দলে অনুশাসনের অভাব ধরা পড়ছে মাঝে মাঝেই। চিন্তিত আলিমুদ্দিন এ বার রাজ্য স্তর থেকেই রোগমুক্তির চেষ্টায় নামল।
লাগাতার রাজ্য কমিটির বৈঠকে গরহাজিরার জন্য সতর্ক করা হল প্রাক্তন সাংসদ শমীক লাহিড়ীকে। কেন বারবার তিনি বৈঠক এড়িয়ে যাচ্ছেন, তাঁর কাছ থেকে জানতে চেয়েছে আলিমুদ্দিন। দক্ষিণ ২৪ পরগনা জেলা নেতৃত্বকেও বলা হয়েছে এই বিষয়ে কথা বলে রিপোর্ট দিতে। আজ, বৃহস্পতিবারই পঞ্চায়েত ভোটের পর্যালোচনা করতে বসছে রাজ্য কমিটির বৈঠক। তার আগের রাতে, বুধবার শমীককে ডেকে কথা বলেছেন রাজ্য সম্পাদকমণ্ডলীর দুই সদস্য।
|
শমীক লাহিড়ী |
দক্ষিণ ২৪ পরগনা জেলা সম্পাদকমণ্ডলীর সদস্য শমীক তাঁর জেলায় দলের সব কর্মসূচিতেই অংশ নিচ্ছেন। সিটু নেতা হিসাবে তাঁর কাজ সম্পর্কেও রিপোর্ট ভাল। কিন্তু টানা বেশ কয়েকটি রাজ্য কমিটির বৈঠক এড়িয়ে গিয়েছেন তিনি। কখনও নিজের অসুস্থতার জন্য, কখনও দাদার চিকিৎসার জন্য বাইরে থাকার কারণে। দলকে ঠিকমতো না জানিয়ে শমীকের মতো কেউ কেউ না আসায় বারদুয়েক রাজ্য কমিটির বৈঠকেই অসন্তোষ প্রকাশ করেছেন রাজ্য সম্পাদক বিমান বসু। সংগঠনে যখন নতুন করে গতি আনার প্রস্তুতি চলছে, তখন অনুশাসন রক্ষায় শেষ পর্যন্ত আলিমুদ্দিন পদক্ষেপ করেছে বলে সিপিএম সূত্রের ব্যাখ্যা। রাজ্য সম্পাদকমণ্ডলীর এক সদস্যের কথায়, “এখনও আনুষ্ঠানিক পদক্ষেপ করা হয়নি। জেলা স্তরেই দেখতে বলা হয়েছে। তার পরে প্রয়োজনে রাজ্য কমিটিতে বিষয়টি উঠতে পারে।”
নানা কারণে বেশ কিছু দিন ধরেই দলের রাজ্য নেতৃত্বের সঙ্গে দূরত্ব তৈরি হয়েছে শমীকের। আবার বেসরকারি সংস্থার সঙ্গে তাঁর যোগাযোগ নিয়ে দলের একাংশে তৈরি হয়েছে গুঞ্জন। ‘ব্যথিত’ শমীক রাজ্য পার্টি কেন্দ্রের সঙ্গে জড়িয়ে আর কাজ করতে উৎসাহী নন বলে দলে ইঙ্গিত দিয়েছেন। সিপিএম সূত্রের ইঙ্গিত, এ দিন সেই সমস্যা নিয়েই কথা হয়েছে। শমীক অবশ্য বাইরে মুখ খুলতে চাননি। আর তাঁর জেলার সম্পাদক সুজন চক্রবর্তী বলেন “ওঁর কিছু অসুবিধা আছে। শরীরেও সমস্যা হচ্ছে। এখন যা পরিস্থিতি, রাজ্যের থেকে জেলাতেই ওঁর কাজের ক্ষেত্র বেশি।”
সিপিএমের গঠনতন্ত্র অনুসারে, কোনও কমিটির সদস্য কোনও পরপর তিনটি বৈঠকে না এলে তাঁকে কারণ দর্শাতে বলতে পারে দল। দক্ষিণ ২৪ পরগনারই আর এক নেতা আব্দুর রেজ্জাক মোল্লা তাই রাজ্য কমিটির দু’টি বৈঠকে অনুপস্থিত থাকলে তৃতীয়টিতে আসেন। শমীকের ক্ষেত্রে অনুপস্থিতি বেশি হয়ে গিয়েছে। দক্ষিণ ২৪ পরগনা জেলা সম্পাদকমণ্ডলীর এক সদস্যের বক্তব্য, “ওঁর ব্যাখ্যা তলব করা হয়নি। তবে কেন এমন ঘটছে, জানতে চাওয়া হয়েছে।” প্রসঙ্গত, আজ রাজ্য কমিটিতে রেজ্জাকের নিজস্ব দলিল পেশ করতে চাওয়ার ইচ্ছা কৌতূহল তৈরি করেছে!
সিপিএম সূত্রের খবর, পঞ্চায়েত ফলের পর্যালোচনার জন্য গত সপ্তাহে দক্ষিণ ২৪ পরগনা জেলা কমিটির বৈঠকেও ছিলেন না শমীক। কিন্তু দলেরই একাংশের বক্তব্য, এ বার পঞ্চায়েত ভোটে ডায়মন্ড হারবারে ভাল ফল করেছে সিপিএম। সামনে পুরসভার ভোট। এমতাবস্থায় শমীকের মতো তরুণ নেতাকে আরও বেশি করে কাজে লাগাতে চাইছে দল। তাই আলোচনার পথেই আপাতত সমস্যা মেটানোর চেষ্টা। |