সন্ধ্যে সাড়ে সাতটা। বৃষ্টি চলছে একটানা। যাত্রীবোঝাই একটি বাস এসে থামল চায়ের দোকানের সামনে। বাস থেকে নেমেই যাত্রীরা পড়িমড়ি করে চায়ের দোকানটিতে ঢুকে পড়লেন। খালি বাসটি এগিয়ে গেল কাছের বাসস্ট্যান্ডের দিকে।
জায়গাটি হল দুর্গাপুর শহরের অন্যতম প্রধান ‘প্রান্তিকা’ বাসস্ট্যান্ড। প্রতিদিন এখান থেকে প্রচুর বাস ছাড়লেও যাত্রীদের বসা কিংবা দাঁড়ানোর কোনও জায়গা এখানে নেই। জায়গা না থাকায় বাসস্ট্যান্ডের পাশ থেকেই ছাড়ে অনেক বাস। প্রশাসন ও স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, দুর্গাপুর স্টেশন থেকে ছেড়ে এ জোন, বি জোন, বেনাচিতি, এমএএমসি, বিধাননগর, মুচিপাড়া প্রভৃতি এলাকা হয়ে প্রায় দু’শো মিনিবাস প্রতিদিন এই বাসস্ট্যান্ডে আসে। এর বাইরে বিভিন্ন দূরপাল্লা রুটের বাস তো আছেই। জায়গার অভাবে রাস্তা জুড়ে দাড়িয়ে থাকে বাস। বাসস্ট্যান্ডের পাশেই রয়েছে খোলা নর্দমা। রাতে নেই পর্যাপ্ত আলো। |
এমনই হাল বাসস্ট্যান্ড লাগোয়া রাস্তার। —নিজস্ব চিত্র। |
স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, আগে দুর্গাপুর ছিল পুরোপুরি সরকারি পরিবহনের উপর নির্ভরশীল। রুট ও বাসের সংখ্যাও ছিল হাতেগোনা। কয়েক বছর আগে থেকে বদলাতে থাকে দুর্গাপুর। গড়ে ওঠে নতুন কারখানা, ইঞ্জিনিয়ারিং ও ম্যানেজমেন্ট কলেজ, শপিং মল, মাল্টিপ্লেক্স। চালু হয় নতুন বাস রুট। কিন্তু প্রান্তিকা বাসস্ট্যান্ড থেকে যায় অন্ধকারেই। বাস ধরতে এসে ও বাস থেকে নেমে প্রতিদিনই সমস্যায় পড়ছেন যাত্রীরা। স্থানীয় বাসিন্দা বিপুল দে, সোনালী মণ্ডলের আক্ষেপ, “দিনের পর দিন এই ভাবেই চলছে। দেখে আমাদের গা সওয়া হয়ে গিয়েছে।” বিধাননগরের একটি বেসরকারি ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজের পড়ুয়া সোহম সেন ও অনামিকা সাউয়ের ক্ষোভ, “এই শহরেই কত শপিং মল ও মাল্টিপ্লেক্স রয়েছে। কিন্তু এই বাসস্ট্যান্ডে এসে মনে হচ্ছে কোনও পুরনো ঘিঞ্জি শহরে রয়েছি।”
দুর্গাপুরের অন্যতম বাস মালিক সংগঠন দুর্গাপুর প্যাসেঞ্জার ক্যারিয়ার অ্যাসোসিয়েশনের কর্তা কাজল দে বলেন, “বাস মালিক সংগঠনের পক্ষ থেকে যাত্রীদের সুবিধার জন্য বেশ কিছু পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে।” তবে যাত্রী সংখ্যার নিরিখে সেটা যে যথেষ্ট নয়, সেটাও স্বীকার করেছেন তিনি।
কি বলছে পুরসভা?
পুরসভা সূত্রে জানা গিয়েছে, ওই বাসস্ট্যান্ড সম্প্রসারণের প্রয়োজনীয় জমি পুরসভার হাতে নেই। এখন যেখানে বাসস্ট্যান্ড রয়েছে সেটি আগে দুর্গাপুর ইস্পাত কারখানার (ডিএসপি) অব্যবহৃত জমি ছিল। সেখানেই আগে বাস দাঁড়াতো। পরে সেটাই বাসস্ট্যান্ডে পরিবর্তিত হয়। দুর্গাপুর পুরসভার মেয়র অপূর্ব মুখোপাধ্যায় বলেন, “ওই জমি ডিএসপি’র। আমরা পুরসভায় বোর্ড গড়ার পরে ডিএসপি কর্তৃপক্ষের কাছে বিষয়টি জানিয়েছি। ফের চিঠি লিখে উপযুক্ত ব্যবস্থা নেওয়ার আর্জি জানাব।” |