পঞ্চায়েতের ময়না-তদন্ত ঘিরে উত্তপ্ত রাজ্য কমিটি
শুধু শাসক দলের সন্ত্রাসই পঞ্চায়েত ভোটে তাঁদের বিপর্যয়ের একমাত্র কারণ নয় বলে দলের অন্দরে কবুল করে নিলেন সিপিএম রাজ্য সম্পাদক বিমান বসু। কিন্তু দলের সাধারণ সম্পাদক প্রকাশ কারাটের উপস্থিতিতেই পঞ্চায়েত ভোটের প্রাথমিক ময়না তদন্তের আসরে উঠে এল প্রবল মতবিরোধ! নাম না-করে উত্তর ২৪ পরগনার জেলা সম্পাদক গৌতম দেবকে নিশানা করা হল। উত্তরবঙ্গের প্রাক্তন মন্ত্রী তীব্র আক্রমণ করলেন এক কালের লাল দুর্গ
বৈঠকে ভুল কবুল
রেজ্জাকের।
বর্ধমান জেলাকে। যে আক্রমণের মোকাবিলায় নজিরবিহীন ভাবে মাঠে নামানো হল জেলার চার সদস্যকে।
এই চাপানউতোরের আবহেই তাৎপর্যপূর্ণ ঘটনা দলের ‘বিদ্রোহী’ নেতা আব্দুর রেজ্জাক মোল্লার ভুল স্বীকার। পঞ্চায়েত ভোটের ফলপ্রকাশের সময়েও প্রকাশ্যে কিছু মন্তব্য করে ফের দলীয় নেতৃত্বের বিরাগভাজন হয়েছিলেন রেজ্জাক। যাঁর নিজের এলাকায় এ বার পযুর্দস্ত হয়েছে সিপিএম। আলিমুদ্দিনে বৃহস্পতিবার রাজ্য কমিটির বৈঠকে রাজ্য নেতৃত্বের পেশ করা রিপোর্টেও বলা হয়েছে, পঞ্চায়েত ভোটে ভয়াবহ পরিস্থিতির মধ্যেও দলীয় শৃঙ্খলাকে গুরুত্ব না-দিয়ে কিছু নেতা এমন মন্তব্য করেছেন, যা আখেরে শাসক দলের কাজে লেগেছে। এর পরেই রেজ্জাক এ দিন বৈঠকে মেনে নেন, তিনি প্রকাশ্যে ওই জাতীয় কথা বলে ভুল করেছেন। এ বার থেকে তিনি সংযমী হতে চান। রেজ্জাকের বক্তব্যকে অভিনন্দন জানিয়েও পরে নদিয়ার এক প্রতিনিধি বৈঠকেই কটাক্ষ করেছেন, আশা করি এ বার গলার গামছাটা রেজ্জাক ছেড়ে দেবেন!
সংগঠনের পুনর্বিন্যাস এবং নেতৃত্বের রদবদলের দাবি তুলতে অবশ্য ছাড়েননি রেজ্জাক। সন্ত্রাসের মধ্যেও উত্তর ও দক্ষিণ ২৪ পরগনা তুলনায় ভাল ফল করল অথচ বর্ধমান বা পশ্চিম মেদিনীপুর কেন পারল না, তা নিয়ে কিছু প্রশ্ন তুলেছিলেন গৌতমবাবু। রেজ্জাক এ দিন পাল্টা বলেছেন, রাজ্য আর জেলা পরস্পরকে দোষ দেবে, আবার জেলার মধ্যেও এ ভাল, ও খারাপ এই মানসিকতা নিয়ে বসে থাকলে হবে না। ভুল সকলের, এই মনোভাব নিয়ে এগোতে হবে। দল পরিচালনার ব্যাপারে তাঁর নিজস্ব প্রস্তাব সংবলিত একটি নোট এ দিন বিমানবাবুর কাছে জমা দিয়েছেন রেজ্জাক। বেশ কিছু দিন পরে রাজ্য কমিটিতে হাজির হয়ে পৃথক একটি নোট জমা দিয়েছেন দক্ষিণ ২৪ পরগনারই আর এক নেতা শমীক লাহিড়িও। জবাবি ভাষণে বিমানবাবু আশ্বাস দিয়েছেন, পরে প্রয়োজনে তা নিয়ে আলোচনা হবে।
কিছু দিন আগে পর্যন্তও দলের অভ্যন্তরে মডেল জেলা হিসেবে পরিচিত বর্ধমানে কেন ভরাডুবি হল, তা নিয়ে বৈঠকে আক্রমণাত্মক হয়ে ওঠেন শিলিগুড়ির এক নেতা। তার আগেই জেলা সম্পাদক দাবি করেছিলেন, বুথ দখল এবং গণনায় কারচুপি না-হলে এই পরিস্থিতিতেও তাঁরা জেলা পরিষদ জিততেন। জেলা নিয়ে প্রশ্ন উঠছে দেখে পরে আবার বর্ধমান থেকেই আরও তিন প্রতিনিধি বোঝানোর চেষ্টা করেন, কী আক্রমণের মুখোমুখি তাঁদের হতে হয়েছে, তা দূর থেকে আন্দাজ করা কঠিন! নদিয়ার জেলা সম্পাদক অবশ্য বলেন, মাটি কামড়ে সংগঠনের কাজ করলে সন্ত্রাসের মধ্যেও কী ভাবে ভাল ফল করা যায়। দলেরই একাংশের প্রতি তাঁর কটাক্ষ, সন্ত্রস্ত হয়ে পড়াই সব চেয়ে বড় বিপদ! দক্ষিণ ২৪ পরগনা থেকে এক প্রাক্তন মন্ত্রী (যাঁর এলাকায় ফল ভাল) প্রস্তাব দিয়েছেন, সন্ত্রাস মোকাবিলার কথা মাথায় রেখে লোকসভা ভোটের আগে গোপন ব্রিগেড গড়া হোক।
বস্তুত, তরুণ ব্রিগেড তৈরিতে মরিয়া হয়ে ঝাঁপাতে চাইছে আলিমুদ্দিনও। বিমানবাবু এ দিন বৈঠকে বলেছেন, বামফ্রন্ট রাজ্যে ক্ষমতায় নেই এই অবস্থায় পঞ্চায়েতেই এই প্রথম আস্ত একটি নির্বাচনের মুখোমুখি হলেন অধিকাংশ দলীয় কর্মী। এই অভিজ্ঞতা থেকেই শিক্ষা নিয়ে এগোতে হবে। এবং তার জন্যই রিপোর্টে বলা হয়েছে: দলে নতুন কর্মী আনতেই হবে।
নতুন কর্মী তুলে আনায় জোর দিলেও কর্মীদের কিছু কাজকর্মে দলের বিড়ম্বনার কথাও অবশ্য কবুল করে নেওয়া হয়েছে এ বারের রিপোর্টে। কারাট বৈঠকের শেষ লগ্নে পরামর্শ দিয়েছেন, পঞ্চায়েতের খুঁটিনাটি বিশ্লেষণ সেরে সংগঠনের প্রয়োজনীয় পুনর্গঠনের কাজে যেন দেরি না হয়।

পুরনো খবর:



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.