বিশ্বের এক নম্বর প্লেয়ার লি চং উইয়ের মুম্বই মাস্টার্সকে ৩-২ ম্যাচে হারিয়ে সাইনা নেহওয়ালের হায়দরাবাদ হটশটস আইবিএলে শীর্ষেই থাকল। কিন্তু সুনীল গাওস্করের ব্যাডমিন্টন দল সাইনার বিরুদ্ধে অল ইংল্যান্ড চ্যাম্পিয়ন টিন বাউন-কে খেলালো না কেন সেই প্রশ্নের উত্তর খুঁজতে বৃহস্পতিবার ব্যাডমিন্টন মহল ব্যস্ত থাকলে অবাক হওয়ার নেই।
তবে সেই জল্পনায় নিশ্চয়ই মধুর ব্যাঘাত ঘটাবে সদ্য বিশ্ব ব্যাডমিন্টনে ঐতিহাসিক ব্রোঞ্জজয়ী পি ভি সিন্ধুর আইবিএলে তৃতীয় ম্যাচে এসে প্রথম জয় পাওয়া। আগের দু’টো ম্যাচে সাইনা আর বিশ্বের প্রথম কুড়িতে থাকা স্প্যানিশ ক্যারোলিন মারিনের কাছে হেরেছিলেন ‘হায়দরাবাদের নতুন সাইনা’। এ দিন অবশ্য দিল্লি স্ম্যাশার্সের অখ্যাত স্বদেশি অরুন্ধতী পটনাওয়ানেকে ২১-১৬, ২১-১৭ হারান ‘হায়দরাবাদের নতুন সাইনা’।
যদিও এ দিন সিন্ধুর শিরোনামে ফেরা-র খবরের ভাগীদার তাঁরই আওয়াধি ওয়ারিয়র্সের টিমমেট গুরুসাই দত্ত। গোপীচন্দ অ্যাকাডেমির অন্যতম প্রতিশ্রুতিমান ভারতীয় তরুণ বিশ্বের ১৭ নম্বর মালয়েশিয়ার লিউ ড্যারেনকে ২১-১৬, ২১-২০ হারিয়ে শুধু আইবিএলের সপ্তম দিনের সেরা অঘটনই ঘটাননি, আওয়াধিকে ‘টাই’ও জেতান। আর প্রাক্তন এক নম্বর টিন বাউনের বদলে গোপীচন্দ অ্যাকাডেমির প্র্যাক্টিস পার্টনার পি সি তুলাসিকে পেয়ে সাইনা সহজেই জেতেন ২১-৭, ২১-১০। তার আগে বিশ্বের এক নম্বর লি চং এই মুহূর্তে সবচেয়ে প্রতিভাবান ভারতীয় পুরুষ অজয় জয়রামকে ২১-১৯, ১১-২১, ১১-৫ হারিয়ে মুম্বইকে ১-০ ম্যাচে এগিয়ে দিয়েছিলেন। কিন্তু সাইনা সমতা ফিরিয়ে হায়দরাবাদকে এমন চাঙ্গা করে দেন যে, তার পর আর ‘ভারতীয় ব্যাডমিন্টনের রাজধানী’কে পিছন ফিরে তাকাতে হয়নি। পুরুষ ডাবলস আর দ্বিতীয় সিঙ্গলসেও জিতে হায়দরাবাদ ওখানেই ‘টাই’ পকেটে পুরে ফেলে। শেষ ম্যাচ মিক্সড ডাবলসে মুম্বইয়ের জয় বিশ্বের এক নম্বর প্লেয়ারের দলের কাছেও সান্ত্বনা ছাড়া কিছু নয়।
সঙ্গে একটা প্রশ্নও রেখে গেলটিন বাউনের মতো তারকাকে বসিয়ে রেখে তিন বিদেশি (আইবিএলের নিয়মে এক ম্যাচে একটা দল সর্বাধিক তিনজন বিদেশি খেলাতে পারে) বাছার স্ট্র্যাটেজিটা এ দিন মুম্বইয়ের সঠিক ছিল কি না। লি চং এবং বাঁহাতি জার্মান মার্ক জোয়েবলার দু’টো পুরুষ সিঙ্গলসে ঠিক আছেন। কিন্তু অল ইংল্যান্ড চ্যাম্পিয়নকে বাদ দিয়ে নিছক মিক্সড ডাবলসের জন্য রাশিয়ার ভ্লাদিমির ইভানভকে বাছার কী মানে?
প্রাক্তন ইন্দোনেশিয়ান কিংবদন্তি তৌফিক হিদায়েতকে না হয় হটশটস-জার্সিতে দেখা গেল না, টিম আইকন সাইনার সঙ্গে এই মুহূর্তে তাঁর ‘সম্পর্ক’ ভাল না চলায়। ডেনমার্কের ৩৪ বছর বয়সি বাউন-ও পেশাদার সার্কিট থেকে অবসর নিয়ে এখন না হয় হিদায়েতের মতোই প্রাক্তন। কিন্তু সেটা তো মাত্র মাস কয়েক আগের ঘটনা। তার আগে জীবনের শেষ টুর্নামেন্ট অল ইংল্যান্ড চ্যাম্পিয়নশিপেও ট্রফি জিতেছেন বাউন। দু’দিন আগেই দিল্লি স্ম্যাশার্সের বিরুদ্ধে সিঙ্গলস ছাড়াও মিক্সড ডাবলস খেলেছেন। বিশ্বের এক নম্বর প্লেয়ারের দলের সঙ্গে ভারতের ব্যাডমিন্টন রানির টিমের ম্যাচকে যতটা রাজা-রানির দলের লড়াই বলা হচ্ছিল, তার চেয়েও বেশি যুদ্ধের সম্ভবনা ছিল সাইনা বনাম বাউন ম্যাচে। যদিও শেষ ম্যাচে অখ্যাত ভারতীয় অরুন্ধতীর বিরুদ্ধে জেতা ছাড়া বাকি দু’টো ম্যাচে বাউন দুই নামী প্রতিপক্ষ জুলিয়েন শেঙ্ক এবং জু ইয়েং-এর কাছে হারেন। সদ্য অবসর নেওয়া অল ইংল্যান্ড চ্যাম্পিয়নের কি সার্কিটের সক্রিয় নামী তারকাদের সঙ্গে এঁটে উঠতে না পারার জন্যই বিশ্বের চার নম্বর সাইনার সামনে ফেলার ঝুঁকি নিল না মুম্বই? কেননা বাউনের কোনও ফিটনেস-বুলেটিন মুম্বই শিবির থেকে দেওয়া হয়নি।
তবে এমন অ্যান্টি ক্লাইম্যাক্সের আঁচ পুণের স্টেডিয়াম-ঠাসা ব্যাডমিন্টন রসিকদের মতোই পাননি অগুনতি টিভি-দর্শকও!
|