের ১৫ পয়েন্টকে ধরে ফেলত! |