|
|
|
|
‘সহযোগিতা পাচ্ছি না’ |
রাজ্যের বিরুদ্ধে ক্ষোভ মানবাধিকার কমিশন প্রধানের |
নিজস্ব সংবাদদাতা • কলকাতা |
হাইকোর্ট প্রশ্ন তোলার ২৪ ঘণ্টার মধ্যে খোদ মানবাধিকার কমিশনের চেয়ারম্যানই মেনে নিলেন, রাজ্য সরকারের কাছ থেকে যথাযথ সহযোগিতা পাওয়া যাচ্ছে না। বেশির ভাগ সুপারিশ মানা তো দুরস্থান, কেন সুপারিশ মানা হল না, তা-ও জানানোর প্রয়োজন বোধ করছে না সরকার। তাঁর মতোই কমিশন সদস্যদের একাংশেরও মত, কমিশন সক্রিয় হলে রাজ্য সরকারের অস্বস্তি বাড়ছে। তাই কমিশনের দেওয়া একের পর সুপারিশ তারা কার্যকর করছে না। এবং কমিশনকে কার্যত ঠুঁটো জগন্নাথ করে রাখা হচ্ছে।
অশোক গঙ্গোপাধ্যায় |
যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক অম্বিকেশ মহাপাত্রের ব্যাপারে মানবাধিকার কমিশনের সুপারিশ কার্যকর না হওয়ায় বৃহস্পতিবারই রাজ্য সরকারকে বিঁধেছিল কলকাতা হাইকোর্ট। এ ব্যাপারে রাজ্য সরকারের মনোভাব নিয়েই প্রশ্ন তুলেছে তারা। শুক্রবার রাজ্য মানবাধিকার কমিশনের চেয়ারম্যান বিচারপতি অশোক গঙ্গোপাধ্যায় স্বীকার করলেন, “রাজ্য সরকারের কাছ থেকে কমিশনের যতটা সহযোগিতা পাওয়া উচিত, ততটা আমরা পাচ্ছি না।” তাঁর আক্ষেপ, “কী করব, রাজ্য সরকার তো সুপারিশ মানছে না। কেন মানছে না, তা কয়েকটি ক্ষেত্র ছাড়া সরকার জানানোর প্রয়োজনও বোধ করেনি।”
মানবাধিকার কমিশনের সুপারিশ মানতে রাজ্য সরকারের অনীহা নতুন কিছু নয়। কমিশনের সদস্যদের একাংশই জানিয়েছেন, এর আগের জমানাও আলাদা কিছু ছিল না। এই জমানায় রাজ্য সরকারের অনীহা কোন পর্যায়ে পৌঁছেছে, তা বোঝানোর জন্য একটি পরিসংখ্যানই যথেষ্ট। কমিশন সূত্রের খবর, গত ১০ মাসে (বিচারপতি অশোককুমার গঙ্গোপাধ্যায় দায়িত্ব নেওয়ার পরে) ২৯টি অভিযোগে রাজ্যকে ব্যবস্থা নেওয়ার সুপারিশ করেছিল তারা।
তার মধ্যে মাত্র দু’টি ঘটনায় কমিশনের সুপারিশ কার্যকর করেছে রাজ্য। সরাসরি বাতিল করে দিয়েছে তিনটি সুপারিশ। আর বাকি ২৪টি ক্ষেত্রে শুধু সুপারিশ না-মানাই নয়, কমিশনকে সে সম্পর্কে কিছু জানানোরও প্রয়োজন মনে করেনি সরকার। এ সব তাদের অবজ্ঞা
করারই সামিল বলে কমিশন সূত্রে মন্তব্য করা হয়েছে।
রাজ্য সরকার সুপারিশ না মানলে তাঁদের যে কিছু করার নেই, সেটা এ দিন পরিষ্কার করে দিয়েছেন বিচারপতি গঙ্গোপাধ্যায়। তাঁর বক্তব্য, “এ সব ক্ষেত্রে সুপারিশগুলি যাঁদের পক্ষে ছিল, তিনি হাইকোর্টে যেতে পারেন।” মানবাধিকার কমিশন কি সরাসরি হাইকোর্টে যেতে পারে না? বিচারপতি গঙ্গোপাধ্যায় বলেন, “এ ক্ষেত্রে কমিশন হাইকোর্টে যেতে পারবে কি পারবে না, তা আইনে নির্দিষ্ট করে বলা নেই। তবে দস্তুর হল, কমিশন হাইকোর্টে যায় না।”
বিভিন্ন ঘটনায় মানবাধিকার কমিশনের শতাধিক সুপারিশ কেন কার্যকর করা হয়নি, তা জানতে চাওয়া হলে রাজ্যের স্বরাষ্ট্রসচিব বাসুদেব বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, “এটা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। কয়েকটি ক্ষেত্রে আমি সংশ্লিষ্ট দফতরগুলির কাছে জানতে চেয়েছি, কমিশনের সুপারিশগুলি কার্যকর করা নিয়ে তারা কী করছে। তবে, মোট কতগুলি ক্ষেত্রে সুপারিশের কার্যকর করা হয়নি বা কতগুলি সুপারিশের ক্ষেত্রে কমিশনকে কিছু জানানো হয়নি, সেটা আমি খোঁজ নিয়ে দেখব।”
বৃহস্পতিবার কলকাতা হাইকোর্ট প্রশ্ন তুলেছিল, সুপারিশ যদি না-ই মানা হয়, তা হলে কমিশন রাখার কী দরকার? উচ্চ আদালতের এই মন্তব্য নিয়ে কিছু বলতে চাননি কমিশনের চেয়ারম্যান। জানিয়েছেন, “আমি এখন কলকাতার বাইরে। প্রধান বিচারপতি অরুণ মিশ্র ও বিচারপতি জয়মাল্য বাগচি ঠিক কী মন্তব্য করেছেন, সেটা আমাকে ফিরে এসে জানতে হবে। শুধু সংবাদপত্রের প্রতিবেদনের উপর ভিত্তি করে এই নিয়ে আমি মন্তব্য করব না।”
তা হলে এই ভাবেই নখদন্তহীন হয়ে পড়ে থাকবে মানবাধিকার কমিশন? কমিশনের একটি সূত্র জানাচ্ছে, সম্প্রতি জাতীয় মানবাধিকার কমিশনের কাছে আর্জি জানিয়ে রাজ্য কমিশন বলেছে, শুধু সুপারিশই নয়। প্রয়োজনে নির্দেশ দেওয়ার ক্ষমতাও দেওয়া হোক তাদের। সে জন্য কেন্দ্রীয় সরকারের সঙ্গে আলোচনা করে প্রয়োজনীয় সংবিধান সংশোধনও করা হোক। এখন সে দিকেই তাকিয়ে রয়েছেন কমিশনের সদস্যরা। |
|
|
|
|
|