এক মেয়র পারিষদকে পদ থেকে সরিয়ে দেওয়া নিয়ে চাপানউতোর শুরু হয়েছে আসানসোল পুরসভায়। পুর কর্তৃপক্ষের বিরুদ্ধে নানা বেনিয়মের অভিযোগ তোলার জন্যই কংগ্রেসের মেয়র পারিষদ (শিক্ষা) গোলাম সরওয়ার তৃণমূলের মেয়র তাপস বন্দ্যোপাধ্যায় অপসারিত করেছেন বলে অভিযোগ উঠেছে। মেয়রের পাল্টা দাবি, আইনের এক্তিয়ারে থেকেই পদাধিকার বলে এই পদক্ষেপ করেছেন তিনি।
পুরসভার একটি সূত্রে জানা যায়, বছরখানেক ধরেই ওই মেয়র পারিষদের সঙ্গে মেয়রের ঠান্ডা লড়াই চলছিল। তার পিছনে মূল কারণ, পুরসভা পরিচালিত আগাবেগ স্কুলের পরিচালন পদ্ধতি। মাস তিনেক আগে সেই সংঘাত চরমে ওঠে। ছাত্র ভর্তিতে বেনিয়ম-সহ পরিচালন পদ্ধতিতে নানা ত্রুটির সঙ্গে গোলাম সরওয়ার জড়িত সরাসরি জড়িত বলে অভিযোগ উঠেছিল। পুর কমিশনারের পরামর্শে সেই সব অভিযোগ খতিয়ে দেখতে মেয়র তাপসবাবু একটি তদন্ত কমিটি গঠন করেন। সবিস্তার তদন্তের রিপোর্ট সেই কমিটি মেয়রের কাছে জমাও দেয়। কিন্তু তার পরে বিষয়টি নিয়ে আর কোনও নড়াচড়া হয়নি। ইতিমধ্যে তৎকালীন কমিশনার চলে যান। বিষয়টি কার্যত ধামাচাপা পড়ে যায়।
এত দিন পরে মেয়র ও মেয়র পারিষদের (শিক্ষা) সেই সংঘাত ফের প্রকাশ্যে এল। পুরসভা সূত্রে জানা যায়, গোলাম সরওয়ার মেয়রের বিরুদ্ধে একটি মামলা করেছেন হাইকোর্টে। আগাবেগ স্কুলে কয়েক জন অস্থায়ী শিক্ষককে স্থায়ীকরণের দাবিতেই মেয়রের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের হয়েছে বলে একটি সূত্রে খবর। গোলাম সরওয়ারকে অপসারণের কারণ কী, সে প্রশ্নে শুক্রবার বিকেলে মেয়র তাপসবাবুর সাফ বক্তব্য, “বোর্ডের প্রশাসনিক পদে থেকে সমস্ত সুযোগ-সুবিধা ভোগ করে আমার বিরুদ্ধে মামলা করার অধিকার তাঁর নেই। তাই তাঁকে অব্যাহতি দিয়েছি।” মেয়রের দাবি, তাঁর বিরুদ্ধে মামলা করা যেতেই পারে, তবে প্রশাসনিক পদে থেকে নয়। কিন্তু তাঁর বিরুদ্ধে কীসের অভিযোগে মামলা করা হয়েছে, তা তাপসবাবু নির্দিষ্ট করে জানাতে অস্বীকার করেছেন। |
গোলাম সরওয়ার। |
তাপস বন্দ্যোপাধ্যায়। |
|
মামলার প্রসঙ্গ এড়িয়ে গিয়েছেন মেয়র পারিষদ গোলাম সরওয়ার নিজেও। তিনি পাল্টা অভিযোগ করেন, পুরসভার নানা অনিয়ম নিয়ে তিনি বেশ কিছু দিন ধরে সরব হয়েছেন। এই সব অনিয়মে নাম জড়িয়েছে মেয়রেরও। যা তাপসবাবুর একেবারেই পছন্দ হয়নি। ওই মেয়র পারিষদের দাবি, “বামেদের আমলে তৎকালীন মেয়রের বিরুদ্ধে শহরের বিপিএল তালিকাভুক্ত মানুষদের বাড়ি তৈরিরর বিষয়ে যে ২৬ কোটি টাকা বেনিয়মের অভিযোগ উঠেছিল, তার তদন্ত শেষ হওয়ার আগেই কোনও আলোচনা ছাড়া তাপসবাবু সংশ্লিষ্ট ঠিকাদারকে টাকা মিটিয়ে দিয়েছেন। পুরসভার পরিবেশ আধিকারিকের কয়েক কোটি টাকা তছরুপের ঘটনার সঙ্গে পরোক্ষে অনেকেই জড়িয়ে আছেন। আসানসোলে একাধিক জায়গায় উন্নয়নমূলক কাজের নামে নিয়মনীতি না মেনে খামখেয়ালি কাজকর্ম হচ্ছে। আমি এ সবের প্রতিবাদ করেছি।” গোলাম সরওয়ারের দাবি, বিষয়গুলি প্রকাশ্যে আসায় অস্বস্তিতে পড়ে ও নিজের পিঠ বাঁচাতে মেয়র তাঁর মুখ বন্ধ করার চেষ্টা করেছেন।
পুরসভা ও রাজনৈতিক মহলের একাংশ অবশ্য গোটা ঘটনাটিকে ‘সাজানো’ ও ‘নাটক’ বলে দাবি করেছে। মেয়র তাপসবাবুর দাবি, এই অপসারণের ঘটনায় পুরসভায় কোনও রাজনৈতিক অস্থিরতা দেখা দেবে না। ওই পদটি কংগ্রেসের জন্যই সংরক্ষিত। তাঁদের সঙ্গে আলোচনা করেই পরবর্তী মেয়র পারিষদের নাম ঠিক করা হবে বলে জানান তিনি। দলের মেয়র পারিষদের সঙ্গে তৃণমূল থেকে নির্বাচিত মেয়রের এই বিবাদ থেকে দূরত্ব বজায় রেখেছেন কংগ্রেস নেতৃত্ব। দলের বর্ধমান জেলা সাধারণ সম্পাদক তথা আসানসোলেরই আর এক মেয়র পারিষদ রবিউল ইসলামের বক্তব্য, “গোলাম সরওয়ার দলের সঙ্গে কোনও আলোচনা ছাড়াই একতরফা সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। এর সঙ্গে দলের কোনও সম্পর্ক নেই। প্রশাসনিক পদে থেকে মেয়রের বিরুদ্ধে মামলা করা তাঁর উচিত হয়নি।”
দল পাশে না থাকলেও দমে যেতে নারাজ গোলাম। তাঁর কথায়, “অন্যায়ের প্রতিবাদ করেছি। ভবিষ্যতেও করব।”
|