স্বেচ্ছাবসর আবেদনকারী ছ’শোর বেশি কর্মীর বকেয়া মেটাতে রাজ্য সরকারের কাছে ৯২ কোটি টাকা চাইল উত্তরবঙ্গ রাষ্ট্রীয় পরিবহণ নিগম। গত সপ্তাহে ওই টাকা চেয়ে রাজ্য পরিবহণ দফতরে চিঠি পাঠিয়েছে নিগমের ম্যানেজিং ডাইরেক্টর। সম্প্রতি রাজ্য স্বেচ্ছাবসর প্রকল্পে আবেদনকারীদের কার্যকালের মেয়াদ ৩০ সেপ্টেম্বরের মধ্যে শেষ করার লক্ষ্যমাত্রা ঘোষণা করে। তার ভিত্তিতেই দ্রুত হিসেব করে ওই বরাদ্দ চেয়ে পাঠানো হয়েছে। পাশাপাশি এতজন কর্মী স্বেচ্ছাবসর নিলে নিগমের কাজ চালানোর জন্য প্রায় দু’শো অস্থায়ী কর্মী নিয়োগের সিদ্ধান্তও নিয়েছেন নিগম কর্তৃপক্ষ।
উত্তরবঙ্গ উন্নয়ন মন্ত্রী তথা নিগমের চেয়ারম্যান গৌতম দেব বলেন, “নথিপত্র তৈরি হয়ে গিয়েছে। পুজোর আগেই তা চালুর চেষ্টা হচ্ছে। খুব শীঘ্রই পরিচালন বোর্ডের বৈঠক করে সমস্ত কিছু পর্যালোচনা করে পদক্ষেপ করা হবে।” নিগম ম্যানেজিং ডাইরেক্টর জয়দেব ঠাকুর বলেন, “স্বেচ্ছাবসর প্রকল্পের আবেদনকারীদের বকেয়া মেটাতে রাজ্য সরকারের কাছে প্রায় ৯২ কোটি টাকা বরাদ্দ চাওয়া হয়েছে। বরাদ্দ পেলে প্রকল্প-কাজ শুরু হবে।”
নিগম সূত্রের খবর, সংস্থার ক্ষতির পরিমাণ কমাতে, পরিবহণ দফতর গত ১৪ নভেম্বর স্বেচ্ছাবসরের বিজ্ঞপ্তি দেয় একাধিক বার সময়সীমা বাড়ানোর পর মোট ৬৮৭ জন স্বেচ্ছাবসর প্রকল্পে আবেদন করে। এদের মধ্যে ৬১২ জনের আবেদন গৃহীত হয়েছে বলে জানা গিয়েছে। ৫ আবেদনকারীর মৃত্যু হয়েছে বলে নিগম সূত্রের খবর। বাকি কর্মীদের মাথাপিছু লিভ স্যালারি, গ্র্যাচুইটি, প্রভিডেন্ট ফান্ড সহ অন্য বকেয়া মিলিয়ে গড়ে ১৫ লক্ষ টাকা করে পাওনা। সব মিলিয়ে প্রকল্পের প্রয়োজনীয় টাকার পরিমাণ দাঁড়িয়েছে প্রায় ৯২ কোটি টাকা। জয়দেববাবু বলেন, “নির্দেশিকা আছে ঠিকই। এক সঙ্গে ৬০৭ জনকে স্বেচ্ছাবসর দেওয়া হলে পরিষেবা স্বাভাবিক রাখা নিয়ে সমস্যা হবে। প্রথম ধাপে প্রায় ৩০০ জনকে অবসর দেওয়ার কথা ভাবা হচ্ছে। বাকিদের কার্যকালের সময়সীমা বাড়ানোর পাশাপাশি, অস্থায়ী ভাবে চালক-কন্ডাক্টর মিলে ২৬০ জনকে নিয়োগের আবেদন করা হয়েছে।”
প্যাকেজে প্রকল্পের আওতাধীনরা প্রথম দফায় পাওনার এক তৃতীয়াংশ টাকা পাবেন। আগামী ৯০ দিনের মধ্যে দুই কিস্তিতে তাদের বাকি প্রাপ্য রাজ্য সরকার মিটিয়ে দেবে বলে জানা গিয়েছে। প্রাথমিক ভাবে সিদ্ধান্ত হয়েছে, রাজ্য সরকার কতটা বরাদ্দ মঞ্জুর করে তার হিসেবে মাথাপিছু প্রথম কিস্তির অঙ্ক ঠিক করা হবে। তবে সংশয়ে রয়েছে নিগমের বিভিন্ন কর্মী ইউনিয়নের নেতৃত্ব। ইনটাক অনুমোদিত ওয়ার্কাস ইউনিয়নের সম্পাদক সুজিত সরকার বলেন, “প্রত্যেক কর্মী গড়ে ১৫ লক্ষ টাকা পাবেন। ঘোষণা মতো নির্দিষ্ট দিনের মধ্যে তাঁরা যাতে ওই টাকা পেয়ে যান, তা নিশ্চিত করা দরকার।” সিটু অনুমোদিত এমপ্লয়িজ ইউনিয়নের সম্পাদক জগৎজ্যোতি দত্ত এই প্রসঙ্গে বলেন, “উদ্যোগকে আমরা স্বাগত জানাচ্ছি। তবে আবেদনকারীদের আর্থিক স্বার্থ যাতে কোনও ভাবেই বিঘ্নিত না হয় সেটা দেখা প্রয়োজন।” |