শ্যাওলা-বুকে, অবহেলায় কোম্পানির তৈরি মিনার
ষ্ট হচ্ছে ইতিহাস।
হাওড়ার ডোমজুড়ের মহিয়াড়ি গ্রাম। বর্ধিষ্ণু এই গ্রামের ইতিউতি এখন আধুনিক জীবনের ছোঁয়া। আবাসন থেকে শপিং মল সবই রয়েছে এখানে। কিন্তু গ্রামেরই খটিরবাজার এলাকায় এলে চোখ আটকাবে একটি লম্বা মিনারে। যার শরীরের ইটের পাঁজর সবুজ হয়ে গিয়েছে শ্যাওলা ও আগাছাতে। এলাকায় মানুষের কাছে মিনারটি পরিচিত ‘গির্জা’ বলে।
বর্তমানে মিনারটির উচ্চতা প্রায় আড়াইতলা বাড়ির সমান। প্রবেশপথ ভর্তি ঘন জঙ্গলে। ভেঙে গিয়েছে উপরে ওঠার সিঁড়ি। পথচারী, বাস, ট্রেকারের কনডাক্টরের কাছে এর পরিচয় শুধুই ‘গির্জাতলা’ স্টপেজ।
কিন্তু কী কারণে, কারা তৈরি করেছিল এই মিনার?
এলাকার বাসিন্দাদের কেউ বলেন, এই মিনার তৈরি করেছিলেন বিপ্লবীরা। আবার কারও মতে, মিনার তৈরি করেছিল ব্রিটিশরাই। কিন্তু কবে?
ডোমজুড়ের সেই মিনার। ছবি: রমাপ্রসাদ গঙ্গোপাধ্যায়।
স্থানীয় মাকড়দহ বামাসুন্দরী ইনস্টিটিউশনের শিক্ষক কালিকানন্দ মণ্ডল জানালেন, “ওই মিনার আসলে সিগন্যালিং টাওয়ার। তৈরি করেছিল ব্রিটিশ ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানি। টেলিগ্রাম ব্যবস্থা তখনও শুরু হয়নি। তখন এই ব্যবস্থাকে বলত ‘সিমাফোর’ ব্যবস্থা। সময়টা ১৮১৮ সালের আগে-পরে।” কালিকানন্দবাবুর কথারই প্রমাণ মেলে ‘হাওড়া জেলার পুরাকীর্তি’র (১৯৭৬ সালের সংস্করণ) ১১৬ পাতায়। সেখানে বলা হয়েছে, “১৯০৯ খ্রীষ্টাব্দে প্রকাশিত হাওড়া জেলা গেজেটিয়ারে মাহিয়াড়ির এ স্তম্ভটির বর্ণনায় বলা হয়েছে১৬৫’ (৫০.৩ মি.) উচ্চতার এই মিনারের চূড়ায় যেতে হলে কতকগুলি দীর্ঘ সিঁড়ি বেয়ে উঠতে হয়।” এই বইয়ের তথ্য অনুযায়ী, কলকাতার ফোর্ট উইলিয়াম দুর্গ থেকে শুরু করে, হাওড়া, হুগলি, বাঁকুড়া ও বিহারের কিছু জায়গায় এই ধরনের মিনার তৈরি হয়েছিল। কিন্তু কিছু দিন পরেই ‘ইলেকট্রিক টেলিগ্রাফ’ পদ্ধতি আবিষ্কার হওয়ায় এই মিনারগুলি বাতিল হয়ে যায়। হাওড়ার বড়গাছিয়াতেও এই ধরনের একটি মিনারের কথা এই বইটিতে থাকলেও বর্তমানে তার অস্তিত্ব নেই। এলাকায় দুই শতকের প্রাচীন কীর্তি রয়েছে অথচ নেই সংরক্ষণের উদ্যোগ। কী বলছে পুরাতত্ত্ব দফতর?
রাজ্য পুরাতত্ত্ব দফতরের উপ-অধিকর্তা অমল রায় বলেন, “দিল্লি থেকে আগরা পর্যন্ত এবং হরিয়ানায় এ রকম বেশ কয়েকটি মিনার সংরক্ষণ করা হয়েছে। ন্যাশনাল মনুমেন্ট অথরিটি এগুলির তালিকা-সহ একটি বই প্রকাশ করেছে। আমাদের রাজ্যেও হেরিটেজ কমিশন অথবা পুরাতত্ত্ব দফতরের মাধ্যমে এ ধরনের মিনার সংরক্ষণ করা যেতে পারে।” তিনি আরও জানান, মহিয়াড়ির মিনারটির ক্ষেত্রে পুরনো ছবি দেখে সংরক্ষণের কাজ করা যেতে পারে। তবে, তাঁদের কাছে এখনও কোনও প্রস্তাব বা অনুরোধ আসেনি।”
ডোমজুড় পঞ্চায়েত সমিতির সদস্য সজল ঘোষ (বীরু) বলেন, “ওই মিনারটি বর্তমানে ভগ্নপ্রায়। এটা ঠিক, গ্রামের বেশিরভাগ মানুষই এর ইতিহাস জানেন না। স্থানীয় প্রশাসন যাতে এ বিষয়ে উদ্যোগী হয় তা দেখব।”
আপাতত, ‘গির্জাতলা’র নীচে রয়েছে পান, বিড়ি ও ঘড়ি সারাইয়ের দোকান। ইতিহাস মুখ ঢেকেছে অজ্ঞতায়।



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.