বার্ষিক সাধারণ সভার পর প্রথম ওয়ার্কিং কমিটির বৈঠক। কিন্তু শুক্রবারের বৈঠক যে সিএবি-কে এমন প্রশ্নের মুখে ফেলে দেবে, বোঝা যায়নি।
যে কমিটির চেয়ারম্যান ছিলেন ভারতের সর্বকালের অন্যতম সেরা অধিনায়ক সৌরভ গঙ্গোপাধ্যায়, যে কমিটিতে ছিলেন অশোক মলহোত্র, অরুণলাল, প্রণব রায়ের মতো ক্রিকেটাররা শুক্রবারের বৈঠকের পর সেই কমিটিকে অনির্দিষ্টকালের জন্য তুলে দেওয়া হল!
কারণ কী?
সিএবি কর্তাদের যুক্তি, কমিটির চার সদস্যকে একসঙ্গে খুব কম পাওয়া যাচ্ছিল। এক-এক জনের এক এক রকম দায়বদ্ধতা। কেউ ধারাভাষ্য নিয়ে ব্যস্ত থাকতেন, কেউ ম্যাচ রেফারি। বিভিন্ন সময়ে নাকি দেখা গিয়েছে, সৌরভ সময় দিলে বাকিরা পারছেন না। আবার বাকিরা পারলে সৌরভ পারছেন না। যদিও এ নিয়ে বিরুদ্ধ মত আছে। ঘনিষ্ঠমহলে সৌরভ বেশ কয়েক বার বলেছেন তিনি বারবার প্রেসিডেন্ট জগমোহন ডালমিয়াকে বৈঠক ডাকার কথা বললেও সিএবিই তাতে কর্ণপাত করেনি!
কর্তাদের আরও যুক্তি, কমিটিটা আদতে স্পেশ্যালাইজড ছিল। নিয়মিত বৈঠক ডাকার বাধ্যবাধকতা ছিল না। বছরে কমিটির বৈঠক হত একবার কি দু’বার। আরও বলা হচ্ছে, কমিটির সদস্যরা এতটাই হাই প্রোফাইল যে, কোনও সিদ্ধান্ত নিলে সেটাকে কার্যকর করার লোক পাওয়া যেত না। এক কর্তা যেমন বলছিলেন, “এমন অনেক বার হয়েছে সৌরভ একটা পরামর্শ দিয়েছে। কিন্তু সেটাকে কার্যকর করার লোক নেই। অরুণলাল বা অশোককে তো আর বলা যায় না আপনারা এটা করুন।” ক্রিকেট ডেভেলপমেন্ট কমিটি সদস্যদের কেউ কেউ আবার বলছেন, বাংলার নতুন কোচ নির্বাচন থেকে গত রঞ্জির ফলাফল বিশ্লেষণ কোনও কিছু নিয়েই তাঁদের সঙ্গে আলোচনার দরকার মনে করেননি সিএবি কর্তারা। কর্তাদের ভাবনাচিন্তা আবার অন্য রকম। মনে করা হচ্ছে, ক্রিকেট ডেভেলপমেন্ট কমিটি তুলে দিয়ে সৌরভকে কোচিং কমিটির চেয়ারম্যান পদে নিয়ে আসাটা অনেক ভাল হল। কারণ, বাকিরা কেউ সৌরভের মতো তারকা নন। কাজটা হবে।
পাশাপাশি শুক্রবার আরও একটা গুরুত্বপূর্ণ ঘটনা ঘটে থাকল। এ দিনের পর সিএবি-র বিরোধীপক্ষ বলে আর কেউ আপাতত থাকল না!
