নতুন ট্যাক্সি পথে নামাতে গেলে এত দিন মালিক সরাসরি সরকারের কাছে পারমিটের জন্য আবেদন জানাতেন। এ বার থেকে ট্যাক্সি-মালিকদের সংগঠনগুলির মাধ্যমেও এই আবেদন জানানো যাবে। অর্থাৎ, কোনও ট্যাক্সি-মালিক ইচ্ছে করলে নিজে সরাসরি সরকারের ঘরে পারমিটের জন্য আবেদন জমা না দিয়ে সংগঠনগুলির মাধ্যমে তা করতে পারেন। এই ব্যবস্থা চালু করার জন্য পরিবহণমন্ত্রী মদন মিত্রের কাছে দাবি জানিয়েছিলেন ট্যাক্সি-মালিকরাই। বুধবার মহাকরণে পরিবহণমন্ত্রী জানান, “মালিকরা নিজেরাই পারমিট জোগাড় করতে পারেন। ট্যাক্সি সংগঠনগুলিকেও পারমিটের ‘কোটা’ বেঁধে দেওয়ার কথা ভাবা হচ্ছে।”
পরিবহণ দফতরের এই সিদ্ধান্তে কিন্তু পারমিট দেওয়ার স্বচ্ছতা নিয়ে প্রশাসনের মধ্যেই প্রশ্ন উঠতে শুরু করেছে। কেন এই পদক্ষেপ?
মালিক সংগঠনগুলির পক্ষে বেঙ্গল ট্যাক্সি অ্যাসোসিয়েশনের নেতা বিমল গুহ বলেন, “ট্যাক্সির পারমিট পেতে অনেককেই বিভিন্ন হয়রানির মুখোমুখি হতে হয়। আমাদের মাধ্যমে কেউ আবেদন করলে সেই হয়রানির হাত থেকে বাঁচবেন। তাই মন্ত্রীর কাছে আমরা আবেদন জানিয়েছিলাম। তিনি সেই আবেদন মেনে নিয়েছেন।” মন্ত্রী বলেন, “ট্যাক্সি ইউনিয়নগুলি এই দাবি জানিয়েছিল। আমরা বলেছি, পারমিটের আবেদন ইউনিয়নের মাধ্যমেও আসতে পারে।”
এখানেই প্রশ্ন উঠেছে। প্রশাসনের একাংশের মতে, ট্যাক্সি সংগঠনগুলিকে ‘কোটা’ দিলে তাদের কাছে নিজেদের লোককে পারমিট পাইয়ে দেওয়ার সুযোগ থাকবে। এমনকী, অর্থের বিনিময়ে পারমিট পাইয়ে দেওয়ার সুযোগও এসে যাবে সে ক্ষেত্রে। প্রশ্ন উঠেছে, সরকারের কাছ থেকে পারমিটের অনুমোদন পেতে কেন ইউনিয়নগুলির মাধ্যমে যেতে হবে? অনেকের অভিযোগ, ইউনিয়নের মাধ্যমে শাসক দল নিজেদের লোককে পারমিট পাইয়ে দেওয়ার চেষ্টা করতে পারে। পরিবহণমন্ত্রী এই সব প্রশ্নের সরাসরি উত্তর দেননি। তবে তাঁর যুক্তি, “ট্যাক্সি সংগঠনগুলিকে পারমিট দেওয়ার অধিকার দেওয়া হচ্ছে না। আবেদনকারী সব নিয়ম মানলে তাঁকে পারমিট দেবে সরকারই। ট্যাক্সি সংগঠনগুলির মাধ্যমে শুধু সরকারের কাছে আবেদন করা যাবে।”
সম্প্রতি রাজ্য জুড়ে চার হাজার নতুন ট্যাক্সিকে পারমিট দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে রাজ্য সরকার। এই পারমিট দেওয়ার ক্ষেত্রেও ইউনিয়নগুলি ‘কোটা’ ব্যবহার করতে পারবে বলে পরিবহণ দফতর সূত্রের খবর। তবে নতুন পারমিট পেতে গেলে ট্যাক্সি-মালিকদের বন্ধ বা ধর্মঘটে সামিল না-হওয়ার মুচলেকা দিতে হবে সরকারের কাছে। ট্যাক্সি-মালিকদের সংগঠনগুলি পাল্টা দাবি করেছিল, বন্ধ বা ধর্মঘটের দিন গাড়ি রাস্তায় বের করলে যদি কোনও ক্ষতি হয়, তা হলে সরকারকে তার দায়িত্ব নিতে হবে। এ দিন ট্যাক্সি সংগঠনগুলির সঙ্গে বৈঠকের পরে মন্ত্রী বলেন, “সুপ্রিম কোর্ট এবং হাইকোর্টে নির্দেশে ট্যাক্সি মালিকদের ধর্মঘট না-করার মুচলেকা দিতে হবে। ধর্মঘটের দিন কোনও গাড়ি ক্ষতিগ্রস্ত হলে সরকার ক্ষতিপূরণ দেবে।” মন্ত্রীর এই আশ্বাসের পরেও বিমলবাবু বলেন, “সংবিধান আমাদের ধর্মঘট করার অধিকার দিয়েছে। সে কথা আমরা মুচলেকার সঙ্গে জমা দেব। পাশাপাশি, সরকার যে ক্ষতিপূরণ দেবে, তা-ও আমাদের লিখিত জানাতে হবে।”
নতুন ট্যাক্সির রং নীল-সাদা হবে বলে আগেই ঘোষণা করেছিল সরকার। ট্যাক্সি সংগঠনগুলির দাবি মেনে মন্ত্রী এ দিন জানান, পুরনো ট্যাক্সির রং হলুদ রাখা যাবে। যাঁরা নতুন পারমিট পাবেন, তাঁরাও চাইলে গাড়ির রং হলুদ রাখতে পারবেন। |