ধানচাষির মুখে হাসি ফোটানো বৃষ্টি, কপালে ভাঁজ ফেলেছে সব্জিচাষির।
গত তিন দিনের টানা বৃষ্টির জেরে রাজ্যে এ বার আমন ধানের চাষ ভাল হবে বলে মনে করছেন কৃষি দফতরের কর্তারা। আবার ওই বৃষ্টিতেই জল দাঁড়িয়ে সব্জিচাষে ক্ষতির সম্ভাবনা দেখা দিয়েছে হুগলির আরামবাগে।
বীরভূম জেলায় মঙ্গলবার দুপুর পর্যন্ত বৃষ্টির ঘাটতি ছিল। কিন্তু ছবি বদলায় বুধবার। এ দিন দুপুর পর্যন্ত বীরভূমের সিউড়িতে ৬৫ মিলিমিটার ও তিলপাড়া ব্যারাজে ৬২ মিলিমিটার বৃষ্টি রেকর্ড করা হয়েছে। এর ফলে বৃষ্টির ঘাটতি যেমন মিটেছে, তেমনই ওই জেলায় এই খরিফ মরসুমে আমন ধান রোয়ার ক্ষেত্রে সাত দিন আগে পর্যন্ত যে ঘাটতি ছিল, তারও অনেকটাই মিটে গেল বলে রাজ্য কৃষি দফতরের বক্তব্য। দফতর সূত্রের খবর, ১৪ অগস্ট বীরভূমে মাত্র ৫৭ শতাংশ জমিতে ধান রোয়া হয়েছিল। আর ২১ অগস্টের হিসেব অনুযায়ী, ওই জেলার ৮০ শতাংশ জমিতেই ধান রোয়া হয়ে গিয়েছে। কৃষি দফতরের হিসেবে, এ দিন পর্যন্ত রাজ্যে প্রায় ৯২ শতাংশ জমিতে ধান রোয়ার কাজ শেষ হয়েছে। রাজ্যের কৃষিসচিব সুব্রত বিশ্বাস এ দিন বলেন, “বীরভূম তো বটেই, এই বৃষ্টিতে পুরুলিয়া, নদিয়া, মুর্শিদাবাদ, মালদহ, বর্ধমানেও ধান রোয়ার সুবিধে হবে। ওই জেলাগুলোতেও বৃষ্টির ঘাটতি ছিল।”
জেলায়-জেলায় ঘাটতি মেটানো এই বৃষ্টি বিপদে ফেলেছে আরামবাগ মহকুমার সব্জিচাষিদের। খানাকুলের বালিপুর, অরুণ্ডা, পুড়শুড়ার সোদপুর, আরামবাগের ডোঙ্গল, গোঘাটের বালিদেওয়ানগঞ্জ, বদনগঞ্জ এলাকা সব্জি চাষের জন্য বিখ্যাত। কৃষি দফতর সূত্রে খবর, মহকুমার ছ’টি ব্লকে প্রায় সাড়ে ৯ হাজার হেক্টর জমিতে সব্জি চাষ হয়েছে। খানাকুলের দুই ব্লকেই ৫০০ হেক্টর জমিতে চাষ হয়েছে। কিন্তু টানা বৃষ্টিতে পুকুর বা অন্য জলাশয় উপচে যাওয়ায় চাষের জমিতে জমা জল দ্রুত নামছে না। ফলে এ দিন দুপুরের পর থেকে মেঘ কেটে আকাশ পরিষ্কার হলেও মুখ গোমড়া খানাকুল-পুরশুড়া-গোঘাটের চাষিদের। কারণ, নিচু এলাকায় বন্যার সম্ভাবনা থাকায় তাঁদের অনেকেই আমন চাষের ঝুঁকি নেননি। খানাকুলের নতিবপুর গ্রামের লঙ্কাচাষি বাদল মণ্ডলের হতাশা, “দু’কাঠা জমির লঙ্কা নষ্ট হয়েছে।” পুড়শুড়ার সোদপুরের চাষি সত্যচরণ সামন্তের আক্ষেপ, “মাচায় ফলানো ঝিঙে, উচ্ছে, বরবটি কিছুটা বেঁচেছে। কিন্ত পটল, কুমড়ো তো মাটির সঙ্গে লেপ্টে থাকে। দু’দিনের বৃষ্টিতেই সব নষ্ট হয়ে গিয়েছে। বেগুন, লঙ্কা গাছেরও গোড়া পচতে শুরু করেছে।” মহকুমা কৃষি আধিকারিক অশ্বিনী কুম্ভকার বলেন, “কুমড়ো, লাউ, পটল, ঝিঙে, বেগুন, লঙ্কাএ সব ফসলে জমিতে এক দিনের বেশি জল জমে থাকলেই পচন ধরে যায়। আমরা ইতিমধ্যেই ক্ষয়ক্ষতির হিসাব করতে শুরু করেছি।”
প্রশাসন সূত্রে জানা গিয়েছে, দক্ষিণ ২৪ পরগনার উপকূলবর্তী বেশ কয়েকটি এলাকাতেও চাষের জমি ডুবে গিয়েছে। ওই সব এলাকায় ধানের চারা লাগানো হয়ে গিয়েছিল। এখনও পর্যন্ত অন্য জেলা থেকে খবর না এলেও পূর্ব মেদিনীপুরের উপকূলবর্তী কয়েকটি এলাকায় চাষের জমিতে জল দাঁড়িয়ে যাওয়ার আশঙ্কা করছেন কৃষি দফতরের কর্তারা। |