হাওড়ার মহাকরণে যাতায়াতের সুবিধার জন্য যে ফেরিঘাট দিয়ে পর্যাপ্ত ফেরি চালানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছে রাজ্য সরকার, সেই শিবপুর ফেরিঘাটে বড় লঞ্চ চলার মতো পরিকাঠামোই নেই। প্রথমত, ওই ঘাটে পন্টুন বা জেটির যে নোঙর রয়েছে তাতে বড় লঞ্চ ভিড়লে ছিঁড়ে বেরিয়ে গিয়ে বড় দুর্ঘটনা ঘটতে পারে। দ্বিতীয়ত, দীর্ঘদিন ধরে সঠিক রক্ষণাবেক্ষণ না হওয়ায় ফেরিঘাটের পন্টুনটি দুর্বল হয়ে পড়েছে। যাত্রীদের যাতায়াতের রাস্তা বা গ্যাংওয়ের অবস্থাও ভাল নয়। রোদ বা বৃষ্টি থেকে বাঁচার শেডও নেই। তৃতীয়ত, ঘাটের কাছে নাব্যতারও অভাব রয়েছে।
খোদ হুগলি নদী জলপথ পরিবহণ সংস্থার কর্তারা মানছেন, শিবপুর ফেরিঘাটে পরিকাঠামোর যথেষ্ট অভাব রয়েছে। সমিতির চেয়ারম্যান প্রণব ঘোষ বলেন, “ওই পন্টুনটি আমরা মাঝে মেরামত করেছিলাম। তবে ওটিতে বড় লঞ্চ নোঙরের ব্যবস্থা নেই। পরিকাঠামোর উন্নতি করতে হবে।” প্রণববাবুর অভিযোগ, রক্ষণাবেক্ষণ না হওয়ার জন্যই এই অবস্থা হয়েছে ঘাটটির। যাত্রী পরিষেবার উন্নতি না হওয়ায় দীর্ঘ কয়েক দশক ধরে লোকসানের বোঝা বইছে রুটটি।
মন্দিরতলায় হাওড়ার নতুন মহাকরণে যাতায়াতের সব থেকে কাছের ফেরিঘাট হল শিবপুর। ওই ফেরিঘাট থেকে ফোরশোর রোডে পৌঁছে বাস ধরে বা হেঁটে নতুন মহাকরণে পৌঁছনো সব থেকে সহজ। এ জন্য রাজ্য সরকার সিদ্ধান্ত নিয়েছে, ১ অক্টোবর থেকে মহাকরণ মন্দিরতলায় স্থানান্তরিত হলে হুগলি নদী জলপথ পরিবহণকে আরও বেশি করে ব্যবহার করা হবে। তখন চাঁদপাল-শিবপুর রুটে কাঠের ছোট লঞ্চের পরিবর্তে হুগলি নদী জলপথ পরিবহণ সমিতির ২৫০ আসনের মাঝারি লঞ্চ বা প্রয়োজনে ৪০০ আসনের বড় ইস্পাতের লঞ্চ ওই ফেরিঘাট থেকে চালানো হবে।
কিন্তু ওই ফেরিঘাটের পরিকাঠামোর উন্নতি না করে কী ভাবে তা সম্ভব? পরিবহণমন্ত্রী মদন মিত্র বলেন, “এটা ঠিকই যে, ওই ফেরিঘাটে অনেক সমস্যা রয়েছে। এ সব আগের সরকার ও সিপিএম পরিচালিত হুগলি নদী জলপথ পরিবহণের পরিচালন সমিতি করে গিয়েছে। ঘাটটির পরিকাঠামের উন্নতি করে আর কী কী করা যায়, তা খতিয়ে দেখা হচ্ছে।”
লঞ্চ-কর্মীদের অভিযোগ, দীর্ঘদিন ধরে ঠিকমতো রক্ষণাবেক্ষণ না করায় দিনের পর দিন জোয়ারের ধাক্কায় শিবপুর-সহ অনেক ফেরিঘাটেরই পন্টুনগুলো ঝাঁঝরা হয়ে গিয়েছে। অবিলম্বে সেগুলি না পাল্টালে বা ঠিকমতো রক্ষণাবেক্ষণ না করলে যে কোনও সময় বড় দুর্ঘটনা ঘটতে পারে। শুধু শিবপুর ঘাট নয়, অবিলম্বে রক্ষণাবেক্ষণের প্রয়োজন বাগবাজার, আর্মেনিয়ান এবং বজবজ ঘাটেরও। কর্মীদের অভিযোগ, মেটিয়াবুরুজ ঘাটের এমন অবস্থা যে, পন্টুন ফুটো হয়ে জলে ভরে যাচ্ছে। পাম্প করে তা বের করে তবেই লঞ্চ চালানো যায়।
এ ব্যাপারে হুগলি নদী জলপথ সমবায় সমিতির চেয়ারম্যান প্রণববাবু বলেন “আমরা ইতিমধ্যে রাজ্য ভূতল পরিবহণ সংস্থার ম্যানেজিং ডিরেক্টরকে দু’বার চিঠি দিয়ে জানিয়েছি, মেটিয়াবুরুজ-সহ কয়েকটি ঘাটের পন্টুনের অবস্থা খুবই খারাপ। যা সারানোর মতো আর্থিক পরিস্থিতি সমবায় সমিতির নেই। রাজ্যকেই সারিয়ে দিতে হবে।”
|