হাওড়ার নয়া মহাকরণে যাতায়াতের জন্য গঙ্গার পূর্ব তীর থেকে পশ্চিমে নির্দিষ্ট রুটে ফেরি-পরিষেবা বাড়াতে উদ্যোগী হল রাজ্য সরকার। ওই রুটে পর্যাপ্ত ফেরি চালানো গেলে দ্বিতীয় হুগলি সেতুর চাপ কমবে। কমবে যানজটও। কী ভাবে ওই রুটে ফেরি-পরিষেবা বাড়ানো যায়, তা নিয়ে মহাকরণে আলোচনা হয়েছে।
মঙ্গলবারই মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় এ রাজ্যে জলপথের সদ্ব্যবহারে ব্যর্থতার অভিযোগ এনেছেন। টাউন হলের বৈঠকে এ নিয়ে তিনি প্রকাশ্যে দুষেছেন পরিবহণমন্ত্রীকে। মুখ্যমন্ত্রী ও তাঁর বিভিন্ন বিভাগ-সহ রাজ্যের একগুচ্ছ দফতর ১ অক্টোবর থেকে মন্দিরতলায় স্থানান্তরিত হলে সেখানে যাতায়াতের জন্য ফেরির প্রয়োজনীয়তা বাড়তে পারে। এই পরিস্থিতিতে বিষয়টি নিয়ে দফতরের সচিব এবং সংশ্লিষ্ট বিভাগগুলির কর্তাদের সঙ্গে কথা বলেছেন পরিবহণমন্ত্রী মদন মিত্র। |
বৃহস্পতিবার এ বিষয়ে মদনবাবু বলেন, “নতুন মহাকরণে যাতায়াতের ক্ষেত্রে যাতে কেউ সমস্যায় না পড়েন, তার জন্য সব রকম চেষ্টা করা হবে। মহানগরীর জলপথকে আরও বেশি করে ব্যবহার করা হবে।”
চাঁদপাল ঘাট-শিবপুরের মাঝে রয়েছে হুগলি জলপথ পরিবহণ সমবায় সমিতির দু’টি ফেরি রুট। প্রায় ১৭ বছর আগে রাজ্য সরকারের নির্দেশে এই সমিতি ‘সুন্দরবন লঞ্চ অ্যাসোসিয়েশন’-এর হাত থেকে রুটটির দায়িত্ব নেয়। সমিতি সূত্রের খবর, এর পরে এক বারও এই রুট লাভের মুখ দেখেনি। এই রুটে ১০০ আসনের দু’টি ফেরি দিনের ব্যস্ত সময়ে ১৫ মিনিট অন্তর, অন্য সময়ে এবং ছুটির দিনে ৩০ মিনিট অন্তর চলার কথা। সমিতির এক কর্তা বলেন, “যাত্রীর অভাবে ফেরি-পরিষেবার সময়ের এই ব্যবধান বেড়ে যায়। নয়া সচিবালয় চালু হলে যাত্রী বাড়বে, দেড় যুগের উপরে লোকসানে চলা রুটটি হয়তো লাভজনক হবে।”
নতুন মহাকরণ চালু হলে বিদ্যাসাগর সেতুর উপরে গাড়ির সংখ্যা বাড়বে। পরিবহণ দফতরের অনুমান, কলকাতা থেকে যাঁরা যাবেন, তাঁদের অনেকেই মনে করছেন এ কারণে টোলের গেটে বাড়তি সময় লাগতে পারে। ফলে, ফেরির চাহিদা বাড়ার সম্ভাবনা রয়েছে। ফেরির সুযোগ বেশি নিতে পারবেন চক্ররেলের যাত্রীরা। চাঁদপাল ঘাট থেকে ফেরিতে তাঁরা মন্দিরতলার সচিবালয়ে যেতে পারেন। তবে, শিবপুর ঘাটে নেমে কিছুটা হাঁটতে হবে। পরিবহণ দফতরের এক পদস্থ অফিসার বলেন, “নতুন মহাকরণ চালু হলে ঘাটে পর্যাপ্ত অটো অথবা রিকশা রাখার চেষ্টা হচ্ছে।” তবে, ফেরির এক পিঠের ভাড়া ৫ টাকা থেকে বাড়ানোর জন্য সমিতির কর্তারা অনুরোধ করেন মন্ত্রীর কাছে।
জলপথে নতুন মহাকরণে যাতায়াতকারীর সংখ্যা কত হবে, তার আন্দাজ পেলে বাড়তি বা বড় মাপের ফেরি চালানোর সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে বলে জানান হুগলি জলপথ পরিবহণ সমবায় সমিতির চেয়ারম্যান প্রণব ঘোষ। সমিতির হেফাজতে রয়েছে আড়াইশো আসনের নিজস্ব ১০টি ফেরি। ৪০০ আসনের ইস্পাতের কিছু বড় ফেরিও রয়েছে। প্রণববাবু বলেন, “ফেরির যাত্রী-স্বাচ্ছন্দ্যে খামতি থাকবে না। মহাকরণ থেকে যে রকম নির্দেশ আসবে, তা-ই কার্যকরী করা হবে।” শিবপুর থেকে ইতিমধ্যে রামকৃষ্ণপুর রুটে ফেরির যাত্রী বেড়েছে। সমিতির এক কর্তা বলেন, ফোরশোর রোড এলাকায় বেশ কিছু আবাসন তৈরি হওয়াতেই বেড়েছে চাহিদা।
অন্য দিকে, মেটিয়াবুরুজ থেকে তেলকল ঘাট রুটের ফেরি বেশ কয়েক বছর ধরে বন্ধ। এই রুটে ফেরি চালাত পশ্চিমবঙ্গ ভূতল পরিবহণ নিগম। ফের রুটটি চালু করতে গেলে তেলকল ঘাটের পরিত্যক্ত জেটির মেরামতি দরকার। নিগমের এক পদস্থ অফিসার বলেন, “আমাদের ফেরি রয়েছে ১৯টি। এর মধ্যে মহানগরী অঞ্চলের জন্য বরাদ্দ ১০টি, কাকদ্বীপ-সাগর অঞ্চলের জন্য পাঁচটি।” নতুন মহাকরণে ফেরি-পরিষেবায় যাত্রী-স্বাচ্ছন্দ্য প্রসঙ্গে নিগমের ম্যানেজিং ডিরেক্টর নীলাঞ্জন শাণ্ডিল্য বলেন, “বিষয়টি খতিয়ে দেখা হচ্ছে। তার পরে যথাসময়ে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।” |