বিতর্ক উস্কে রাজ্যকে ফের তোপ কমিশনের
রাজ্য সরকারের সঙ্গে আবার বিতর্কে জড়িয়ে পড়ল রাজ্য মানবাধিকার কমিশন। বৃহস্পতিবার সরকারের বিরুদ্ধে কমিশনের চেয়ারম্যানের কিছু মন্তব্যের পরে দু’পক্ষের মধ্যে নতুন করে চাপান-উতোর শুরু হয়েছে।
পরিবর্তন হয়েছে, তবে তা সরকার আর শাসক দলের। আর যে-পরিবর্তন হয়েছে, তা বিশৃঙ্খলার। পুলিশ এখন অপরাধ দমনের বদলে অপরাধীদেরই সাহায্য করছে। এই প্রবণতা আগের জমানাতেও ছিল। এখন তা আরও দৃষ্টিকটু হয়েছে। এ দিন টালিগঞ্জে নারী-নির্যাতন সংক্রান্ত এক আলোচনাসভায় এই ভাষাতেই বর্তমান পরিস্থিতি নিয়ে মন্তব্য করেন বিতর্ক উস্কে দেন রাজ্য মানবাধিকার কমিশনের চেয়ারম্যান, বিচারপতি অশোককুমার গঙ্গোপাধ্যায়।
বিচারপতি
অশোক গঙ্গোপাধ্যায়
এটাই প্রথম নয়। কয়েক দিন আগেও এক আলোচনাসভায় কমিশন-প্রধান বলেছিলেন, “যে-পরিবর্তন হয়েছে, তা আসলে জার্সির পবিবর্তন। বাকি সব একই রকম রয়েছে।” তাঁর এ দিনের বক্তব্য জানার পরে প্রশাসনিক স্তরে শোরগোল পড়ে গিয়েছে। রাজ্যের শিল্পমন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায় বলেছেন, “দুর্ভাগ্যের সঙ্গে লক্ষ করছি, বিভিন্ন সাংবিধানিক এবং অন্য গুরুত্বপূর্ণ পদে থাকা ব্যক্তিরা এমন সব মন্তব্য করছেন, যা তাঁদের মানায় না। সংবিধানের নামে শপথ নিয়ে রাজনৈতিক মন্তব্য করে তাঁরা নিজেদের জামাতেই কালি লাগাচ্ছেন! রাজ্যের মানুষ সবই লক্ষ করছেন।” মন্ত্রীর মতে, অশোকবাবুর এই মন্তব্য ‘বাঞ্ছনীয় ও অভিপ্রেত নয়’।
টালিগঞ্জের ওই আলোচনাসভায় বিচারপতি গঙ্গোপাধ্যায় এ দিন বলেন, “পশ্চিমবঙ্গে সরকার পরিবর্তন হলেও মানুষের জীবনের কোনও উন্নতি হয়নি। নারী-নির্যাতনের প্রতিবাদ করতে গেলে বাধা আসছে। তবে কলেজছাত্রীকে গণধর্ষণ করে খুনের ঘটনার পরে কামদুনি দেখিয়ে দিয়েছে, বাধা এলেও কী করে সম্মিলিত ভাবে প্রতিবাদ জানাতে হয়। কামদুনির মানুষ দৃঢ়তার সঙ্গে যে-ভাবে নির্যাতনের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়িয়েছেন, তাতে
আমি চাইব, দিকে দিকে কামদুনি গড়ে উঠুক।”
বিচারপতি গঙ্গোপাধ্যায়ের পর্যবেক্ষণ, ইদানীং দেশের অন্যান্য প্রান্তের মতো এ রাজ্যেও নারী-নির্যাতন বাড়ছে। এর জন্য পুলিশি নিষ্ক্রিয়তাই দায়ী বলে মন্তব্য করেন তিনি। তাঁর হিসেবে ২০১২ সালে রাজ্যে নারী-ধর্ষণের ঘটনা ঘটেছে প্রায় দু’হাজার। দেশে ফৌজদারি আইন কঠোর করা হলেও সাক্ষীর অভাবে ধর্ষণে অভিযুক্তেরা বেকসুর খালাস পেয়ে যাচ্ছে। কমিশন-প্রধান বলেন, “সরকারের উচিত সাক্ষীদের সুরক্ষা দেওয়া। কিন্তু বাস্তবে তা হয় না। সেই জন্যই সাধারণ মানুষের একজোট হয়ে প্রতিবাদ করা দরকার।”
প্রশাসনিক কর্তাদের মতে, সরকার এবং মানবাধিকার কমিশনের মধ্যে ধারাবাহিক চাপান-উতোরের মূলে আছে দু’পক্ষের পারস্পরিক আস্থার ঘাটতি। অনেকে বলছেন, মুখ্যমন্ত্রীকে জড়িয়ে ব্যঙ্গচিত্র কাণ্ডে অম্বিকেশ মহাপাত্রকে ক্ষতিপূরণ দেওয়া থেকে শুরু করে কামদুনিতে ধর্ষণ-খুন পর্যন্ত বিভিন্ন ঘটনা নিয়ে কমিশন গত কয়েক মাসে সরকারের কাছে বেশ কয়েকটি সুপারিশ করেছে। কিন্তু সরকার কার্যত তা উপেক্ষা করেছে। কমিশনের সুপারিশগুলি অভিসন্ধিমূলক বলেও মত প্রকাশ করেছেন সরকারি কর্তারা। কমিশনের চেয়ারম্যান সম্পর্কে খোদ মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় মন্তব্য করেছেন, “আমিই এক জনকে আনলাম। এখন তিনিই দেখি সুপ্রিম কোর্টের প্রধান বিচারপতির মতো আচরণ করছেন!” বিচারপতি গঙ্গোপাধ্যায়ের পাকিস্তান সফর নিয়েও প্রশ্ন তুলেছে সরকার। বেসরকারি আমন্ত্রণে পাকিস্তান গিয়ে তিনি দেশের আইন ভেঙেছেন, এই যুক্তিতে তাঁর বিরুদ্ধে আইনি প্রক্রিয়াও শুরু করেছে স্বরাষ্ট্র দফতর।
কাকতালীয় ভাবে তাঁর পাকিস্তান সফর নিয়ে সরকার জবাবদিহি চাওয়ার পরে পরেই বেলপাহাড়ির শিলাদিত্য চৌধুরীকে দু’লক্ষ টাকা ক্ষতিপূরণ দিতে বলে রাজ্যের কাছে সুপারিশ পাঠিয়েছেন কমিশনের চেয়ারম্যান। তাতে সরকার পক্ষ আরও ক্ষিপ্ত হয়ে উঠেছে বলে মনে করা হচ্ছে। অনেকের ধারণা, সরকার-কমিশন বিবাদের পিছনে এই সব ঘটনার পরোক্ষ প্রভাব আছে।
মানবাধিকার কমিশনের এক মুখপাত্র অবশ্য জানান, দেশের যেখানেই সাংবিধানিক এবং আধা-বিচার বিভাগীয় সংস্থার পক্ষ থেকে কঠোর অবস্থান নেওয়া হয়েছে, সেখানেই সরকার তা ভাল ভাবে নেয়নি। লোকায়ুক্ত সন্তোষ হেগড়ের ব্যাপারে কর্নাটক সরকার এবং রাজ্য নির্বাচন কমিশনার মীরা পাণ্ডের অবস্থান নিয়ে পশ্চিমবঙ্গ সরকার একই মনোভাব দেখিয়েছিল।

পুরনো খবর:



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.