শাসক ডালমিয়া-গোষ্ঠীর এত দিনের কড়া বিরোধী বলে পরিচিত ছিলেন যিনি, কখনও প্রেসিডেন্ট, কখনও সচিব পদের জন্য নির্বাচন লড়ে ডালমিয়া-গোষ্ঠীকে নিত্যনতুন ‘বাউন্সার’ দিতেন, সেই সমর পালের সঙ্গে রফাসূত্র বার করে ফেলল সিএবি। আভিজাত্যপূর্ণ ক্রিকেট কমিটির চেয়ারম্যান করে দেওয়া হল তাঁকে। যে কমিটিতে বাংলার রঞ্জিজয়ী অধিনায়ক সম্বরণ বন্দ্যোপাধ্যায়, প্রাক্তন আন্তর্জাতিক আম্পায়ার সুব্রত বন্দ্যোপাধ্যায়, শক্তিপদ ভট্টাচার্য, অনুষ্টুপ মজুমদাররাও আছেন।
গত দু’মাস ধরেই সমরের সঙ্গে রফাসূত্র বার করার চেষ্টা করেছে সিএবি। প্রধান উদ্যোগটা নেন সিএবি কোষাধ্যক্ষ বিশ্বরূপ দে। সমরের অভিযোগ ছিল, ডালমিয়ার সিএবি কখনও তাঁকে মর্যাদা দেয়নি। ইচ্ছে হলে গুরুত্বহীন কমিটিতে রেখেছে, কখনও তা-ও নয়। সমরকে বোঝানো হয়, সিএবি আর পুরনো বৈরিতা ধরে রাখতে চায় না। তাঁকে মর্যাদা দিয়েই রাখা হবে। এবং সমরকে সিএবি-তে ফেরানোর প্রস্তাব ডালমিয়াকে দেওয়া হলে তিনি শেষ পর্যন্ত রাজি হয়ে যান। পরে সমর বলেন, “ব্যাপারটা আমাকে এক দিকে চমকে দিয়েছে। অন্য দিকে, দায়িত্বও বাড়িয়ে দিয়েছে।” কিন্তু পাল্টা প্রশ্নও উঠছে। কোনও কোনও মহল থেকে বলা হচ্ছে যে, কমিটিতে যখন সম্বরণের মতো ব্যক্তিত্বরা আছেন, তখন সমর কী ভাবে চেয়ারম্যান হলেন? ঠিক তেমন ইঙ্গিতবাহী ঘটনা হিসেবে থেকে গেল রাজ্যের যুবকল্যাণ ও আবাসন মন্ত্রী অরূপ বিশ্বাসের জুনিয়র ক্রিকেট কমিটিতে চলে আসাটা।
সমরের ক্রিকেট কমিটিতে আসা নিয়ে সিএবি কর্তাদের উত্তরসংস্থার সংগঠনেই এটা আছে। বরাবর প্রশাসনিক কাউকেই চেয়ারম্যান করা হয়, ক্রিকেটার নয়। কিন্তু দ্বিতীয় ব্যাপারটার প্রভাব সূদূরপ্রসারী হবে কি না, সময়ই বলবে।
আরও একটা ব্যাপার অমীমাংসিত থেকে গেল। শিবপুর ক্লাবের ভাগ্য। ক্লাবের ক্রিকেট টিম কে ঠিক করবে, তা নিয়ে শিবপুরে রাজনৈতিক গোষ্ঠীদ্বন্দ্ব চরমে। ঝামেলা বাঁধে ক্লাবের প্রাক্তন সচিব অম্বিকা বন্দ্যোপাধ্যায়ের (যিনি রাজ্যের বর্তমান শাসকদলের সাংসদও ছিলেন) মৃত্যুর পর। তার পর ক্লাব কারা চালাবে, সেই প্রশ্নে দু’টো রাজনৈতিক গোষ্ঠীর মধ্যে দ্বৈরথের শুরু। ওয়ার্কিং কমিটি বৈঠকের আগে রাজ্যের শাসক দলের এক মন্ত্রী চিঠি দিয়ে সিএবি-কে বলেন, বৈঠকে শিবপুর নিয়ে কোনও সিদ্ধান্ত না নিতে। তিনি কয়েক দিনের মধ্যে ব্যাপারটা মেটানোর চেষ্টা করছেন। আপাতত যা পরিস্থিতি, তাতে আরও একটা জরুরি ওয়ার্কিং কমিটি বৈঠক ডাকা হচ্ছে আগামী সপ্তাহে। শুধু শিবপুর-প্রসঙ্গ নিয়ে। |