গত জুন মাসে গড়ে ৭০ শতাংশ বেতন মিলেছিল। জুলাইয়ে তা কমে দাঁড়ায় গড়ে ৬৯ শতাংশ। এক বছরের বেশি সময় ধরে প্রতিমাসে পুরো বেতন না মেলায় উত্তরবঙ্গ রাষ্ট্রীয় পরিবহণ নিগমের (এনবিএসটিসি) সাড়ে তিন হাজার কর্মী বিপাকে পড়েছেন বলে অভিযোগ। নিগম সূত্রের খবর, ইতিমধ্যে বকেয়া বেতনের পরিমাণ বেড়ে দাঁড়িয়েছে ১৩ কোটি টাকার বেশি। কর্তৃপক্ষের কাছে বারবার দাবি জানিয়েও পুরো বেতন না মেলায় লাগাতার আন্দোলনের পাশাপাশি আদালতের দ্বারস্থ হওয়ার হুমকি দিয়েছেন সংস্থার বিভিন্ন কর্মী সংগঠনের নেতারা।
পুরো বেতনের দাবিতে আজ, শুক্রবার নিগমের সমস্ত ডিপোয় সকাল ১১টা থেকে এক ঘণ্টা বিক্ষোভ দেখান এনবিএসটিসি ওয়ার্কাস ইউনিয়ন। নিগমের ম্যানেজিং ডাইরেক্টর জয়দেব ঠাকুর বলেন, “রাজ্য সরকার নির্দিষ্ট ভর্তুকির টাকা ঠিকমত দিচ্ছে। তারপরেও আর্থিক সমস্যায় আমরা পুরো বেতন মেটাতে পারছি না। বিষয়টি উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানিয়েছি।”
নিগম সূত্রেই জানা গিয়েছে, সংস্থার সাড়ে তিন হাজার কর্মীর বেতন বাবদ প্রতিমাসে গড়ে ৭ কোটি টাকা দরকার হয়। রাজ্য সরকার আর্থিক ভর্তুকি বাবদ দেয় ৫ কোটি ৬৫ লক্ষ টাকা। বাকি ১ কোটি ৩৫ লক্ষ টাকার ঘাটতি থেকে যাচ্ছে। সংস্থার বাস চালিয়ে গড়ে পৌনে ৭ কোটি টাকা আয় হলেও তেল, যন্ত্রাংশ কেনা, বিদ্যুৎ টেলিফোন বিল-সহ আনুষাঙ্গিক নানা কাজে তার সিংহভাগ টাকা খরচ হয়ে যাচ্ছে। নিগমের এক আধিকারিক জানান, রাজ্য সরকারের ভর্তুকির টাকাই আমাদের বেতন দেওয়ার সম্বল হয়ে দাঁড়িয়েছে। বাস চালিয়ে যা আয় হচ্ছে তার প্রায় পুরোটা দিয়ে খরচ সামলাতে হচ্ছে। এতে বেতন মেটানো সমস্যা হয়ে দাঁড়িয়েছে।
সংস্থার পরিচালন বোর্ডের সদস্য আবদুল জলিল আহমেদ বলেন, “আয় বাড়িয়ে সমস্যা মেটানোর ব্যাপারে একগুচ্ছ পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে। পরবর্তী বৈঠকে পরিস্থিতি পর্যালোচনা করে বকেয়া বেতন মেটানোর ব্যাপারে পরিচালন বোর্ড উদ্যোগী হবে।”
এনবিএসটিসি ওয়াকার্স ইউনিয়নের কোচবিহারের ডিভিশনাল সম্পাদক সুজিত সরকার জানান, ২০১২ সালের জুন মাস থেকে ফি মাসে পুরো বেতন দেওয়া হচ্ছে না। বহুবার বলেও লাভ না হওয়ায় আমরা লাগাতর আন্দোলনে নামছি। এতেও কাজ না হলে আদালতের দ্বারস্ত হব। সিটু অনুমোদিত এমপ্লয়িজ অ্যাসোসিয়েশনের সম্পাদক জগৎজ্যোতি দত্ত বলেন, “দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধির বাজারে এভাবে বেতন কমায় কর্মীদের দিশেহারা অবস্থা। যাদের বাইরে বদলি করা হয়েছে তাদের দুই জায়গায় সংসার খরচ সামলানো আরও কষ্টকর হয়ে পড়েছে।”
নিগম কর্তৃপক্ষ অবশ্য জানিয়েছে, স্বেচ্ছাবসর প্রকল্প কার্যকর হলে সংস্থার ৬০৭ জন কর্মীর চাপ কমবে। তাতে মাসে প্রায় সওয়া দুই কোটি টাকার আর্থিক বোঝাও কমে যাবে। এতে জানুয়ারি থেকে কর্মীদের পুরো বেতন দেওয়া যাবে বলে আশা করা হচ্ছে।
|